করোনা পরিস্থিতিতে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মুখোমুখি পাঠদানের পরিবর্তে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনলাইন দূরশিক্ষণ পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। কিন্তু অনলাইন দূর-শিক্ষণ মূলত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সীমিত। শহরাঞ্চলের কিছু স্কুল-কলেজ এ পদ্ধতি গ্রহণ করলেও, সামগ্রিক অবকাঠামো বিবেচনায়, গ্রামাঞ্চলের স্কুল-কলেজ অনলাইন দূর-শিক্ষণ কার্যক্রমের একেবারেই বাইরে। এছাড়া, স্কুল বন্ধের শুরু থেকেই সরকার জাতীয় পর্যায়ে টেলিভিশনের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণির ধারণকৃত পাঠদান করে আসছে। পরবর্তীতে ১২ আগস্ট থেকে রেডিও সেবাকেও দূর-শিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ বাস্তবতায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের সম্ভাব্যতা ও কার্যকারিতা নিরূপণে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচটি উপজেলায় একটি টেলি-মেন্টরিং বা টেলি-টিউটরিং প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের অধীন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়া চার শতাধিক শিশুকে সাপ্তাহিক পাঠদান করছেন।
মোট ১৩ সপ্তাহ এই পাঠদান কার্যক্রম চলবে। এই টেলি-মেন্টরিং বা টেলি-টিউটরিংয়ের আওতায় মেন্টর বা টিউটররা শিশুদের সরকারি পাঠক্রমের অধ্যায়গুলো বুঝিয়ে দেন। তাছাড়া মেন্টর বা টিউটররা শিশুদেরকে সরকারি পাঠক্রমের অধ্যায়সমূহের সমাধান করে দেয়। তা ছাড়া সন্তানের পড়ালেখায় অধিক অংশগ্রহণ নিশ্চিতে মা-বাবাদের উৎসাহিত করেন এবং বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেন। সন্তানেন পরিচর্চার বিভিন্ন বিশ্বাস বা মতামত নিয়েও কথা বলেন। পাঠদান শুরু করার আগে স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ ও সেবা প্রদানের নির্দেশিকা দেয়া হয়েছে।
শিক্ষা প্রদান পর্বের শেষে, আগামী জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন জরিপ ও পরীক্ষার মাধ্যমে অংশগ্রহনকারী শিশুদের জ্ঞানীয় ও অ-জ্ঞানীয় বিকাশ নিরূপণ করা হবে। প্রকল্পটির কার্যকারিতা নির্ণয়ে র্যা ন্ডমাইজড ট্রায়াল পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে যা ইতিমধ্যে সোশ্যাল সায়েন্স রেজিস্ট্রিতে নিবন্ধন করা হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট এন্ড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিডিআরআই) নামে একটি বেসরকারি সংস্থা।
এই গবেষণা প্রকল্পের প্রধান মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আসাদ ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, “শিশুদের প্রাথমিক স্তরে শিক্ষা অর্জন ধারাবাহিক না হলে অনেক ধরণের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন এতে তাদের পড়ালেখা শেষ করার সম্ভাবনা হ্রাস পায়, সামাজিক ও আবেগিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়। তাই শিক্ষাদানের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে আমাদের সব ধরণের মধ্যমকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে।“
শিক্ষা প্রদান পর্বের শেষে, আগামী জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন জরিপ ও পরীক্ষার মাধ্যমে অংশগ্রহনকারী শিশুদের জ্ঞানীয় ও অ-জ্ঞানীয় বিকাশ নিরূপণ করা হবে।
এই প্রকল্পের সমন্বয়কারী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জনাব হাসিবুল হাসান বলেন, “আমরা আশা করছি এই টেলি-মেন্টরিংয়ের ফলে শিশুদের জ্ঞানগত বিকাশের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার ধারণাও বিকাশলাভ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবক ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে শিক্ষালাভ করার ফলে তাদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবার মনোভাব তৈরি হবার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।”
এই ধরণের টেলি-মেন্টরিং প্রকল্পের পরিধি সহজেই বৃদ্ধি করা সম্ভব। সরকারি উদ্যোগে মোবাইল এপ্লিকেশন বা হটলাইন নম্বরের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আন্তঃসংযোগ ঘটিয়ে দিলে তা সহজেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে। সরকারের টেলি-মেডিসিন সেবা বিতরণ ব্যবস্থায় এই ধরণের উদ্যোগ ইতিমধ্যে পরিলক্ষিত হয়েছে। এছাড়াও, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নানা রকম কৌশলে স্কুল বা কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান সম্ভব। যেমন শ্রেণিভিত্তিক বিষয়ের অধ্যায়সমূহের লেকচার ধারণ করে তা টোল-ফ্রি নম্বরের মাধ্যমে বিতরণ করা যেতে পারে। তাছাড়া বট-কলিং বা মেসেজিং এর মাধ্যমে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন উপদেশ, পরামর্শ বা শিক্ষা সংক্রান্ত সমাধান দেয়া যেতে পারে।