দেশের ইংরেজি মাধ্যমসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘বুলিং’ (শারীরিক ও মানসিকভাবে অপদস্থ করা) প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সেজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সবার আরো বেশি সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি বলে অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর ইউনাইটেড সিটিতে অবস্থিত ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্যার জন উইলসন স্কুলে বুলিং প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিয়ে আয়োজিত ‘রোড টু ওয়েলনেস’ অনুষ্ঠানের প্যানেল আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞদের আলোচনার পাশাপাশি শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা এবং মতামত তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে সাইকোলজিক্যাল হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস কেয়ার লিমিটেডের (পিএইচডব্লিউসি) লাজিনা আমিন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা ওয়ান সার্কলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফারিন দৌলা বুলিং ও শিশুর মানসিক-শারীরিক বিকাশ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় ‘বুলিং’ (শারীরিক ও মানসিকভাবে অপদস্থ করা) শিশুর উপর কেমন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, এ বিষয়ে সচেতনতার অভাবে শিশুর প্রতিভা বিকাশে কেমন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। তাছাড়া, সচেতনতাই শিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা স্কুলে বুলিং প্রতিরোধ ও কার্যকরী পদক্ষেপ, স্বাস্থ্যকর এবং চাপমুক্ত জীবনযাপন, বিভিন্ন সামাজিক প্রত্যাশা, ডিজিটাল জগতে সুস্থতা, পেশাগত এবং ব্যক্তিগত জীবন ভারসাম্য নিয়েও অভিমত দেন আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা।
স্যার জন উইলসন স্কুলে এ আয়োজনে অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পুরো আয়োজনটি প্রাণবন্ত ছিল দিনভর। প্যানেল আলোচনার পাশাপাশি স্কুলটিতে সৃজনশীল ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও স্যার জন উইলসন স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এতে বুলিং প্রতিরোধে সবাই এক হয়ে কাজ করবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
পাশাপাশি অনুষ্ঠানে ‘আর্ট থেরাপিউটিক’, ‘স্টোরি কর্নার’, ‘গো গ্রিন উইথ টেরাহোপ ক্লাব’, ‘ওয়াকথন’ এবং ‘কমেডি সার্কেল’ নামে সৃজনশীল আয়োজনের মাধ্যমে বেশ আকর্ষণীয়ভাবে বুলিংয়ের ক্ষতিকর দিক ও এর প্রতিকারগুলো তুলে ধরা হয়।
সকাল থেকে নার্সারি পড়ুয়া নিজের বাচ্চাকে নিয়ে ‘রোড টু ওয়েলনেস’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন অভিভাবক নাদরিন সুলতানা। তিনি বলেন, এ ধরনের আয়োজন আরো বেশি বাড়ানো দরকার। যাতে সবার মধ্যে আরো বেশি সচেতনতা বাড়ানো যায়। তার মতে, এ ধরনের আয়োজন শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন করতে উৎসাহিত করবে।
সবার মধ্যে ‘বুলিং’ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে স্যার জন উইলসন স্কুলের এ ধরনের আয়োজন আরো বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মিডল ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক রেজওয়ানা করিম সারা। তিনি বলেন, তারা শিক্ষার্থী-শিক্ষক এবং অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়াতে ‘রোড টু ওয়েলনেস’র মতো আয়োজনগুলোয় জোর দিচ্ছেন।
সবার সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ‘বুলিংয়ের’ মতো বিষয়গুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। সেজন্য সবার অংশগ্রহণ এবং সমন্বিত কাজের ওপরও জোর দেন এই শিক্ষক।