শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্ষণের ঘটনায় দায় কার? - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্ষণের ঘটনায় দায় কার?

দৈনিকশিক্ষাডটকম ডেস্ক |

নারী যেন আজ কেবলই এক ভোগ্যপণ্য। ঘরে-বাইরে এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আজ আর নিরাপদ নয় তারা। গত শনিবার ঘটে যাওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা যেন এর জ্বলন্ত উদাহরণ। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল-সংলগ্ন জঙ্গলে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্তরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত মামুন (৪৫)। ঘটনার মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তিনি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনও করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। গত রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

সারাদেশ যেন আজ ধর্ষকদের অভয়ারণ্যে পরিণত হতে চলেছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লাইট হাউসের হিসাব মতে, দেশে ২০২২ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ হাজার ৩৬০ নারী। এর মধ্যে ৪৫০ জনকে আবার ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। একই সময়ে সারাদেশে সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৯ হাজার ৭৬৪ নারী। আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৩ উপলক্ষে গত ৬ মার্চ ‘মিডিয়া অ্যাডভোকেসি’ শীর্ষক এক সভায় এ সব তথ্য জানায় সংস্থাটি। এছাড়াও কালের কণ্ঠ থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারাদেশের থানায় গত পাঁচ বছরে ২৭ হাজার ৪৭৯টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে ৫৯ হাজার ৯৬০টি।

শুধু বাড়ি কিংবা কর্মক্ষেত্রেই না, নারীরা আজ নিরাপদ নেই গণপরিবহনেও। চলন্ত বাসে তরুণী গণধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনার সাক্ষী ইতোমধ্যেই আমরা হয়েছি। ২০১৭ সালে একটি চলন্ত বাসে একজন তরুণীকে গণধর্ষণের পর তাকে হত্যা করে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়ার ঘটনা বাংলাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তবুও এর মাত্রা কমছে না। এমনকি কিছুদিন আগেও আশুলিয়ার একটি বাসে গণধর্ষণের শিকার হন আরেক নারী। তারা না হয় একা ছিল। কিন্তু কক্সবাজারে স্বামীর সামনে স্ত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়ে বারবার গণধর্ষণের কথা কে না জানে। বিআইএসআর ট্রাস্টের এক গবেষণায় (২০১৮) বাংলাদেশে নারী ধর্ষণের নানাবিধ কারণ ওঠে এসেছে। গবেষণাটিতে ১১৯ জন ধর্ষণের ভিকটিম বা তার পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারীরা ধর্ষণ সংঘটনের যেসব কারণ চিহ্নিত করেছেন তা হলো কথিত প্রতিশ্রæতি ভঙ্গ বা ক্ষোভ থেকে অপরাধীর প্রতিশোধপরায়ণতা (৪০ দশমিক ৩ শতাংশ), অপরাধীর মাদকাসক্তি (৩০ দশমিক ৩ শতাংশ), অপরাধীর মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা (২৮ দশমিক ৬ শতাংশ), ক্ষমতা প্রদর্শন (২১ শতাংশ), পরকীয়া (২০ দশমিক ২ শতাংশ), রাজনৈতিক কারণ (১৬ শতাংশ), পূর্বশত্রæতা ও সম্পত্তিসংক্রান্ত দ্ব›দ্ব এবং অন্যান্য।

ধর্ষণের ভিকটিম বা তার পরিবারের সদস্যদের জানা মতে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অপরাধী বা অপরাধীরা ঘটনাকালীন নেশাগ্রস্ত ছিল। পারিবারিক পরিসরে কোনো শিশু বা কিশোরী ধর্ষণের শিকার হলে অনেক ক্ষেত্রে তা দীর্ঘমেয়াদি চলতে থাকে।

ধর্ষণ সংঘটনের কৌশলের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সর্বাধিক এক-তৃতীয়াংশ ঘটনায় নারীদের প্রতারণামূলক উপায়ে প্রলুব্ধ বা জোরপূর্বক অপহরণ করে ধর্ষণ করা হয়েছিল। এছাড়া অপরাধীরা নির্জন এলাকায় বা বাড়িতে ভিকটিমের একাকী অবস্থানের সুযোগ নিয়ে প্রায় ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ, জোরপূর্বক বাসায় প্রবেশ করে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ, প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ ধর্ষণ সংঘটন করেছিল। সংখ্যায় কম হলেও শিশুদের খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশ কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা মতে, ইদানীং অনেক ক্ষেত্রে বিয়ের আশ্বাস থেকে প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে উঠছে। পরবর্তীতে বিয়ে করতে ছেলেটির অনীহা দেখানোর প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।

সবচেয়ে বেশিসংখ্যক (৩৭ শতাংশ) ধর্ষণের ঘটনায় বেকাররা জড়িত ছিল। এছাড়াও ধর্ষণে জড়িতদের মধ্যে শিক্ষার্থী (১৪ দশমিক ৩ শতাংশ), ব্যবসায়ী (১৪ দশমিক ৩ শতাংশ) ও রাজনৈতিক নেতাকর্মী (১০ দশমিক ৯ শতাংশ) উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী মিলে যে পরিমাণ ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তার পরিমাণ ১১ শতাংশের মতো। তার অর্থ হচ্ছে রাজনীতি করলে ধর্ষণ করার প্রবণতা নিঃশেষ হয়ে যায় না, যদিও তারা সংগঠিত শক্তি এবং নির্দিষ্ট আচরণবিধি মেনে চলার কথা।

যাইহোক, শিক্ষার্থীরা যেমন ভাঙতে পারে, ঠিক তেমনই গড়ার কারিগরও তারা। তারা যেমন নানারকম রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে ঠিক তেমনই সংঘবদ্ধভাবে তারাই একটা সুন্দর সমাজ তৈরি করে দিতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই রাষ্ট্রকে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। ধর্ম এবং নৈতিকতা কখনোই শিক্ষা এবং জীবনাচরণের বাইরের কোনো বিষয় নয়। বরং এগুলোর সমন্বয় ঘটিয়েই আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে সাজাতে হবে। নয়তো শুধু শিক্ষাঙ্গন নয়, কলঙ্কিত হবে গোটা জাতিই। কেবলই কিছু সময়ের অপেক্ষা।

লেখক: নুসরাত জাহান পন্নি, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

স্মরণশক্তিকে মেধা বলার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে - dainik shiksha স্মরণশক্তিকে মেধা বলার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রেজাউল - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রেজাউল বিদেশ নির্ভরতা কমাতে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার তাগিদ ইউজিসির - dainik shiksha বিদেশ নির্ভরতা কমাতে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার তাগিদ ইউজিসির এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকদের কষ্ট - dainik shiksha বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকদের কষ্ট একাদশে ভর্তি আবেদন ২৬ মে থেকে ১১ জুন - dainik shiksha একাদশে ভর্তি আবেদন ২৬ মে থেকে ১১ জুন কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011935949325562