শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কে ছন্দঃপতন - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কে ছন্দঃপতন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ঘটনা ১ :  সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ ছাত্রের মাথার চুল কেটে দিয়েছেন একজন শিক্ষক। এতে অপমান, হতাশায় প্রথম বর্ষের এক ছাত্র আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। ওই শিক্ষকের অপসারণ দাবি করেন তাঁরা। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল রোববার থেকে কাজ শুরু করেছে। কিন্তু এর পরও উত্তপ্ত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। সোমবার (৪ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।

ঘটনা ২ :  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী মাসুদ আল মাহাদী অপু। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকার একটি মেস থেকে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই বিভাগের ছাত্র থাকাকালে তাঁকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ভালো ফল করলেও সে বিভাগের শিক্ষক হতে পারবেন কি না, তা নিয়েও অনেক হতাশ ছিলেন অপু।

বিষয়টি নিয়ে তাঁর বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক তাঁর ফেসবুকে লেখেন, ‘অপু অনার্সে থার্ড হয়েছিল। অনার্সের রেজাল্টের পর একদিন অপুকে বললাম, মাস্টার্সের এক বছর বাড়তি একটু মনোযোগ দিলেই তুমি প্রথম হতে পারবা। সে বলল, আমি তো প্রথমই হতাম অনার্সে। হিসেব করে দেখেছি, একজন মাত্র শিক্ষক সেই প্রথম বর্ষ থেকে যে পরিমাণ কম নম্বর দিয়ে আসছেন, ওনার কোর্সে এভারেজ নম্বর পেলেই প্রথম হতাম।’

অধ্যাপক ফাহমিদুল বলেন, ‘সে সিস্টেমের বঞ্চনার শিকার। আমাদের সিস্টেম অপুদের হতাশ হতে বাধ্য করে। সেই সিস্টেম সেই শিক্ষককে আরো বেশি ক্ষমতাবান করেছে পরে। অপু পৃথিবীকে তার নিজের যোগ্য মনে করেনি। তাই সে অন্য কোথাও চলে গেল।’

ঘটনা ৩ : বাগেরহাটের মোংলায় সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্ধারিত জুতা না পরায় বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষ থেকে শতাধিক শিক্ষার্থীকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়। গত ২৮ সেপ্টেম্বর স্কুলের ক্লাসরুমে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের ড্রেস ও জুতা চেক করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ সময় সবার নির্ধারিত স্কুলড্রেস থাকলেও অনেকের জুতা ছিল বিভিন্ন রঙের। কেউ কেউ স্যান্ডেল পরেও আসে। তাদের বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন প্রধান শিক্ষক ব্রাদার জয়ন্ত এন্ড্রু কস্তা।

ঘটনা ৪ : গত ২৭ সেপ্টেম্বর দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ফুড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রসায়ন পরীক্ষা ছিল। দুপুর ১২টা থেকে শুরু হওয়া ওই অনলাইন পরীক্ষায় লুঙ্গি পরে অংশগ্রহণের দায়ে তিন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করার অভিযোগ উঠেছে।

করোনার প্রাদুর্ভাবে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর খুলেছে স্কুল-কলেজ। বিশ্ববিদ্যালয় না খুললেও অনলাইনের পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষেও নেওয়া হচ্ছে পরীক্ষা। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সাম্প্রতিক সময়ের এই ঘটনাগুলো সারা দেশেই আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনায় দীর্ঘ বন্ধ শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে বেশির ভাগ শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করছেন। কিন্তু দু-চারজন শিক্ষক আগেও রূঢ় আচরণ করেছেন, এখনো করছেন। আর তাঁদের জন্যই সমগ্র শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম  বলেন, ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ঘটনা যদি সত্যি হয়, তাহলে বলতে হবে ওই শিক্ষক কি স্বাভাবিক? আর যাদের চুল কাটল, তারা কি শিশু যে একের পর একজনের চুল কেটে দেবে। আসলে এ বিষয়ে গভীর অনুসন্ধানের দরকার আছে। তবে যদি কোনো শিক্ষকের কারণে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে, তা খুবই দুঃখজনক, যা কোনো অবস্থায়ই কাম্য নয়।’

এই অধ্যাপক আরো বলেন, ‘এখন আমাদের সময়টা অস্বাভাবিক। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। এ জন্য শিক্ষকদের সহানুভূতিশীল হতে হবে। শিক্ষা প্রশাসনকে আরো বেশি সাবধান হতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক শ্রদ্ধার। আর শেখা ও শেখানো দুটি কাজই আনন্দের। তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকের রূঢ় আচরণ করা উচিত নয়। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে প্রশাসন যদি ত্বরিতগতিতে ব্যবস্থা নেয়, তাহলেও তা রোধ করা সম্ভব। আর শিক্ষার্থীদেরও এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়, যাতে নিজের ও পরিবারের ক্ষতি হয়।’

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক আরো বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলো শুধু শিক্ষকদেরই প্রশ্নের মুখে ফেলেনি, তাঁদের পেশাগত দায়িত্বও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। দু-একজন শিক্ষকের জন্য সমগ্র শিক্ষকসমাজকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানো হয়েছে। আমি বলব, সবাইকেই আরো সহনশীল আচরণ করতে হবে, ধৈর্য ধারণ করতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, ‘আমাদের সবাইকেই সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে আচরণ করতে হবে। কোনো ক্ষেত্রেই তা বেশি বেশি করা উচিত নয়। শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেন, তাহলে তা বাড়াবাড়ি। আর কোনো শিক্ষার্থী যদি আত্মহত্যা করে, তাহলে এর কারণ কী, তা বের করতে হবে। এটাও মনে রাখতে হবে, মা-বাবা, শিক্ষক বা বন্ধু যাঁরা আছেন, তাঁরা কি ওই শিক্ষার্থীর প্রতি তাঁদের দায়িত্ব পালন করেছেন।’

দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা - dainik shiksha চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? - dainik shiksha স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.021664142608643