শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য না দেওয়ার পেছনে নিয়োগ বাণিজ্য - দৈনিকশিক্ষা

প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কৈফিয়ত তলবেও গড়িমসিশিক্ষক শূন্যপদের তথ্য না দেওয়ার পেছনে নিয়োগ বাণিজ্য

সাবিহা সুমি, আমাদের বার্তা |

বরাবরের মতো কতিপয় এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা কমিটি আবারও এই মর্মে ধুয়া তুলছে যে, এনটিআরসিএর হাত থেকে নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষমতা আগের মতোই বেসরকারি কমিটির হাতে যাচ্ছে। আবারও দেখানো হচ্ছে রিটের জুজু। আবারো চাউর করা হচ্ছে- রিট করা হয়েছে, রায় আনা হবে এবং পরিচালনা কমিটির হাতেই সব শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা চলে যাবে। ফের জমজমাট হবে নিয়োগ বাণিজ্য। আর তাই এবারও এনটিআরসিএর চাহিদা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান প্রধানরা শিক্ষক শূন্য পদের চাহিদা বা তথ্য দিচ্ছেন না। তথ্য সংগ্রহের প্রথম ধাপ প্রতিষ্ঠানের ই-রেজিস্ট্রেশন। যেখানে এনটিআরসিএকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গরহাজির থেকেছে প্রায় ১৩ হাজার প্রতিষ্ঠান। দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র জাতীয় প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে এমনই তথ্য উঠে এসেছে।

  সারাদেশ থেকে দৈনিক আমাদের বার্তাকে পাঠকরাও জানিয়েছেন, এনটিআরসিএর চাহিদা অনুযায়ী ই- রেজিস্ট্রেশন করেনি অনেক প্রতিষ্ঠান। ই-রেজিস্ট্রেশন না করলে ই রিক্যুইজিশন দিতে পারবে না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রংপুর সদরের রাধাকৃষ্ণপুর ডিগ্রি কলেজের গ্রন্থাগার প্রভাষক পদটি ছয়মাস ধরে খালি। কিন্তু প্রতিষ্ঠান প্রধান দেলোয়ার হোসেন এনটিআরসিএর চাহিদা  অনুযায়ী ই-রিক্যুইজিশন বা শূন্যপদের তথ্য দেননি। অথচ গত ৩১ অক্টোবর শুরু হওয়া ই-রিক্যুইজিশনের প্রথমধাপের শেষ দিন গতকাল ১০ নভেম্বর শেষ হয়। কলেজের অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন বলেন, শুনেছি গ্রন্থাগার শিক্ষক পদটি আবারো কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ হবে।

হাবিবুর রহমান (ছদ্মনাম) নামের একজন গ্রন্থাগার শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, রংপুরের মিঠাপুকুর, গঙ্গাচড়া ও পীরগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে ই-রিকুইজিশন দেননি।

রংপুরের গংগাচড়ার বেতগাড়ী একরামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আফজানুল হকের কাছে গতকাল রোববার বিকেল পাচঁটায় জানতে চাওয়া হয় শূন্যপদের চাহিদা না দেওয়ার কারণ। তিনি বলেন, কেন দেওয়া হয়নি তা পরিচালনা কমিটির কাছ থেকে জেনে জানাতে হবে।

একই অভিযোগ টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর আসিয়া হাসান আলী মহিলা কলেজ ও জামালপুরের পিংনা সুজাত আলী কলেজ এবং ময়মনসিংহের শাহাবুদ্দিন কলেজের বিরুদ্ধে। এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে সারাদেশে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি পর্যায়ে নিম্ন-মাধ্যমিক থেকে মাস্টার্স পাঠদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার। কিন্তু এবার ই-রেজিস্ট্রেশন করেছে ২৪ হাজার ৬৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ই-রেজিস্ট্রেশনের সময় শেষ হওয়ার পরও অন্তত ১৩ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ই-রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার বাইরে থেকেছে। এসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষক স্বল্পতায় ভুগবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে ই-রেজিস্ট্রেশন না করা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে এখনও তিনটি অধিদপ্তর অর্থাৎ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর কোনও কারণ দর্শানো বা কৈফিয়ত তলব করেনি।

জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত অধিদপ্তর থেকে কোন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে শোকজ করা হয়নি। এনটিআরসিএর সুপারিশ অনুযায়ী, অতীতে ভুল চাহিদা বা চাহিদা না দিলে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা শুনেছি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে  জানান, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ই রেজিস্ট্রেশন করতে চায় না, এর  পেছনে নিয়োগ বাণিজ্য রয়েছে। গত ১৬ বছরে তারা যেসব অপকর্ম করেছেন সেগুলো আর চলতে দেয়া হবে না।

জানতে চাইলে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী  আ ন ম এহছানুল হক মিলন বলেন, দেশের সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ্য ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান উন্নয়নের জন্য আমরা এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আজকে যিনি নন এমপিও কালকে তিনি এমপিওভুক্ত হবেন। গত কয়েকবছর ধরে দৈনিক আমাদের বার্তার প্রতিবেদন পড়ে জানতে পারলাম শিক্ষা সংশ্ষ্টি কারো কারো অদক্ষতা ও বাণিজ্যিক মনোভাবের কারণে গোটা নিয়োগপ্রক্রিয়া বিশাল জটিলতার মধ্যে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এনটিআরসিএতে যারা কর্মকর্তা পদে বদলি হয়ে আসেন তাদেরকে বুঝতে হবে আজকে যারা ননএমপিও সরকারের সিদ্ধান্তে কালকে তারা এমপিওভুক্ত। এমপিও-ননএমপিও-সরকারি হাইস্কুলের সব শিক্ষক একই কারিকুলামের অধীনে একই পাঠ্যবই পড়ান। সুতরাং তাদের সবার শিক্ষাদানের যোগ্যতা একই মানে উন্নীত করার জন্য সরকারের তরফে সবসময় চেষ্টা করে যেতে হবে। 

এহছানুল হক মিলন বলেন, এনটিআরসিএ আইন বলা হয়েছে বেসরকারি—এমপিও  এবং ননএমপিওর কোনো বৈষম্য করা হয়নি আইনে।  

প্রসঙ্গত, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগের প্রার্থী বাছাই ও সুপারিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এনটিআরসিএ। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের যাত্রা শুরুর সময় শুধু প্রাক-যোগ্যতা নির্ধারণী সনদ দেয়া হতো, সেটা দেখিয়ে শিক্ষক পদে আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনা কমিটির নেয়া পরীক্ষাই ছিলো চূড়ান্ত।

 

 

 

 

মেডিক্যাল ভর্তি আবেদন শুরু, জেনে নিন প্রক্রিয়া - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি আবেদন শুরু, জেনে নিন প্রক্রিয়া সময় বাড়লো এসএসসির ফরম পূরণের - dainik shiksha সময় বাড়লো এসএসসির ফরম পূরণের বিসিএসে একবার প্রিলি পাসেই ৩ বার লিখিত-মৌখিক পরীক্ষা - dainik shiksha বিসিএসে একবার প্রিলি পাসেই ৩ বার লিখিত-মৌখিক পরীক্ষা ভারতের কারণে ইউরোপগামী শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha ভারতের কারণে ইউরোপগামী শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা জবির ৭‘শ শিক্ষার্থী পাচ্ছেন আবাসন সুবিধা - dainik shiksha জবির ৭‘শ শিক্ষার্থী পাচ্ছেন আবাসন সুবিধা বিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সরকার, দৈনিক ২০০ টাকা ভাতা - dainik shiksha বিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সরকার, দৈনিক ২০০ টাকা ভাতা সব স্কুল-কলেজে বুদ্ধিজীবী দিবসে আলোচনা সভা - dainik shiksha সব স্কুল-কলেজে বুদ্ধিজীবী দিবসে আলোচনা সভা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068068504333496