সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় আছেন প্রার্থীরা। এপ্রিলে এ পরীক্ষার আয়োজনের ঘোষণা দেয়া হলেও মার্চ মাসের শেষেও এ বিষয়ে খোলাখুলি কোনো তথ্য দিচ্ছেন না কর্মকর্তারা। পরীক্ষা কবে শুরু হচ্ছে তা নিয়ে এখনো আছে ধোঁয়াশা। আর শিক্ষক নিয়োগের এ পরীক্ষা শুধু ঢাকায় হবে না জেলা শহরগুলোতে হবে তা নিয়েও প্রার্থীদের মনে আছে নানা প্রশ্ন। তবে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শিগগিরই এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। দু-এক দিনের মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত আসবে বলেও দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
২০২০ খ্রিষ্টাব্দে অক্টোবর মাসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩২ হাজার ৫৭৭ জন সহকারী শিক্ষকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। প্রাক প্রাথমিকে ২৫ হাজার ৬৩০ জন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্যপদে ৬ হাজার ৯৪৭ জনকে এ বিজ্ঞপ্তির আলোকে নিয়োগ দেয়া হবে। সে বছরের ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত এ নিয়োগের আবেদন গ্রহণ করা হয়। এসব শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে ১৩ লাখ ৫ হাজার প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। এ প্রার্থীরা নিয়োগ পরীক্ষার অপেক্ষায় আছেন। এদিকে কিছুদিন আগে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ৪৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রার্থীরা বলছেন, দেড় বছর আগে আবেদন করেছি। গত বছরের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। পরে কর্মকর্তারা বলেছিলেন স্কুল খুললে পরীক্ষা হবে। কিন্তু স্কুল খুলে গেলেও পরীক্ষা সুস্পষ্ট দিন তারিখ ঘোষণা হয়নি। আবারও স্কুল বন্ধ হলো, তারপর ফের খুললো। মন্ত্রণালয় বলছে পরীক্ষা এপ্রিলে হবে। কিন্তু এপ্রিলে পরীক্ষা হলেও মার্চের শেষে এসেও কোনা সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। আমরা দ্রুত পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ পেতে চাচ্ছি। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট আছে। আমরা নিয়োগ পেলে সে সংকট কাটবে।
তানিয়া আক্তার নামের একজন প্রার্থী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, দেড় বছর আগে যখন আবেদন করেছি তারপর শুরু হলো করোনা। স্কুল বন্ধ থাকায় পরীক্ষা নেয়া হয়নি। স্কুল খুললো সেপ্টেম্বরে তখন বলা হলো ডিসেম্বরে পরীক্ষা হবে। এরপর বলা হলে জানুয়ারিতে পরীক্ষা হবে। এরপর ফের স্কুল বন্ধ হলো। এরপর কিছু দিন থেকে বলা হচ্ছে পরীক্ষা এপ্রিলে হবে। পরীক্ষার প্রস্তুতি কি নেবো। এ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সব কাজই অনিশ্চিত। আগে কোনো নিয়োগ পরীক্ষা এতবার তারিখ সময় ঘোষণা হয়েছে কিনা না নিয়ে সন্দেহ আছে। প্রস্তুনি নেয়ার ইচ্ছাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে এ নিয়োগ পরীক্ষা জেলা জেলায় হবে না কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীতে হবে না নিয়েও আছে ধোঁয়াশা। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তে রীতিমতো ক্ষুব্ধ প্রার্থীরা। ক্ষণে ক্ষণে এ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে। এত পরিবর্তনের ফলে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে কর্মরতদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অপরদিকে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন ১৩ লাখ প্রার্থী।
এ পরীক্ষা নিয়ে গত রোববার অধিদপ্তর সারাদেশের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে ভার্চ্যূয়াল সভায় আলোচনা হয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। কেউ কেউ বলছেন কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নেয়া হবে না। কেউ কেউ বলছেন জেলা জেলায় পরীক্ষা হবে। কিন্তু এ নিয়ে কোনো কর্মকর্তা স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না। বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে জানা গেছে।
প্রার্থীদের কেউ কেউ যোগাযোগ ও পরীক্ষায় সহজে অংশ নেয়ার সুবিধার কথা চিন্তা করে জেলা সদরে পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ মনে করছেন জেলা পর্যায়ে পরীক্ষা হলে নকল ও প্রশ্নফাঁস হতে পারে। তারা কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বুধবার সন্ধ্যায় দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে দু-একদিনেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। শিগগিরই বিষয়টি প্রার্থীদের কাছে পরিষ্কার হবে। তাদের অনিশ্চয়তা শিগগিরই কাটবে।
গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর জুলাই মাসে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া হবে। প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষকের ৩২ হাজার ৫৭৭টি শূন্যপদে নিয়োগের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গত বছরের ২০ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে অবসরজনিত কারণে আরও দশ হাজারেরও বেশি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হয়েছে। এতে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যা পাঠদান কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। এ সমস্যা নিরসনে মন্ত্রণালয় আগের বিজ্ঞপ্তির শূন্যপদ এবং বিজ্ঞপ্তির পরের শূন্যপদ মিলিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।