করোনাভাইরাসজনিত পূর্বসতর্কতার অংশ হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণার পর গতকাল মঙ্গলবার থেকে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীরা। গত সোমবার মন্ত্রিসভায় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দুই সপ্তাহের জন্য ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পর থেকেই কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লঞ্চ, বাস ও ট্রেনে করে ঘরমুখী হতে থাকেন।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে তারা ঢাকা ছাড়ছেন। তাদের বেশিরভাগই ছাত্রাবাস বা মেসে গাদাগাদি করে থাকেন। এই পরিবেশে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি।
গতকাল সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট কাউন্টারগুলোতে শিক্ষার্থীর ভিড়। রাজশাহীগামী সিল্ক্কসিটি ট্রেনের জন্য অপেক্ষারত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী জানান, পুরান ঢাকার একটি মেসে তারা ১০ জন গাদাগাদি করে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হয়ে যাওয়ায় ঢাকায় কোনো কাজ নেই। এ জন্যই বাড়ি চলে যাচ্ছেন। এতে করোনা থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে বলে তার বিশ্বাস।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুরাদ হোসেন জানান, যারা টিউশনি করেন তাদের অনেকে যেতে পারছেন না। কিন্তু তার কোনো টিউশনি নেই। তিনি তাই আগেভাগেই বাড়ি চলে যাচ্ছেন। শিক্ষকরাও তাদের বাড়ি যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মিলন জানান, তার বাড়ি যশোরে। বাড়ি যাওয়ার জন্য টিকিট কেটেছেন। যত তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছানো যায়, ততই ভালো। কারণ করোনা এখন জাতীয় সমস্যা।
করোনাভাইরাস দেখা দেওয়ায় বেশ কিছু দিন ধরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে গিয়েছিল। কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা বন্ধের দাবিতে আন্দোলনও শুরু করেন। বিভিন্ন মহল থেকেও একই দাবি ওঠে। এ অবস্থায় গত সোমবার আগামী ১ এপ্রিল পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত দেয় সরকার।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা এলেও আবাসিক হল বন্ধ করা হয়নি। তবে কেউই আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থীই বাড়ি চলে গেছেন এবং অনেকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
কবি জসীমউদ্দীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হেদায়েতুল সরকার বলেন, ঢাবির হলগুলোতে করোনার প্রভাব পড়েছে। অনেকেই আতঙ্কিত। স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান বলেন, আগে জীবন, পরে পরীক্ষা। হলগুলোর যে অবস্থা তাতে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। করোনায় জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বলা হচ্ছে। অথচ হলে একরুমেই থাকছেন ২৫-৩০ জন!'