শিক্ষক সমিতির নেতার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ | সমিতি সংবাদ নিউজ

শিক্ষক সমিতির নেতার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অন্তত ১০টি অভিযোগ উঠেছে।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অন্তত ১০টি অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯৭ জন জন শিক্ষক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে এ নিয়ে লিখিত দিয়েছেন। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিব আলম। 

২৬ জুন দেওয়া হয় লিখিত অভিযোগটি। এতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন।

ওই অভিযোগলিপিতে বলা হয়, এক বছর ধরে উপজেলা কমপ্লেক্সের কাছে অবস্থিত সমিতির কার্যালয় তালাবদ্ধ করে রেখেছেন নিয়াজ মোহাম্মদ। ফলে নির্বাচিত অন্য সদস্যসহ শিক্ষকরা ঢুকতে পারছেন না। সমিতির আঙিনা আগাছা আর জঞ্জালে ভরে গেছে। সমিতির নামে ২ কোটি টাকা মূল্যের ২৮ শতাংশ জমি রয়েছে। কার্যালয়ের তিনটি কক্ষ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দেওয়া ছিল। সেগুলো খালি করে শিক্ষকদের নামাজের জায়গা করার নাম করে নিয়াজ মোহাম্মদ সাবেক সংসদ সদস্যের কাছ থেকে ৫২ হাজার টাকা বরাদ্দ নেন। তবে কাজের কাজ কিছুই করেননি।

শিক্ষকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়াজ মোহাম্মদ ঔদ্ধ্যত্বপূর্ণ আচরণ করেন। তিনি বলেন, 'আমি সম্পাদক, আমার যা ইচ্ছা তাই করব, কারও কাছে জবাবদিহি করতে আমি বাধ্য নই।'

শিক্ষকদের ভাষ্য, সমিতির ভাড়া দেওয়া পাঁচটি দোকানের টাকা তুলে ইচ্ছামতো খরচ করছেন নিয়াজ মোহাম্মদ। অথচ সবলেনদেন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে হওয়ার কথা। সভাপতি বা সম্পাদকের হাতে নগদ দেড় হাজার টাকার বেশি থাকার বিধান সমিতির গঠনতন্ত্রে নেই। প্রতি বছর সাধারণ সভা ডেকে সমিতির আয়-ব্যয়ের হিসাব সাধারণ শিক্ষকদের জানানো কথা। কিন্তু এক বছরেও কোনো সভা ডাকা হয়নি। এ বিষয়ে শিক্ষকরা তাঁকে প্রশ্ন করলে উত্তর দেন, 'আমার যখন সময় হবে, তখন মিটিং কল করব এবং হিসাব দেব, কারও কথায় করব না। সব সদস্য/শিক্ষক আমার পা ধরে ক্ষমা চাইলে তবে মিটিং ডাকার কথা বিবেচনা করব।'

নিয়াজ মোহাম্মদ স্ত্রীর নামে পৌরসভার ঠিকাদারি লাইসেন্স রয়েছে বলে স্বীকার করেন। তাঁর ভাষ্য, ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য কর্মচারী রেখেছেন। তারাই ঠিকাদারি কাজগুলো করেন। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ নাকচ করে বলেন, সবকিছু ঠিকমতোই চলছে। সাবেক এমপির কাছ থেকে ৫২ হাজার টাকা নিয়েও তিনটি কক্ষ কেন পতিত ফেলে রাখা হয়েছে- এমন প্রশ্নে কাজটি শেষ করার আশ্বাস দেন।

এক বছর ধরে সভা না ডাকার বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই সব চলছে। কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। নিরাপত্তার জন্যই কার্যালয় তালাবদ্ধ করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, শিক্ষকরা চাইলেই সেখানে বসতে পারেন।

যদিও ভিন্ন ভাষ্য উঠে আসে সমিতির সভাপতি ও আচমিতা ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ মো. ইকবালের বক্তব্যে। তিনি বলেন, একাধিকবার সাধারণ সম্পাদককে সভা ডাকতে বলেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে সব শিক্ষক শিক্ষা সফরে গিয়েছিলেন। সেদিনও সভা ডাকার কথা বলেছেন। কিন্তু সভা ডাকেন না। দুর্ব্যবহারের কারণে শিক্ষকরা সম্পাদকের ওপর ক্ষুব্ধ।

তাঁর ভাষ্য, পাঁচটি দোকানের মধ্যে দুটি দোকান ভাড়া বাবদ এককালীন ১ লাখ টাকা অগ্রীম নিয়ে ব্যাংকে রাখা হয়েছে। কিন্তু বাকি তিনটি দোকানের মাসিক ভাড়া আসে ৪ হাজার ৮০০ টাকা। সেটি সম্পাদকই মাসে মাসে উঠিয়ে নিচ্ছেন। সভা না ডাকার কারণে আর্থিক হিসাবও নেওয়া যাচ্ছে না।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিব আলম গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, তিনি অভিযোগটি পেয়েছেন। সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নেতৃত্বে আগামী সপ্তাহেই তদন্ত কমিটি করবেন।