শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও অনলাইন শিক্ষা চালু রাখার পরিকল্পনা | কলেজ নিউজ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও অনলাইন শিক্ষা চালু রাখার পরিকল্পনা

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করেছে। গত কয়েক দিনে করোনা শনাক্তের হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর গত রোববার থেকে সারা দেশে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় সর্বস্তর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও মার্চ মাসে সীমিত পরিসরে স্কুল-কলেজ খোল

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করেছে। গত কয়েক দিনে করোনা শনাক্তের হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর গত রোববার থেকে সারা দেশে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় সর্বস্তর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও মার্চ মাসে সীমিত পরিসরে স্কুল-কলেজ খোলার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও আগের মতোই অনলাইন শিক্ষাও অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।

গত ৩০ জানুয়ারি এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এই ফেব্রুয়ারি মাসটা নজরে রাখব। যদি এই ফেব্রুয়ারি মাসে অবস্থা ভালো থাকে, তাহলে পরবর্তীতে সীমিত আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে শিক্ষার্থীরা যাতে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারে সে ব্যবস্থাটা আমরা নেব।’

কভিড-১৯-এর কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই ছুটি রয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পরপরই সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস প্রচার শুরু হয়। এরপর স্কুল-কলেজগুলো অনলাইনেও ক্লাস নেওয়া শুরু করে। তবে শহরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করতে পারলেও মফস্বলের শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই সেই সুযোগ পায়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। এরপর অন্যান্য শ্রেণির ক্লাস শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে এক দিনের জন্য স্কুলে আসবে। কারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিন ফুট দূরত্বে শিক্ষার্থীদের বসালে খুব বেশি শিক্ষার্থীকে এক দিনে স্কুলে আনার সুযোগ পাওয়া যাবে না। তাই সপ্তাহে এক দিন শিক্ষার্থীরা স্কুলে এলেও বাকি দিনগুলোতে অনলাইনে ক্লাস চলবে।

জানা যায়, নতুন শিক্ষাবর্ষে এর মধ্যে সংসদ টেলিভিশনে প্রাথমিকের ক্লাস প্রচার শুরু হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে ক্লাস প্রচারেরও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আর শহরাঞ্চলের স্কুলগুলো গত মাসের মাঝামাঝি থেকেই অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘স্কুল খোলার সব প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আমরা এর মধ্যে সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস শুরু করেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরও আমরা অনলাইন শিক্ষা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মো. বেলাল হোসাইন বলেন, ‘সংসদ টেলিভিশনে চলতি শিক্ষাবর্ষের ক্লাস প্রচারের প্রস্তুতি চলছে, শিগগিরই শুরু হবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও সব শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন স্কুলে আনা সম্ভব হবে না। আমাদের শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় অনলাইন শিক্ষা অব্যাহত রাখতে বলেছেন। অনেক স্কুলই এর মধ্যে অনলাইন ক্লাস শুরু করেছে। শুধু চলতি বছরই নয়, আগামীতেও আমরা অনলাইন শিক্ষার ওপর জোর দেব। যাতে ভবিষ্যতে ফের কোনো সমস্যায় পড়লে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কোনো ধরনের ক্ষতির মুখে না পড়ে।’

রাজধানীর কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্যাহ  বলেন, ‘জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই আমরা অনলাইন ক্লাস শুরু করেছি। কিন্তু যদি স্কুল খুলে যায় তখন যেই শিক্ষক সরাসরি ক্লাস নেবেন তাঁকে আবার অনলাইন ক্লাস নিতে হবে। এতে একজন শিক্ষকের ওপর বড় ধরনের চাপ পড়ে যাবে। এ জন্য আমরা স্কুল থেকেও যাতে শিক্ষকরা অনলাইন ক্লাস নিতে পারে, সে ব্যবস্থাও করছি।’

তবে অনলাইন শিক্ষায় গ্রাম ও শহরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। কারণ মফস্বলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরই অনলাইন ক্লাসের উপযোগী ডিভাইস নেই। এ ছাড়া মফস্বলে ইন্টারনেটের দুর্বল গতি, উচ্চ দামসহ নানা কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই অনলাইন ক্লাস করতে পারছে না।

তবে করোনার প্রাদুর্ভাব কমার পরও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ডিভাইস না থাকা শিক্ষার্থীদের বিনা সুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। যাতে সহজেই তারা অনলাইন

ক্লাস করতে পারেন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একযোগে সবাইকে ক্লাসে আনা সম্ভব হবে না। হলগুলোতেও সব শিক্ষার্থীকে একবারে উঠানো সম্ভব হবে না। এ জন্য তারাও চলতি বছর সরাসরি ক্লাসের পাশাপাশি অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করছে।