শিক্ষামন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে ২০০টি সরকারি কলেজের জন্য প্রায় ১১ কোটি ব্যয়ে ক্যামেরা কিনে ফেসেঁ গেছেন শিক্ষা অধিদপ্তরের এক প্রকল্প পরিচালক। সরকারি কলেজের বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ প্রকল্পের সাবেক পরিচালক ও শিক্ষা অধিদপ্তরের ওএসডি কর্মকর্তা নূরুল হুদা র্যাংগস ইলেক্ট্রনিক্সের কাছ থেকে তড়িঘড়ি করে এসব ডিজিটাল ক্যামেরা ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি কিনেছেন। ক্যামেরা ক্রয় প্রক্রিয়া বাতিল করতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও তাকে ভুল বুঝিয়ে এসব ক্যামেরা কিনেছেন তিনি। ক্যামেরা কেনার টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিলের নির্দেশনা থাকলেও তাও মানেননি তিনি। আর প্রতিটি ডিজিটাল ক্যামেরার দাম পড়েছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। যদিও বাজারে ডিজিটাল ক্যামেরা ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্যে কেনাবেঁচা হয়।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
তবে, ফেঁসে গেছেন এ কর্মকর্তা। তাকে ‘অদক্ষতা’ ও ‘অসদাচরণের’ অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু করেছে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। ইতোমধ্যে শাস্তির প্রাথমিক প্রক্রিয়া হিসেবে নূরুল হুদাকে শোকজ করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করায় গত ২ মে (রোববার) নূরুল হুদাকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজে তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। শোকজের নোটিশ পাওয়ার দশ দিনের মধ্যে শোকজের জবাব পাঠাতে বলা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত শোকজ নোটিশটি তার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন : জাল সনদধারী শিক্ষকরা বেপরোয়া, শিক্ষামন্ত্রীকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা (ভিডিও)
এদিকে জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করায় সাবেক প্রকল্প পরিচালক নূরুল হুদাকে ‘অদক্ষতা’ ও ‘অসদাচরণের’ অভিযোগে অভিযুক্ত করে অভিযোগনামা তৈরি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অভিযোগনামায় বলা হয়েছে, সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ প্রকল্পের সাবেক পরিচালক নূরুল হুদা (বর্তমানে ওএসডি) ২০০ টি সরকারি কলেজের জন্য ১০ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিজিটাল ক্যামেরা ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি কেনার জন্য ই-জিপি সিস্টেম পোর্টালে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২ মার্চ র্যাংগস ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেডের সাথে ক্যামেরা কেনার চুক্তি সম্পাদন করেন। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ২৯ জুন এসব মালামাল গ্রহণের সর্বশেষ সময় ছিল। তবে, সে বছরের ১৫ জুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতির সভায় ‘সম্ভব হলে ক্যামেরা কেনার প্রক্রিয়া বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
মন্ত্রণালয় আরও বলছে, শিক্ষামন্ত্রীকে নূরুল হুদা যথাযথভাবে তথ্য না দিয়ে তা গোপন করেছেন এবং ক্যামেরা কেনার চুক্তিটি বাতিল করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন। যেকোন সময় ক্রয় কার্যক্রম বাতিল করার এখতিয়ার থাকা সত্বেও এবং পর্যাপ্ত সময় পেয়েও তিনি তা বাতিল করেননি। এছাড়া তিনি প্রকল্পের আওতাধীন বিভিন্ন প্রশিক্ষণের প্রকৃত তথ্য গোপন করেছেন।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান থেকে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ২৯ জুনের মধ্যে মালামাল গ্রহণের কথা থাকলেও ১৫ জুন প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ওয়ারহাউজ থেকে মালামাল গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে ইমেইল দেয়া হয়। তবে, শিক্ষামন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্যামেরা কেনার প্রক্রিয়া বাতিল না করে সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনার প্রস্তাব পাঠান। সে প্রেক্ষিতে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ এর ৪২ বিধি অনুসারে জনস্বার্থে ওইসব ক্যামেরা কেনার ইজিপি প্রক্রিয়া বাতিল বা চুক্তি বাতিল করার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সচিব মো মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত অভিযোগ নামায় আরও বলা হয়েছে, কিন্তু প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নূরুল হুদা ক্যামেরা কেনার প্রক্রিয়া বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন থাকাকালে ১০ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০ টি ডিজিটাল ক্যামেরা তড়িঘড়ি করে ক্রয় সম্পন্ন করে জনস্বার্থ বিঘ্নিত করেছেন। প্রজাতন্ত্রের একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে এ ধরণের কাজ সরকারি চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধি পরিপন্থী এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ এর (ক) ও ৩ (২) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
শিক্ষামন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে সাড়ে ৫ লাখ টাকা করে ডিজিটাল ক্যামেরা কেনায় নূরুল হুদাকে শোকজ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো শোকজ নোটিশে তাকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে ব্যক্তিগত শুনানি চাইলে তাও পাঠাতে জবাবে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।
এদিকে সাড়ে ৫ লাখ টাকায় ক্যামেরার দাম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। ক্যামেরার দামের বিষয়ে জানতে রাজধানীর স্টেডিয়াম মার্কেটের ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ করা হয়। ক্যামেরা ব্যবসায়ীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেছেন, ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় প্রফেসনাল ক্যামেরা পাওয়া যায়। খুব অত্যাধুনিক ক্যামেরার দামও হওয়ার কথা ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত। সাড়ে ৫ লাখ টাকা ক্যামেরার দাম হিসেবে একটু বেশি।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।