শিক্ষাবিষয়ক গবেষণার মতো মহৎ কাজেও চৌর্যবৃত্তি - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষাবিষয়ক গবেষণার মতো মহৎ কাজেও চৌর্যবৃত্তি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

চিন্তার উদ্রেগ ঘটবার মাধ্যমে থিসিস, তাকে শাণিত কিংবা বিরুদ্ধাচরণের ভেতর দিয়ে অ্যান্টিথিসিস এবং এই দুইয়ের সংশ্লেষণের ভেতর দিয়ে নতুন চিন্তা বা সিনথিসিসের নির্মাণ-বিনির্মাণ ঘটে। চিন্তার দ্যোতনা তৈরিতে এ ধরনের প্রক্রিয়া বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ বিনির্মাণের প্রাথমিক স্রোত। যদিও বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় এ ধরনের স্রোতের খরা অর্থাৎ চিন্তার মরুভূমি অনুভূত। আর এর জন্য যতটা সামাজিক শৃঙ্খল দায়ী তার চেয়ে চিন্তাশীল শ্রেণির ব্যক্তিস্বার্থ, ভোগবাদী চিন্তা এবং স্ববিরোধী আচরণ। বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, যার ফলাফলে ক্ষমতাকেন্দ্রিক আফিমে নিজ নিজ দায়িত্ববোধের হেঁয়ালিপনা এবং বাহ্যিক জনপ্রিয়তার মুখোশে নিজ নিজ কর্মের শূন্যতা দৃশ্যমান। সাম্প্রতিক সময় এর অনন্য উদাহরণ।

বর্তমান সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা গুরু-শিষ্য পরম্পরার চেয়ে নানা ক্ষেত্রের নেতৃত্ব দখলের দৌড়-ভোঁদৌড় দিতে বেশি তৎপর। এর কারণ ভোগের নীতি। বর্তমান সময়ে সরকার প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি ভীষণ নান্দনিক। কারণ এতে আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীভূতসহ শিক্ষাকে সহজকরণের মাধ্যমে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার একটা প্রক্রিয়া নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু এই উদ্যোগ সফল করবার অন্তরায় খোদ রক্ষকরাই অর্থাৎ সামান্য কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

কারণ সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু তথ্য মতে, প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকের আচরণ অনেকটা মহাজনের মতো! যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, এমন মৌলিক প্রশ্নের কারণেও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যাওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, স্বজনপ্রীতি চর্চার যৌথ খামারগুলো আজ অনেকের সন্তান-স্ত্রী-শ্যালক-শ্যালিকা সমাহারের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। যদিও এসব শিরোনামে ওই সব স্থানে কোনো নৈতিক অনুশোচনাবোধ দেখা যায়নি। বরং ক্ষেত্রবিশেষে চর দখলের লাঠিয়াল বাহিনীর মতো আরো দাপুটে ‘আচরণ-ভাব’ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

তবে এসবের মাঝে বড় দুঃখজনক বিষয় হলো, ইদানীং গবেষণার মতো বিষয়বস্তুতে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ এবং পারস্পরিক কাদা ছোড়াছুড়ি। প্রবাদ আছে এক বালতি দুধ নষ্টের জন্য সামান্য চোনাই যথেষ্ট। কাজেই বিবেকবান শিক্ষক-শিক্ষিকারা এসব ‘অভিযোগ-আচরণের’ যৌক্তিক কারণ, ফলাফল এবং দ্রুততর সময়ে সমাধানের পথ অনুসন্ধান করবেন এটাই প্রত্যাশা। কারণ এতে একদিকে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্তি দূর হবে, অন্যদিকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিব্রত অবস্থা কাটিয়ে আগামী দিনের বাংলাদেশ বিনির্মাণে আপন আপন ক্ষেত্রে মনোযোগী হতে পারবেন।

প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়গুলো ঘটবার ক্ষেত্রে ছাত্ররাজনীতিরও কিছু দায় আছে। ইদানীংকালে ছাত্রসংগঠনগুলোয় কর্মী সংগ্রহে সাংগঠনিক পন্থা অনুসরণে খুব একটা ভ্রুক্ষেপ নেই। ফলে দেখা যায় নামে-বেনামে ছাত্রসংগঠনগুলোয় সুবিধাভোগী, স্বার্থবাদী এবং সংগঠন অপ্রেমীরা ঢুকে নিজেদের স্বার্থচরিতার্থ করবার পথ নির্মাণেই ব্যস্ত। আর মুখোশ হিসেবে বেছে নেয় সামাজিক এবং মানবিক দরদ।

অথচ বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্য যে কাজ অর্থাৎ শিক্ষাবিষয়ক চিন্তা, নিজেদের সংগঠনের নেতাকর্মীদের মান উন্নয়নে সেমিনার-লেখালেখির আয়োজন করা, কর্মীদের খবরাখবর নেওয়া, কর্মমুখী উদ্যোগসহ উদ্যোক্তা তৈরির পন্থা অবলম্বন করা এসবে খবর নেই। বরং কথায় কথায় মানবিক জননেতার ভূমিকায় নিজেরা আয়না দেখেন। আর এ কারণেই এখন শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার চেয়ে দান-খয়রাতের প্রতিযোগিতা বেশি। শিক্ষাবিষয়ক গবেষণার মতো মহৎ কাজেও চৌর্যবৃত্তির বিস্তর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ।

ক্ষমতাকেন্দ্রিক সংজ্ঞায়ন এবং বিশ্লেষণে নানা মনীষী নানা মত দিয়ে গেছেন। তবে মিশেল ফুকোর ক্ষমতা সম্পর্কে বোধ হয় এ ক্ষেত্রে বেশি প্রাসঙ্গিক, ক্ষমতা সম্পর্কজালের মতো বিস্তৃত, এখানে যে কেউ যেকোনো সময় ক্ষমতাবান বনে যেতে পারেন। তবে শিক্ষাঙ্গনের ক্ষেত্রে ক্ষমতার লড়াইটা যতক্ষণ জ্ঞান আহরণ এবং নৈতিকতার প্রতিযোগিতায় থাকে ততক্ষণই ক্ষমতাকেন্দ্রিক আচরণ নান্দনিক এবং উপভোগ্য হয়। তখন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহির ভেতর থাকেন। ফলে বিভাগকেন্দ্রিক পারিবারিক নিয়োগ, গবেষণার মতো বিষয়বস্তুতে অনিয়মের সুযোগ হয় না।

পাশাপাশি মানবিক সাহায্যনির্ভর ছাত্ররাজনীতির পথচলার ছলে ছাত্রনেতাদের ঘাড়ে ভর করে যে অরাজনৈতিক শ্রেণির বর্ষীয়ান রাজনীতিক (!) বনে যাওয়ার মিছিল তা-ও বন্ধ হবে। এ বিষয়টি আরো খোলাসা করে বললে, শিক্ষাজীবনকালীন একজন শিক্ষার্থীর উপার্জনের উপায় থাকে না। কাজেই এই ধরনের সাহায্য বা মানবিক নির্ভর পরিক্রমায় হাঁটতে হলে তাঁকে কোথাও না কোথাও হাত পাততেই হয়। অর্থাৎ নিজের ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রচারণার আফিমে সে নিজেই কাউকে না কাউকে ছায়া হিসেবে রাজনৈতিক ময়দানে নিয়ে আসছেন এবং বেলা শেষে নিজেই অমাবস্যায় রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছেন।

অথচ সে যদি শুধুই তাঁর শিক্ষাজীবন এবং কর্মীদের নিয়েই ভাবেন এবং তা নিয়ে এগোবার চিন্তায় মনোনিবেশ করেন, তবে রাষ্ট্র পাবে একজন স্কলারসম্পন্ন ভবিষ্যৎ পলিটিশিয়ান। পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ ঘটবে রাজনৈতিক স্বচ্ছতা এবং ভারসাম্যের। আর এতেই আসবে চিন্তার ধারাবাহিকতা এবং দূর হবে সর্বস্তরে নেতৃত্ব ও ভালোবাসার সেশনজট।

লেখক : হায়দার মোহাম্মদ জিতু, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ

নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036389827728271