শিক্ষক সংকটে বেসামাল জবির ছয় বিভাগ দুই ইনস্টিটিউট - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক সংকটে বেসামাল জবির ছয় বিভাগ দুই ইনস্টিটিউট

আসাদুল ইসলাম, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

আসাদুল ইসলাম, দৈনিক শিক্ষাডটকম: শিক্ষক স্বল্পতায় ভুগছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন বিভাগগুলো। এর ফলে নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে একাডেমিক কার্যক্রম। অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার কারণে গবেষণা ও সহপাঠ্য কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সময়ও দিতে পারছেন না শিক্ষকেরা। আবার সেশন জট, সঠিক সময়ে পরীক্ষা দিতে না পারা, সহপাঠ্য কার্যক্রমে অংশ নিতে না পারাসহ নানামুখী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদেরও। বিশ্বব্যাপী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাতের ন্যূনতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন করে শিক্ষক থাকতে হবে। সে হিসেবে অনেক বিভাগে শিক্ষক শিক্ষার্থীর অনুপাতে আন্তর্জাতিক মানও বজায় নেই। প্রায় দশ বছর আগে এসব বিভাগ প্রতিষ্ঠা হলেও এ সংকট এখনো চরমে।

জানা যায়, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু করে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ। কাগজে কলমে বিভাগটিতে ৯ জন শিক্ষক থাকলেও বর্তমানে একাডেমিক কার্যক্রমে যুক্ত আছেন মাত্র ৫ জন শিক্ষক। বাকি ৪ জনই রয়েছেন শিক্ষা ছুটিতে। বিভাগে অধ্যাপক রয়েছেন মাত্র একজন, বিপরীতে শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ২০০ জন। শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি রয়েছে ল্যাব ও ক্লাস রুম সংকট। এসব কারণে এ বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করতে ৫ বছরের স্থানে সময় লাগছে প্রায় ৭ থেকে ৮ বছর। এ জটের ফলে বিভাগটিতে বর্তমানে ৬টি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষা চলমান রয়েছে।

এদিকে একই রকম সংকট রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ। প্রতিষ্ঠার ১০ বছরেও বিভাগে নেই কোনো পূর্ণ অধ্যাপক। মাত্র ৮ জন স্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন বিভাগটিতে, যার মধ্যে একজন আছেন শিক্ষা ছুটিতে। বিভাগটির ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের (তৃতীয় ব্যাচ) স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলে সময় লেগেছে সাড়ে সাত বছর। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের (পঞ্চম ব্যাচ) গত বছরের ২১ ডিসেম্বর স্নাতক পরীক্ষা শেষ হলেও ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে এ বছরের ১৯ মার্চ।

২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সংগীত স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষা এখনো চলছে। এ ছাড়া ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা চলমান। অন্যান্য বিভাগ থেকে অন্তত ছয় মাস পিছিয়ে এ বিভাগ। শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২৪০ জন। বিভাগটিতে মোট নয়জন শিক্ষকের একজন রয়েছেন শিক্ষা ছুটিতে। এ ছাড়া অতিথি শিক্ষক দিয়ে নেয়া হয় ক্লাস। রয়েছে ক্লাসরুম সংকটও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগে রয়েছেন মাত্র পাঁচ জন শিক্ষক। একজন শিক্ষক রয়েছেন শিক্ষা ছুটিতে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন একজন শিক্ষক। ওই অভিযোগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে অসহযোগিতার অভিযোগে বিভাগের চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি দিয়ে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক আবুল হোসেনকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। বিভাগটিতে একাডেমিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন তিনজন শিক্ষক। এ বিভাগে প্রতি শিক্ষাবর্ষে ভর্তি নেয়া হয় ৩০ জন শিক্ষার্থী। সে হিসেবে বিভাগে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৫০ জন। ফলে বিভাগটিতে অতিথি শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষক স্বল্পতা পূরণ ও একাডেমিক কার্যক্রম গতিশীল করার চেষ্টা চলছে।

২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ। এ বিভাগে শিক্ষক রয়েছেন ১৩ জন। তবে ছয়জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে থাকায় বর্তমানে একাডেমিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন সাতজন শিক্ষক। প্রতিবছর ৩০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হয় এ বিভাগেও। 

২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে চালু হওয়া ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগে রয়েছে মাত্র সাতজন শিক্ষক। প্রায় তিনশ শিক্ষার্থী রয়েছেন বিভাগটিতে। সাত শিক্ষকের মধ্যে দুইজন রয়েছেন শিক্ষা ছুটিতে। ফলে বেশি ক্লাস নিতে হচ্ছে কর্মরত শিক্ষকদের। পাশাপাশি অতিথি শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষক সংকট পূরণের চেষ্টা চলছে বিভাগটিতে।

এদিকে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে চালু হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ইনস্টিটিটিউটেও রয়েছে শিক্ষক স্বল্পতা। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক রয়েছেন আটজন, যার মধ্যে অধ্যাপক একজন। একজন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে থাকায় এখানে বর্তমানে সরাসরি একাডেমিক কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন সাতজন শিক্ষক। বিপরীতে শিক্ষার্থী সংখ্যা দুই শতাধিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউটে অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজেও শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ২০০ জন। বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র সাতজন। একজন শিক্ষক ছুটিতে থাকায় এ বিভাগে বর্তমানে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা ছয় জন। যার ফলে আরো দুইজন অতিথি শিক্ষক দিয়ে ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে এ বিভাগটিতে।

শিক্ষক স্বল্পতার বিষয়ে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. লাইসা আহমদ লিসা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা যারা আছি তারা প্রাণপণ চেষ্টা করছি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার। আমরা আগামী বছরের কোর্সগুলো আরো কম সময়ের মধ্যে কীভাবে শেষ করা যায় সেভাবে পরিকল্পনা করছি। 

নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান ক্যাথরিন পিউরিফিকেশন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নাট্যকলা বিভাগের মূল সমস্যা হলো শিক্ষক সংকট। প্রত্যেক শিক্ষকের সাত থেকে আটটি কোর্স নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রাম থাকে। সেখানে শিক্ষকদের রিহার্সালে থাকতে হয়। 

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমাদের কিছু কিছু বিভাগে শিক্ষক সংকট রয়েছে। আমরা ইউজিসিতে চিঠির পর চিঠি দিচ্ছি। নিজেরা তো নিয়োগ দিতে পারি না। এটা নিয়ে আমরা যথেষ্ট কনসার্ন। বিশেষ করে নাট্যকলা, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন, সংগীত বিভাগে এ সংকট রয়েছে। নতুন অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী পদ চাওয়া হচ্ছে। কিন্ত ইউজিসি একটা, দুইটা করে পদ দিচ্ছে। আমরা গত সপ্তাহেও চিঠি দিয়েছি। এখন অনেক ডিপার্টমেন্টেই সার্কুলার যাচ্ছে। এটা রেগুলার প্রসেস।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্বে থাকা ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. হাসিনা খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভাগের নতুন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম ও শর্ত আছে। এগুলো পরিপূর্ণ না হলে এখনই আমরা নতুন শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। অনুমোদনও নেই। 

 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

ছাত্রদলের ২৬০ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha ছাত্রদলের ২৬০ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা ছাত্রলীগের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী কওমি মাদরাসার ঐতিহ্য নষ্ট করতে চান - dainik shiksha ছাত্রলীগের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী কওমি মাদরাসার ঐতিহ্য নষ্ট করতে চান ঈদে চার বিভাগে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে - dainik shiksha ঈদে চার বিভাগে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে সব সময় গাছ লাগানো আমাদের নীতি ছিলো: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha সব সময় গাছ লাগানো আমাদের নীতি ছিলো: প্রধানমন্ত্রী কখনো বিদ্যালয়ে যায়নি তিন কোটি মানুষ - dainik shiksha কখনো বিদ্যালয়ে যায়নি তিন কোটি মানুষ বিসিএস ছেড়ে নন-ক্যাডারে যোগ দিলেন কর্মকর্তা - dainik shiksha বিসিএস ছেড়ে নন-ক্যাডারে যোগ দিলেন কর্মকর্তা ১৯ জন শিক্ষক বেতন পান না ৭ মাস ধরে - dainik shiksha ১৯ জন শিক্ষক বেতন পান না ৭ মাস ধরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028409957885742