শিক্ষক-শিক্ষার্থী নেই : রাতারাতি ট্রেড খুলে প্রকল্পের টাকা হরিলুট - মাদরাসা - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক-শিক্ষার্থী নেই : রাতারাতি ট্রেড খুলে প্রকল্পের টাকা হরিলুট

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

শিক্ষক নেই, শিক্ষার্থীও নেই। অথচ রাতারাতি ট্রেড খুলে ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’ (এসইএসআইপি) এর আওতায় কোটি কোটি টাকার শিক্ষা উপকরণ ও মূল্যবান যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। অথচ তালাবদ্ধ ঘরে কোটি টাকার উপরে মূল্যবান যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এমন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম রসুলপুর আলীম মাদরাসা। ঝিনাইদহ পৌরসভার ভুটিয়ারগাতী গ্রামে মাদরাসাটি অবস্থিত। এই মাদরাসায় খাতা কলমে জেনারেল ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়ার্ক ট্রেডে ১৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও নেই কোনো শিক্ষক।

ফুড প্রসেসিং নামে ওই মাদরাসায় আরও একটি ট্রেড রয়েছে। মাদরাসার অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক দাবি করেন তারা ট্রেডের জন্য কোনো আবেদনই করেননি, অথচ প্রকল্প কর্মকর্তারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ট্রেড খুলে সারা জেলায় প্রায় ১২ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছেন।  অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠান প্রধানদের না জানিয়ে গভীর রাতে ঢাকা থেকে এসব মালামাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩১শে ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম ( এসইএসআইপি) প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়।

প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ৩১শে ডিসেম্বর মেয়াদ বৃদ্ধি করার জন্য প্রস্তাব করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। এই প্রকল্পের আওতায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পৌর এলাকার ভুটিয়ারগাতি রসুলপুর মাদরাসা, শৈলকুপার কাতলাগাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভবানীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কালীগঞ্জের চাচড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কোটচাঁদপুর শেখ মোজাফফর হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মহেশপুরের খালিশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সরজমিন দেখা গেছে কোনো বিদ্যালয়েই এই প্রকল্পের কার্যক্রম সঠিকভাবে চলছে না। যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য নেই দক্ষ ল্যাব এসিসট্যান্ট ও শিক্ষক। অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠান থেকে আবেদন না করলেও প্রকল্পের কর্তাব্যক্তিরা নিজ উদ্যোগে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে একেকটি ট্রেডের বিপরীতে প্রায় দেড় কোটি সমমূল্যের ব্যবহারিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে।

অথচ আজও সংশ্লিষ্ট ট্রেডে শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারেনি সবগুলো প্রতিষ্ঠান। ওই সব স্কুলে ট্রেডের শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষকরা পাঠদান করছেন বলে অভিযোগ। ঝিনাইদহ পৌর এলকার ভুটিয়ারগাতী রসুলপুর আলিম মাদরাসায় জেনারেল ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়ার্ক ট্রেডে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিস অমি নামের একজনকে ইন্সট্রাক্টর নিয়োগ দেয়া হয়। তার বাড়ি নাটোরের লালপুরে। অধিদপ্তরের জটিলতার কারণে এখনো এমপিও হয়নি মিস অমির। তাই তিনি নাটোরে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। ভুটিয়ারগাতী রসুলপুর আলিম মাদরাসার ফুড প্রসেসিং ট্রেডে এখনো কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। ২০২২ সালে সরবরাহকৃত কোটি টাকার ব্যবহারিক যন্ত্রপাতি মাদরাসার একটি কক্ষে তালাবদ্ধভাবে রাখা রয়েছে। পড়ে থেকেই নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতিগুলো।

মাদরাসার অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমরা ট্রেডের জন্য কোনো আবেদন করিনি। প্রকল্পের আওতায় ব্যবহারিক যে যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে তা যত্নসহকারে রাখা হয়েছে। এদিকে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভবানীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এখনো কোনো ট্রেডেই ইন্সট্রাক্টর নিয়োগ দিতে পারেনি। শৈলকুপার কাতলাগাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কালীগঞ্জের চাচড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কোটচাঁদপুরের শেখ মোজাফ্‌ফর হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একটি করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর ও মহেশপুরের খালিশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রত্যেক ট্রেডেই শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

খালিশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ব্যবহারিক যন্ত্রপাতির মধ্যে আমার প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার চেয়ার ও স্ক্যানার মেশিন দেয়া হয়নি। এই বিষয়ে আমি অধিদপ্তরের পরিচালককে জানিয়েছি। বার বার তাগাদা দেয়ার কারণে তিনি এখন আর আমার ফোন রিসিভ করেন না। শেখ মোজাফ্‌ফর হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল আজিজ বলেন, সকল যন্ত্রপাতি ইনটেক অবস্থায় দেয়া হয়। আমরা সেইভাবেই গ্রহণ করেছি।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছিল। প্রকল্পের অর্থ খরচ দেখাতে তড়িঘড়ি করে ট্রেড খুলে যন্ত্রপাতি দেয়া হয়। ইলেক্ট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা না থাকার পরও ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’ থেকে যা দিয়েছে তাই নিয়েই অনেক প্রধান শিক্ষক সন্তুষ্ট বলে জানা গেছে।

এসব বিষয় নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মনিরুল ইসলাম জানান, প্রকল্পের আওতায় সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতি বর্তমানে কী অবস্থায় আছে তা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।

নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ পাবেন সাড়ে ২৫ হাজার প্রতিষ্ঠান প্রধান - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ পাবেন সাড়ে ২৫ হাজার প্রতিষ্ঠান প্রধান জনগণের কল্যাণ সাধনই আমাদের লক্ষ্য : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha জনগণের কল্যাণ সাধনই আমাদের লক্ষ্য : প্রধানমন্ত্রী পত্রিকার অনলাইনে রগরগে আর প্রিন্টে সফিস্টিকেটেড জিনিস ছাপে : জাফর ইকবাল - dainik shiksha পত্রিকার অনলাইনে রগরগে আর প্রিন্টে সফিস্টিকেটেড জিনিস ছাপে : জাফর ইকবাল উপজেলা চেয়ারম্যানদের ওপর ইউএনওদের ক্ষমতা বাতিল করলো হাইকোর্ট - dainik shiksha উপজেলা চেয়ারম্যানদের ওপর ইউএনওদের ক্ষমতা বাতিল করলো হাইকোর্ট বরিশাল শিক্ষা বোর্ডর নতুন চেয়ারম্যান আব্বাস উদ্দিন খান - dainik shiksha বরিশাল শিক্ষা বোর্ডর নতুন চেয়ারম্যান আব্বাস উদ্দিন খান ডিবির হাতে গ্রেফতার নাসিরই করেন শিক্ষক এমপিওভুক্ত! - dainik shiksha ডিবির হাতে গ্রেফতার নাসিরই করেন শিক্ষক এমপিওভুক্ত! ফলাফল ঘোষণা না করে পালাল শিক্ষক নিয়োগ কমিটি! - dainik shiksha ফলাফল ঘোষণা না করে পালাল শিক্ষক নিয়োগ কমিটি! জমির খাজনা আদায় হবে ইংরেজি অর্থবছরে - dainik shiksha জমির খাজনা আদায় হবে ইংরেজি অর্থবছরে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004626989364624