শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা যা বললেন - Dainikshiksha

শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা যা বললেন

সাইফুল ইসলাম খান |

কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুপারিশ করা ভালো

জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান

জাতীয় অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আলাদা পরীক্ষা ও ইউনিটভিত্তিক একাধিক পরীক্ষা ব্যবস্থা তুলে দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। রোববার সাংবাদিকদেরকে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে একটা পরীক্ষা নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদেরকে ভর্তির জন্য সুপারিশ করা ভালো। একটা কেন্দ্রীয় পরীক্ষা তারপর যার মেরিট অনুযায়ী যে যেখানে যেতে পারে।

 

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া অন্য কোনো উপায় দেখছি না

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

এমিরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রথমত, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজগুলোর ভর্তি পরীক্ষা শুরুতেই নেয়া উচিত। তারপর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং শেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। দ্বিতীয়ত, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়া ছাড়া আমরা অন্য কোনো উপায় দেখছি না। লক্ষাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের এ দুর্ভোগের দায়ভার ইউজিসির। তাদের উচিত পরিকল্পনা নিয়ে এ সমস্যার একটা সমাধান বের করা। অন্যদিকে প্রায় একই সময়ে সব প্রতিষ্ঠানে ইউনিটভিত্তিক আলাদা আলাদা আবেদন করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের যে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে, তা একেবারেই অযৌক্তিক। বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করায় লাভবান হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের। তাই পরীক্ষার ফি কমানো উচিত আর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়া উচিত। শিক্ষা ব্যবস্থার একটা ভয়ঙ্কর দিক হল যেভাবে প্রশ্ন ফাঁস হয়, যেভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাপনাটা ভেঙে পড়ছে সেখানে আরেকটি সমন্বিত পাবলিক পরীক্ষা নেয়াটাও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। শুধু সমন্বিত পরীক্ষার আয়োজন করলেই হবে না সেটাকে প্রশ্ন ফাঁসের কলঙ্ক ও জালিয়াতি মুক্ত করাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জটি নিতে হবে। তৃতীয়ত, এমসিকিউ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা তুলে দিতে পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন বদল করতে হবে। আর এমসিকিউ পদ্ধতির পরীক্ষায় শিক্ষার্থী বিষয়টি বুঝেছে কি না, প্রকাশ করতে পারে কি না সেটার কোনো পরীক্ষা হয় না। এর ফলে সহজে প্রশ্ন ফাঁস হয়। কোন নাম্বারে টিক দিতে হবে এটা সহজে পাওয়া যায়। কিন্তু লিখতে হলে শিক্ষার্থীকে বই পড়তে হবে, শিখতে হবে, লিখতে হবে এবং যা বুঝেছে সেটা প্রকাশ করতে হবে। টিক দিয়েই সে উত্তর করতে পারবে না, টিক দিয়ে মেধা ধরা পড়ে না। তাই রিটেন ছাড়া আমি কোনো উপায় দেখছি না। আরেকটা বিষয় হল লিখিত নিলে নকলও ধরা পড়বে। দুটো উত্তর এক হলেই ধরা পড়ে যাবে। তাই এমসিকিউ তুলে দিয়ে লেখার পদ্ধতি আনা দরকার। এতে প্রশ্ন ফাঁস হওয়াটাও কমে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটা বৈষয়িক স্বার্থ আছে, তারাই চান না

রাশেদা কে চৌধুরী

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, প্রত্যেকটিতে আলাদা আলাদাভাবে পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। নারী শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। মেডিকেল কলেজগুলো যদি একটা পরীক্ষা নিতে পারে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন পারে না? এবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার দিন ৭৬ হাজার শিক্ষার্থী সিলেটে গেছে। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী এবং তাদের সঙ্গে থাকা অভিভাবকদের চাপে সিলেট শহর রীতিমতো অচল হয়ে পড়েছিল। একটা বিভাগীয় শহর কী করে এত মানুষ জায়গা দিতে পারে? সব হোটেল পরিপূর্ণ, তাদের থাকার মতো কোনো জায়গা ছিল না। সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছিল তারা। একেকটা ইউনিভার্সিটি একেক দিন না করে সব ইউনিভার্সিটি একদিনে করলে বারবার এমন ভোগান্তি হতো না। মেডিকেল একটা পরীক্ষা নিচ্ছে এভাবে সব ইঞ্জিনিয়ারিং একটা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটা অর্থাৎ মোট তিনটা পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা চালু করা গেলে এ হয়রানি থেকে বহু মানুষ বেঁচে যেত। কিন্তু এখানে ফরম বিক্রির মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিপুল অর্থ লাভ করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটা বৈষয়িক স্বার্থ আছে, তারাই চান না। বৃহৎ স্বার্থে তাদের একটা অভিন্ন নীতিমালায় আসা উচিত।

 

এমসিকিউ জ্ঞান যাচাইয়ের মাধ্যম হতে পারে না

অধ্যাপক মেসবাহ কামাল

জন ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, ভর্তির জন্য এখন যেভাবে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দৌড়াতে হয়, তা ছাত্র এবং অভিভাবকদের জন্য একটা বড় সমস্যা। এটা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার একটা অন্তর্নিহিত দুর্বলতাই প্রকাশ করে। দুর্বলতা ও ভোগান্তি কমাতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটা সমন্বিত পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। কিন্তু এখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমঝোতার অনেক অভাব রয়েছে। আসলে যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান কাছাকাছি আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান করা কঠিন। আর এমসিকিউ পদ্ধতির পরীক্ষা মেধাকে কতটা যাচাই করে সেটাও একটা প্রশ্নের বিষয়। এমসিকিউ জ্ঞান যাচাই করার মাধ্যম হতে পারে বলে আমি মনে করি না। এমসিকিউ তুলে দেয়া উচিত। আর থাকলেও অনেক কমিয়ে এনে এমসিকিউ ও লিখিত অংশের সমন্বয় করা উচিত। পৃথিবীর অনেক দেশেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোনো পরীক্ষা দিতে হয় না। সেখানে পূর্ববর্তী পরীক্ষার নম্বরের ওপর ভিত্তি করে ভর্তি নেয়। আমাদের দেশে সেটা করা হয় না এবং করাও খুব কঠিন। এ কারণে যে, আমাদের দেশে কয়েক রকমের শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত। যেমন- বাংলা মিডিয়াম, ইংরেজি মিডিয়াম, মাদ্রাসা আছে। এ ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে এত রকমের পার্থক্য যে, এগুলোকে একই মানে বিবেচনা করা মুশকিল। এ ছাড়া আমাদের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড আছে, তাদের পরীক্ষাও আলাদা আলাদা প্রশ্নে হয়ে থাকে। এখানে এক বোর্ড থেকে অন্য বোর্ডের মানে পার্থক্য রয়েছে। ফলে যদি কোনো একটা রেজাল্ট ধরে বিনা পরীক্ষায় ভর্তি নিতে চাই, তাহলে সেটা বেশ মুশকিল ব্যাপার। বাহাত্তরের সংবিধানে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিল। বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শাখা তুলে দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত একই ধারার শিক্ষা চালু করা গেলে ব্যবধান অনেক কমে আসবে।

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর

শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029258728027344