শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকার অনিয়মই যেনো নিয়ম! - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকার অনিয়মই যেনো নিয়ম!

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রুমি আক্তার পলি |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রুমি আক্তার পলি: টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এমপিওভুক্তির নামে মোটা অঙ্কের টাকা নেয়া, স্কুলে নিয়োগ বাণিজ্য, বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে নানা উপহার নেওয়ার অভিযোগ, শিক্ষক ভাড়া করে অফিসে নৈরাজ্য সৃষ্টি, সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন এ কর্মকর্তা।

তা ছাড়া এসব দুর্নীতিতে এই শিক্ষা কর্মকর্তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেন একই অফিসে দীর্ঘদিন ধরে চাকরিরত গবেষণা কর্মকর্তা বায়েজিদ হোসেন এবং অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিত খন্দকার দেলোয়ার হোসেন। সেপিসের গবেষণা কর্মকর্তা বায়েজিদ হোসেন টানা ১৫ বছর এবং অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক খন্দকার দেলোয়ার হোসেন ২০ বছর ধরে এই অফিসে কর্মরত আছেন। 

এ ছাড়াও নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা অফিসের একজন কর্মচারী জানান, টাঙ্গাইলের শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর রেবেকা সুলতানা কোনো সপ্তাহে তিন দিন আবার কোনো সপ্তাহে দুই দিন অফিস করেন। এ ছাড়া অফিসের গাড়ি নিয়ে টাঙ্গাইল জেলার বাইরে যাওয়ার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু গত এক বছর ধরে অফিসের গাড়ি নিয়েই তিনি গাজিপুর যাতায়াত করছেন। যেদিন তিনি টাঙ্গাইল অফিসে আসেন না সেদিন গাড়িও গাজিপুর থাকে। সম্প্রতি তিনি ফের গাজীপুরে বদলি হয়ে যাওয়ার জন্য তদবির শুরু করেছেন বলেও জানা গেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী জানান, শিক্ষা অফিসের গেস্ট হাউজে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার থাকার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু এই শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা গত এক বছর সপ্তাহে তিন দিন অফিস করেন এবং দুই রাত গেস্ট হাউজে থাকেন।

হবিগঞ্জে সদ্য বদলি হওয়া অ্যাকাউন্ট্যান্ট মিজানুর রহমান জানান, রেবেকা সুলতানা টাঙ্গাইলে শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর আমাকে অ্যাকাউন্টসের কোনো কাজ করতে দিতেন না। তিনি নিজে অ্যাকাউন্টসের কাজ করাতেন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক খন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে দিয়ে। এর প্রতিবাদ করায় আমাকে বদলির জন্য হুমকি দেন এবং এক পর্যায়ে আমাকে বদলি করাও হয়।

মিজানুর রহমান আরো জানান, রেবেকা সুলতানার কথা মতো কাজ না করলে তিনি তার অনুগত সখিপুরের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম, টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি জুয়েল, টাঙ্গাইল সদরের খাদিজা আবু বকর স্কুলের শিক্ষক নেতা আব্দুল হাকিমসহ আরো কয়েকজন শিক্ষকদের ভাড়া করে অফিসের কর্মচারীদের হুমকি দেন এবং মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। এই বিষয়ে গবেষণা কর্মকর্তা বায়েজিদ হোসেন সরাসরি জড়িত।

শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানার এই ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি এবং হয়রানির কারণে জেলার শিক্ষক মহলে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, টাকার বিনিময়ে সাজানো পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগে আমরা যোগ্য প্রার্থীদের হারাচ্ছি। কিছুদিন আগে অনেক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এবং পত্রিকায় দুর্নীতির কথা প্রকাশ হওয়ার পরেও এই শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা সাজানো নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া ছমির উদ্দিন পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে মোসলেম উদ্দিনকে নিয়োগ দেন। এই বিষয়ে কথা বলার জন্য দৈনিক আমাদের বার্তার এ প্রতিবেদক বেশ কয়েক দিন অফিসে গিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানাকে পাননি। 

কখন পাওয়া যাবে ফোনে জানতে চাইলে শিক্ষা কর্মকর্তা ‘ক্ষেপে’ যান এবং অনেক উচ্চবাচ্য করেন। যা বলার ফোনেই বলতে বলেন।  

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা সবকিছু অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এই অভিযোগগুলো মিথ্যা, আপত্তিকর এবং মানহানিকর। শিক্ষা অফিসের গেস্ট হাউজে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার থাকার কোনো নিয়ম আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে থাকার নিয়ম আছে। 

কিন্তু গত এক বছর ধরে সপ্তাহে গেস্ট হাউজে থাকছেন তাহলে এইটা কি নিয়ম আছে কি না? জবাবে তিনি বলেন, আমি কোথায় থাকবো বলেন?

প্রতি সপ্তাহে গেস্ট হাউজে থাকাটাকে কি মাঝেমধ্যে বলা যায় কি না জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে উনার আত্মীয় স্বজনের হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আপনি যা লেখার লেখেন। আমি ভয় পাই না। এগুলো অনিয়মে পড়ে না। আপনি আমার পেছনে গোয়েন্দাগিরি করছেন? আমারও আত্মীয় স্বজন আছে। আমিও দেখে নেবো আপনাকে।’ এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

জানা গেছে, টাঙ্গাইল জেলায় আসার আগে এই শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা গাজিপুরে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। সেখানে অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য তার বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল করা হয়েছিলো। এখন সেই গাজীপুরে ফেরার জন্য তিনি অনেক জায়গায় ধরনা দিচ্ছেন।

 

তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে নতুন নির্দেশনা জাল সনদেই সরকারকে হাইকোর্ট, নয় শিক্ষক অবশেষে ধরা - dainik shiksha জাল সনদেই সরকারকে হাইকোর্ট, নয় শিক্ষক অবশেষে ধরা মা*রা গেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি - dainik shiksha মা*রা গেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ইরানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন মোখবার - dainik shiksha ইরানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন মোখবার এমপিওভুক্ত হচ্ছেন ৩ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন ৩ হাজার শিক্ষক কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004986047744751