ফুলছড়ি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুর রহমানকে কানে ধরিয়ে ওঠ-সব করা ও মারধরের ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন গায়েব করে দিয়েছেন এলিয়াছ-ফাত্তাহ ও খেলাধুলা গংরা। ওই তদন্ত কমিটির প্রধান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. এলিয়াছ হোসাইন। তিনি প্রতিবেদন জমা দেননি। অবাধ তথ্য আইন অনুযায়ী এ প্রতিবেদনটি পাওয়ার অধিকার সাংবাদিকদের রয়েছে। তবে, এড়িয়ে চলছেন এলিয়াছ। কোথায় প্রতিবেদন তা-ও বলছেন না এলিয়াছ।
জানা যায়, অভিযুক্ত ফাত্তাহর কক্ষেই আংশিক তদন্ত প্রতিবেদন লেখা হয়। পরে পুরোটাই গায়েব করে দেন। ফাত্তাহ প্রকৃত দোষী হওয়ায় ফাত্তাহর পক্ষে উপজেলা শিক্ষা সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে ‘সরি’ বলেছেন সাবেক মহাপরিচালক।
ফাত্তাহর বিচারের দাবিতে আবারো সোচ্চার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সমিতি। বদলির জন্য চাহিদামতো ঘুষ না পাওয়ায় নন-ক্যাডার আবদুর রহমানকে কানে ধরিয়ে ওঠ-বস করায় বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা ও অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক এ টি এম ফাত্তাহ। ১৪ আগস্ট তাকে গোপালগঞ্জে বদলি করা হলেও নতুন জায়গায় যেতে চান না বলে অভিযোগ রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, গোপালগঞ্জের রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে তদবির করাচ্ছে ফাত্তাহ। জন্মস্থান ও নিজ জেলা পার্বত্য চট্টগ্রাম। সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের সময় ওই ঠিকানাই ব্যবহার করেছেন।
গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর শিক্ষা ভবনে ফাত্তাহার কক্ষে সংঘটিত স্মরণকালের ওই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. এলিয়াছসহ অপর একজন বিতর্কিত কর্মকর্তাকে দিয়ে তৈরি করা তদন্ত কমিটি আজও প্রতিবেন জমা দেননি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার সমিতির কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত কমিটির একজন সদস্য আবদুর রহমানকে ডেকে এ মর্মে শাসিয়েছেন যে, তদন্তের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললে হাতিয়ায় বদলি করা হবে।
তদন্ত কমিটির কাছে আবদুর রহমানের লিখিত জবানবন্দী অনুযায়ী, গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর সকাল ১১ট থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে রাখা হয় আবদুর রহমানকে। এ সময়ে বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কতিপয় চৌকস কর্মকর্তা কানে ধরানোর ছবি নিজ নিজ মোবাইলে তুলে রেখেছেন। তারা বিস্কিট খেয়েছেন, নামাজ পড়ছেন, দুপুরের খাবার খেয়েছেন অথচ এই পুরো সময়টা আবদুর রহমানকে কখনো কানে ধরিয়ে আবার কখনও হাতজোর করে দাঁিড়য়ে থাকতে হয়েছে না খেয়ে। পৈশাচিক বর্বরতায় মেতে ওঠা সহকারির পরিচালক ও অন্যান্য শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা আবদুর রহমানকে এক গ্লাস পানিও পান করতে দেননি এ দীর্ঘ সময়ে।
পরে আবদুর রহমানকে শাহবাগ থানায় দেয়া হয়। সন্ধ্যায় পুলিশরা তাকে ভাত ও পানি পানের সুযোগ দিয়েছেন।
এদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমিতির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ফাত্তাহকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অপসারণ না করলে উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করবেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন অফিসার বলেছেন, ফাত্তাহর হাতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের বদলির ক্ষমতা। তাই তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারছেন না।
তবে, সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির নেতৃবন্দের সঙ্গে আলাপ করেছেন। মানবাধিকার কমিশনে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
কয়েকটি শিক্ষক সংগঠন ফাত্তাহর শাস্তির দাবিতে শিক্ষা ভবন ঘেরাও কর্মসূচি দেবেন বলে জানা গেছে।