বিলুপ্ত হয়েছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কমিটি। আর বিলুপ্ত সমিতি ও শিক্ষাবিদ ইনস্টিটিউটের ফান্ড লুটপাটের অভিযোগ করেছেন শিক্ষা ক্যাডারের অপেক্ষাকৃত তরুণ কর্মকর্তারা।
জানা যায়, ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ১ জুন সরাসরি ভোটে সমিতির ১২৩ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ২ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়। সভাপতি আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার ও মহাসচিব মো. শাহেদুল খবির চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করে ওই বছরের ১৪ জুন। সে হিসেবে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের জুলাই মাসে এবং নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি আজও। বরং সমিতির গঠনতন্ত্রে উল্রেখিত বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে যে বিধান অনুসরণের সুযোগ ছিলো তাও নষ্ট করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। আবার মহাসচিবসহ কয়েকজন নেতার কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি পদত্যাগ করেন।
একাধিক তরুণ কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাকে জানান, নির্বাচিত হওয়ার পরপরই সভাপতিকে পাস কাটিয়ে যাবতীয় কাজ কুক্ষিগত করেন মহাসচিব ও বাড়ৈ গং। সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠানো এবং সভাপতিকে না জানিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন করা হয় ক্যাডারসংশ্লিষ্ট বিষয়ে।
অধিদপ্তরে কর্মরত একজন সহকারি অধ্যাপক বলেন, সমিতির মহাসচিব গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অথচ আজও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জানতে পারলাম না। তোপখানা রোডের শিক্ষাবিদ ইনস্টিটিউট থাকতে মহাসচিব কেন সাত তারকা হোটেলে সমিতির সভা করতে গেলেন? কেন গুলি খেলেন? তা জানতে চায় তরুণরা।
তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ বিরাজ করলেও সমিতিকে বিলুপ্ত করে ব্যাংকে গচ্ছিত সমিতির টাকা ও শিক্ষাবিদ ইনস্টিটিউটের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি ভাগবাটোয়ারা করার ফন্দি করেছেন সমিতির কতিপয় বিতর্কিত ও সাবেক নেতা। ইতিমধ্যে অবৈধভাবে শিক্ষাবিদ ইনস্টিটিউটের যাবতীয় কাজ দেখভাল শুরু ও গাড়ীগুলো ব্যবহার করছেন একজন সাবেক বিতর্কিত নেতা। সমিতির অধিকাংশ তরুণ সদস্যরা জানেন না শিক্ষাবিদ ইনস্টিটিউট কিভাবে পরিচালিত হয়। সমিতির ফান্ড আর ইনস্টিটিউটের ফান্ডে কত টাকা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদকাল সম্পর্কে গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ হতে দুই বছর। বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে ২ মাস করে দুই দফায় সর্বোচ্চ ৪ মাস নির্বাচন পেছানোর সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় কমিটি নিতে পারবে। সর্বোচ্চ ৪ মাস উত্তীর্ণ হলে কেন্দ্রীয় কমিটি আপনা আপনি বিলুপ্ত হবে। পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে সভাপতি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আহ্বান করবেন এবং সে সভায় সর্বোচ্চ ২০ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করবেন। আহ্বায়ক কমিটি সর্বোচ্চ ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। তবে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের তারিখ হতে সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করবে। এর অন্যথায় সাধারণ সভা আহ্বান করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে সাধারণ সভা করা না গেলে জরুরি সাধারণ সভা আহ্বান করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
জানতে চাইলে সর্বশেষ নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম-কমিশনার ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক খান হাবিবুর রহমান শনিবার দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, সভাপতি চাইলে নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিতে পারেন। কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে দিতে পারে।
বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার শনিবার (১৭ নভেম্বর) দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’
বিলুপ্ত কমিটির প্রশিক্ষণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগকারী ঢাকা কলেজের ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: কুদ্দুস সিকদারের মতে, সমিতি বিলুপ্ত বলা যাবে না বরং সমিতিতে সাংগঠনিক শূন্যতা বিরাজ করছে, হতাশা নেমে এসেছে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, এমন ঘটনা সমিতির ইতিহাসে হয়নি। তাই দেখি কি হয়।