শিক্ষাই নারীর ক্ষমতায়নের মূল ভিত্তি। শিক্ষা ছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন অসম্ভব। বর্তমানে বাংলাদেশে ছোট-বড় সব পেশায়ই রয়েছে নারীদের উপস্থিতি। নারী পুলিশ সদস্যরাও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিরক্ষা বাহিনীতেও নারীরা সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন। বিদেশেও বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ‘নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
মিডিয়া ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পিস (এমডিপি) আয়োজিত এই আলোচনাসভা হয়েছে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আর বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, নিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুকুর আলী শুভ প্রমুখ।
আলোচনাসভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কনসালট্যান্ট মু. রহমত আলী। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক শাহনাজ শারমীন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যদি পেছনে তাকিয়ে দেখি হযরত মুহাম্মদ (সা.) নারী অধিকারের কথা বলে গেছেন। যুদ্ধক্ষেত্রে নারীদের উপস্থিতির কথাও আপনারা জানেন। এরপর কোথায় যেন হারিয়ে গেল। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর নারীকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রচেষ্টা করেছিলেন। এরপর আমরা অনেকটা পথ নারীদের অনুপস্থিতি দেখলাম। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর নারীদের এগিয়ে চলা শুরু হলো। তিনি ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে নারীনীতি প্রবর্তন করলেন। নারীদের সন্তানের প্রতি যে অধিকার তা প্রতিষ্ঠা করলেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ক্রীড়াক্ষেত্রে দেখেন মেয়েরা ফুটবল খেলবে, ক্রিকেট খেলবে, চিন্তাই করিনি। হিমালয়ের চূড়ায় দুইজন মেয়ে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দিয়ে এসেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনে করতেন যদি এই শক্তিকে ঘরে ফেলে রাখি তাহলে এগিয়ে যেতে পারব না।’ তিনি গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহারের রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সাহসিকতার সঙ্গে প্যারেডে নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন। মন্ত্রী বলেন, ‘আমি তাঁদের (নারী পুলিশ) যে জায়গায় পদায়ন করেছি তাঁরা ভালো করেছেন। তাঁদের যোগ্যতা অনুযায়ী প্লেস করে দিচ্ছি। নৌবাহিনীতেও মেয়েরা চলে এসেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে আমার মনে হয় ৫০ পার্সেন্ট চলে এসেছে।’
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘নারীরা একসময় ছিল রান্নাঘরে। আজ দেখা যায় পুরুষরাও বলেন তাঁরা ভালো রান্না করতে পারেন। এটা সম্ভব হয়েছে নারীদের জন্য। রান্নাও একটা শিল্প। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারী-পুরুষকে আলদা করে দেখেন না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘শিক্ষাই নারীর ক্ষমতায়নের মূল ভিত্তি। ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন। সেদিন অত্যন্ত আনন্দের দিন। নিউজিল্যান্ডে ১২৬ বছর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর নারীদের ভোটাধিকার দিয়ে তাদের ক্ষমতায়ন করা হয়। আজ ১৯ সেপ্টেম্বর এই আলোচনাসভা গুরুত্ব বহন করে। গ্রামগঞ্জে গেলে দেখতে পাই ইউনিফর্ম পরে মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে। সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্যই মনে করিয়ে দেয় কতটা এগিয়ে গিয়েছি আমরা।’
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘দেশের উঁচু পদে নারীরা রয়েছেন। বর্তমানে দেশে অনেক নারী অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর। একসময় তাঁরা স্বামীকে ভয় পেতেন। নারী যখন স্বনির্ভর হয় তখন ভয় কমে যায়।’ তিনি সংসদ, সর্বোচ্চ থেকে নিম্ন আদালত, সাংবাদিকতাসহ সব পেশায় নারীদের কৃতিত্বের বিষয়টিও তুলে ধরেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে যখন শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন তখন তিনি ছিলেন নিঃস্ব। সেই শেখ হাসিনা বিশ্বে মানবতার নেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি মানুষের জন্য ভাবেন।