শিক্ষা আজ বিপন্নপ্রায় - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা আজ বিপন্নপ্রায়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

পৃথিবীর ইতিহাসে প্রাচীন যুগ থেকেই বিদ্যাচর্চা ছিল একটি পবিত্র সাধনা। যেখানে বিদ্যাচর্চা হয়, সেখানে লোভ-লালসার কোনো স্থান নেই। শিক্ষা সম্পর্কে অনেক স্কলার তাদের মতবাদ দিয়ে এর তাত্পর্য বুঝিয়ে আসছেন বহুকাল আগে থেকেই। জেনেভার দার্শনিক জে. জে. রুশো বলেছিলেন, ‘উদ্ভিদ বেড়ে ওঠে তার সঠিক চাষাবাদের মাধ্যমে। আর একজন মানুষ পূর্ণ বিকশিত হয় পরিপূর্ণ শিক্ষা দ্বারা।’ অথচ বর্তমানে আমাদের দেশসহ বিশ্বের সর্বত্রই শিক্ষা একটি বিপণনযোগ্য পণ্য, যা মোটামুটি লাভ-লোকসানের বেনিয়া তাড়নায় নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। অবশ্য শিক্ষার সঙ্গে অর্থের সম্পর্ক এবং সম্পর্কের টানাপড়েন তো আছেই, এ আর নতুন কী! বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন  নুসরাত জাহান।

সেই প্রাচীন যুগ থেকেই শিক্ষার আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে বিতর্ক চলছে। সর্বপ্রথম প্রাচীন গ্রিসে শিক্ষার আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। তখন শিক্ষার লক্ষ্য নিয়ে গ্রিসে তিন ধরনের মতবাদের সন্ধান পাওয়া  গিয়েছিল। প্রথম মতবাদের প্রবক্তা ছিলেন সক্রেটিস। তার মতে, ‘শিক্ষা অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার নয়, শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য হলো জ্ঞান অর্জন।’ তারপর সফিস্ট দার্শনিক ঘরানার নেতা প্রোটাগোরাস মনে করতেন, ‘বিদ্যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ আয় বাড়িয়ে দেয়, কাজেই অর্থের বিনিময়ে শিক্ষা নেয়া ন্যায়সংগত।’ সর্বশেষ তৃতীয় মতবাদের প্রবক্তা এরিস্টিপাস মনে করতেন, ‘বিদ্যার জন্য অর্থের প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু তাই বলে বিদ্যাকে অর্থের দাসে পরিণত করা মোটেও বাঞ্ছনীয় হবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা পরিচালনার মান এখন একটা প্রাইমারি লেভেলের শিক্ষা পরিচালনার মানের থেকেও অনুন্নত। কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ নেই এবং সময়ানুবর্তিতাও এখানে মানা হয় না। বিনা মূল্যে শিক্ষাদানের নামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ ক্লাসরুমে যে ৪৫ মিনিটের লেকচার দেয়া হয়, তাতে দিন শেষে বা বছর শেষে বা শিক্ষাজীবন শেষে একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞানের ঝুলি মোটামুটি শূন্য এবং শিক্ষাজীবন শেষে চাকরির বাজারে লড়াইয়ে নামতে তাদের আবার সেই স্বরবর্ণ ১১টি এবং ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টি—এ হিসাব নিয়ে বসতে হয়।

অন্যদিকে এ শিক্ষকরাই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেশাল ক্লাস ও সন্ধ্যাকালীন বিভিন্ন কোর্স করিয়ে মেতে ওঠেন টাকার খেলায়। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ সময় ক্লাস নেয়ার জন্য শিক্ষক খুঁজে পাওয়া যায় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডিপার্টমেন্টে শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনের মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট করেন শিক্ষকের অপেক্ষায়। অথচ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েই সান্ধ্য কোর্সে এ শিক্ষকদের উপস্থিতি অ্যাটেন্ডেন্সের জন্য ছুটতে থাকা শিক্ষার্থীদের মতোই। আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ব্রেকের সময় সাধারণ ক্লাসগুলোয় শিক্ষকদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। এই অল্প সময়ে তারা সারা বছরের পড়াশোনা মোটামুটি একটা বস্তার মধ্যে ভরে নিঃশ্বাস বন্ধ করে গলাধঃকরণের শিক্ষা দেন শিক্ষার্থীদের। শিক্ষা ও শিক্ষকের টাকায় খেলায় পিষ্ট হতে হতে পার হয়ে যায় শিক্ষাজীবন।

দেশের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় রয়েছে গবেষণাগার। কিন্তু শিক্ষার্থীরা নিজেদের কাজে ব্যবহার করতে পারেন না এসব গবেষণাগার। কারণ তাদের গবেষণার জ্ঞান এতটা ত্বরান্বিত হয়নি বা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সেভাবে তৈরি করতে পারেনি। শিক্ষকরাই নিজেদের গবেষণার কাজে ব্যবহার করেন এ গবেষণাগার। কিন্তু সেই গবেষণার জ্ঞান হয়তো কখনই শিক্ষার্থীদের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে না।

যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের মঞ্চ, সেখানে বর্তমানে মনে হচ্ছে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্ককে পঙ্গু করে দিচ্ছে। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পঙ্গু মস্তিষ্কের শিক্ষার্থীর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়াকে ঘোষণা করা হচ্ছে শিক্ষার হার বৃদ্ধি বলে। এভাবে আর কতদিন? জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষার এই বিপন্ন অবস্থা নিয়ে একটি রাষ্ট্র আর কতদিন চলবে?

 

লেখক: শিক্ষার্থী, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047481060028076