বরগুনা সদর উপজেলাসহ অধিকাংশ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা শিক্ষকরা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা। তবে তদারকি আরো বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতি বছরই দেয়া হয় উপবৃত্তি। তবে বরগুনায় উপবৃত্তির টাকা চলে যাচ্ছে শিক্ষকদের পকেটে। আর শিক্ষার্থীরা টাকা চাইলে বেধে দেয়া হয় ঘুষের শর্ত। যদিও এ ধরনের অভিযোগকে অস্বীকার করেছেন শিক্ষকেরা। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অজুহাতে টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন কোন কোন শিক্ষক।
জানা যায়, জেলার বেতাগী উপজেলার ৫৫নং চান্দখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহাদাত হোসেন ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি উত্তম কুমার দাশের যোগসাজশে অনেক শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার দুপুরে এক অভিযোগ পত্রে এ অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে অপসারনের দাবিও জানিয়েছেন ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী।
নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংক কর্মকর্তাদের টাকা বিতরণের কথা থাকলেও অনেক বিদ্যালয়ে টাকা বিতরণ করেছে স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ব্যাংক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এ টাকা আত্মসাত করেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি।
বেতাগী অগ্রণী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিমকে চান্দখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টাকা বিতরণের দায়িত্ব দেয়া হয়।
ভুক্তভোগী কয়েকজন অভিভাবকের অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, ৩য় শেণির শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার মীম, রোল নং ৩০ নামে বরাদ্দ আসে ১২’শ টাকা কিন্তু অভিভাবকের কাছ থেকে ৪টি স্বাক্ষর নিয়ে তাকে দেয়া হয়েছে ৬’শ টাকা। ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র সাকিব, রোল নং ৯৫ তার নামে বরাদ্দ’র ৫’শ টাকা দিয়ে বিদায় করে দেয় শিক্ষকরা, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মীরা, রোল নং ৬৮ সেও ১২’শ টাকার স্থলে পেয়েছে ৬’শ টাকা। এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।
চান্দখালী বাইপাস স্থানীয় বাসিন্দা মো. মশিউর রহমান শাহীন ও স্থানীয় ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন কাজী বলেন, প্রতিবার উপবৃত্তির টাকা প্রদানে শিক্ষকরা এমনি ভাবে বরাদ্দকৃত টাকার অর্ধেক কেটে রাখেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। টাকা তারা রেখেছেনই। কেউ কেউ আবার টাকা পায়নি।
অভিযোগকারীদের মধ্যে আয়শা, ফরিদা, মারুফা, খাদিজা বলেন, আমরা সকলেই ভুক্তভোগী। কেউ ৪’শ, কেহ ৬’শ আবার কেউ ৯’শ টাকা পাইছি। সরকার দেয় কিন্তু শিক্ষকরা আত্মসাৎ করে। সরকারি লোক যদি স্কুলে এসে আমাদের কাছে বসে টাকা দিতো হেলে আমরা সব টাকাই পাইতাম।
কেন ব্যাংক কর্মকর্তা টাকা বিতরণ না করে প্রধান শিক্ষকের হাতে টাকা দিয়েছে জানতে চাইলে অগ্রনী ব্যাংক বেতাগী অগ্রণী ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক কৃত্তিবাস নাগ বলেন, ৫৫নং চান্দখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টাকা বিতরণের জন্য ব্যাংকের ২য় কর্মকর্তা রেজাউল করিমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। আমার জানামতে তিনি কোন অনিয়ম করেননি। অভিযোগ যে কেউ দিতেই পারে আপনারা লিখেন।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ বলেন, উপবৃত্তি দিতে টাকা কেটে নেয়ার কোন বিধান নেই। সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী টাকা শিক্ষার্থীদের মাঝে আসবে। সেই টাকা থেকে এক টাকাও যদি কেটে রাখা হয় তাহলে সেই বিদ্যালয় ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।