শিক্ষার লক্ষ্য হতে হবে কল্যাণ সাধন - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষার লক্ষ্য হতে হবে কল্যাণ সাধন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

যে কোনো জাতির উন্নতির জন্য যে শিক্ষা অনিবার্য, তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। পার্সি নানের মতে শিক্ষা বলতে শিশুর ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশকে বোঝায়, যার সাহাঘ্যে সে নিজের সর্বোত্তম ক্ষমতা অনুযায়ী মানুষের কল্যাণে স্বকীয় অবদান রাখতে পারে । অর্থাৎ, এখানে পরিষ্কার হয়ে ওঠে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য মানুষের কল্যাণ সাধন। রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, সাধারণভাবে শিক্ষা বলতে সমাজস্বীকৃত, বৈধ এবং নেতিবাচক আচরণের উন্নয়নকে বোঝায়, যা সবার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। তবে আমাদের দেশের শিক্ষার এক মাত্র উদ্দেশ্য ভারি ভারি সার্টিফিকেট অর্জন করা, যাতে আমরা ভালো চাকরি পেতে পারি। শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান আমাদের মনোজগত্কে কতটা সমৃদ্ধ করতে পেরেছে, আমাদের কতটা মানবিক করতে পেরেছ, তা ভাববার বিষয় নয়। অর্থাত্ এখানে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য পুরোপুরি অবহেলিত। আমাদের দেশে যে ভালো চাকরি করতে পারে সে-ই সুশিক্ষিত, তার শিক্ষা সার্থক। অর্থাৎ শিক্ষার সার্থকতা একটি ভালো চাকরির চার দেওয়ালে বন্দি। তাই ছোটবেলা থেকে আমাদের মানসিকতা এভাবে বেড়ে ওঠে। তাই আমরা তথাকথিত শিক্ষিত ঠিকই হই, কিন্তু মানবিক হই না, কিংবা মানুষের জন্য কল্যাণকরও হয়ে উঠতে পারি না।

স্বাধীনতার পর থেকেই আমাদের দেশের শিক্ষা খাতের বেশ উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশে সাক্ষরতার হার ৭৫.৬০ শতাংশ । গত বছরে যা ছিল ৭৪.৬০ শতাংশ। কিন্তু এ সফলতা মুহূর্তেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে দুর্নীতির চিত্রে। স্নাতকোত্তর একজন শিক্ষার্থী যখন চাকরির পরীক্ষায় দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সংবাদ শিরোনাম হয়, কোনো সমাজপতি যখন দেশের অর্থপাচারের দায়ে অভিযুক্ত হন, কোনো নারী যখন ধর্ষণের শিকার হন, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে গেস্টরুমের মতো জঘন্য অপসংস্কৃতিচর্চার স্বীকার হন, তখন আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্হার সার্থকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে চাকরি লাভ আমাদের দেশে তেমন বিরল কোনো ঘটনা নয়। এখানেই শিক্ষিত সমাজের শিক্ষার সার্থকতা বেশ নাজুক হয়ে পড়ে। অযোগ্য ব্যক্তিরা দেশের বড় বড় আসন দখল করে থাকলে, মেধার যথাযথ ব্যবহার না হলে দেশ ও জাতি যে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

অথচ শিক্ষা এমন একটি উপকরণ, যা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে একটি সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা হয়। আমাদের সমাজের অসুস্হ প্রতিযোগিতা, নৈতিকতাহীন ও অমানবিকতার শত শত ঘটনা বলে দেয়, আমরা আসলে শিক্ষা থেকে অনেক দূরে। মানবিকতা, নৈতিকতা থেকে অনেক দূরে থেকে যখন আমরা নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমে বন্দি থেকে মুখস্হ বিদ্যায় অর্জিত ভারি ভারি সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরিদাতার কাছে হাজির হই, তখন তার চাহিদা থাকে ব্যবহারিক দক্ষতার ওপর। এখানেই চাকরি দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে চাহিদা আর জোগানের মধ্যে ব্যাপক ফারাকের সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য থেকে তো আমরা দূরেই ছিলাম, এখন আবার সমাজে প্রচলিত উদ্দেশ্য থেকেও দূরে সরে গেলাম। আমাদের দেশে লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার যুবক অথচ আমাদের বাইরের দেশ থেকে শ্রমশক্তি আমদানি করতে হয় চাকরি দাতা গ্রহীতার চাহিদা জোগানে মিল না থাকার কারণে। এর এক মাত্র কারণ অসংগতিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্হা। লাখ লাখ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ নিয়ে এইচএসসি পাস করে, কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সিট মাত্র ৬০ হাজারের মতো। অস্তিত্বের সংগ্রামে শুরু হয় অসুস্হ প্রতিযোগিতা। শত সংগ্রাম করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পরে শুরু হয় আবার নতুন যুদ্ধ। অনার্সে চার বছর সময় ধরে তার অর্জিত জ্ঞান চাকরির পরীক্ষায় কোনো কাজে আসবে না বললেই চলে।

শুরু হয় অঘোষিত ডিগ্রি অর্জনের পথচলা। আবার এতো কিছুর পরেও চাকরির দেখা মেলে না। আমাদের শিক্ষার পুরোটাই কাগজেকলমে ব্যবহারিক দক্ষতাবিমুখ। আবার যে বিষয়ে আমি চাকরি করব, সে বিষয় আর চাকরি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মধ্যেও কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। এখানেই তৈরি হয় বিশাল এক শূন্যতার। অর্থাত্ কোথাও কোনো মিল নেই। অথচ আমাদের রাজস্ব ব্যয়ের প্রধান বৃহত্তর খাত শিক্ষা খাত। কিন্তু শিক্ষার হারের সঙ্গে শিক্ষার উদ্দেশ্য অর্জন বা সার্থকতার হারের এমন ফারাক শিক্ষা খাতে ব্যয় করা অর্থের উপযোগিতা নিয়ে ভাবিয়ে তোলে।

আমাদের দেশে ভারি ভারি পাঠ্যক্রম দিলেও শিক্ষায় নৈতিকতা, মানবিকতা কিংবা বাস্তব দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে কোনো নজর নেই। কিন্তু এগুলো এখন সময়ের চাহিদা হয়ে উঠেছে। আমরা শিক্ষিত হয়ে সমাজপতির আসনে কিন্তু দুর্নীতি, অব্যবস্হাপনা, অমানবিকতার চর্চা আমাদের নিত্যসঙ্গী। তাহলে এ শিক্ষার কি মানে?

ছোট জীবনের ব্যাপ্তি গত হতে থাকে, কিন্তু আমাদের প্রাপ্তির খাতা শূন্যই থেকে যায়। আমাদের শিক্ষা হওয়া উচিত এমন, যা আমাদের মনোজগত্কে সমৃদ্ধ করতে পারবে এবং আমাদের চাহিদা মোতাবেক সুন্দর জীবন দিতে পারবে। এজন্য প্রয়োজন আমাদের শিক্ষাব্যবস্হাকে ঢেলে সাজানো। আমাদের শিক্ষা হতে হবে সময়োপযোগী এবং শিক্ষার লক্ষ্য হতে হবে কল্যাণ সাধন। বইপুস্তকের শিক্ষা থেকে একটি শিশুর নৈতিক ও মানবিক অবস্হান দৃঢ়করণ এবং হাতেকলমে শিক্ষার দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষা হোক সুন্দর জীবন ও সুস্হ সমাজের লক্ষ্যে।

লেখক : ইসরাত জাহান নিঝুম, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034980773925781