শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়াতে হবে - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়াতে হবে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশের অর্থনীতি এই মুহূর্তে প্রকৃত অর্থেই উন্নয়ন অগ্রযাত্রার এক বিশেষ পর্যায়ে রয়েছে। একদিকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গঠন, দুই দশকের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে রূপান্তরের মতো জাতীয় সামষ্টিক অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের তোড়জোড় চলছে, অন্যদিকে এক দশকের সামান্য বেশি সময়ের মধ্যে বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নেও সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু মাথাপিছু আয় কিংবা প্রবৃদ্ধির চমকপ্রদ উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে একটি বিষয় আমাদের অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে যে প্রবৃদ্ধির এই আশাজাগানিয়া উন্নতির সুফল যদি আমরা দীর্ঘ মেয়াদে পেতে চাই, তবে আমাদের সুদূরপ্রসারী ভাবনা, পরিকল্পনা, পদক্ষেপ ও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ হতে হবে শিক্ষা খাতে। এ কথা স্বীকার করেই আমাদের এগোতে হবে যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চলমান যুগে যে পরিমাণ দক্ষ ও সৃজনশীল জনবল প্রয়োজন, তা আমরা এখনো গড়ে তুলতে পারিনি। অথচ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে এমন মানবসম্পদ সৃষ্টি করা, যারা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনে নিজ নিজ দেশের জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারবে। কারণ, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাসমূহ একে অপরের সঙ্গে এমনভাবে সংযুক্ত যে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত, দক্ষ, কর্মঠ, প্রগতিশীল ও উদ্ভাবনী চেতনার মানবসম্পদ দ্বারাই এ লক্ষ্যগুলো অর্জন করা সম্ভব।

এ প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনে শিক্ষা খাতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ ও নীতি প্রণয়ন এবং বিশেষ করে জাতীয় বাজেটে এর প্রতিফলন নিয়ে পর্যালোচনা ও পরিকল্পনা করা একটি সময়োপযোগী অপরিহার্য উদ্যোগ। আমরা যদি প্রতি অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখা যায় যে বাজেটে শিক্ষা খাতের সঙ্গে সব সময়ই প্রযুক্তি বাজেট সংযুক্ত থাকে। অথচ সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে শিক্ষা খাতের বাজেট ও তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা উচিত। উদাহরণ হিসেবে যদি এ বছরের বাজেটেও দেখি, শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তিকে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ফলে কার্যত শিক্ষা খাতের প্রকৃত বাজেট পরিকল্পনাটি অস্পষ্ট রয়ে গেছে। এবারের শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বাজেট বরাদ্দ ১৫ দশমিক ২ শতাংশ দেখালেও মূলত শিক্ষা খাতের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১১.৭ শতাংশ। জিডিপির শতাংশ হারেও শিক্ষা খাতের বাজেট বরাদ্দ স্থবির রয়েছে। শিক্ষা খাতের বাজেট বরাদ্দ এ বছরেও জিডিপির ২ দশমিক ১০ শতাংশ। অথচ ইউনেসকো এডুকেশন ফ্রেমওয়ার্কে (বাংলাদেশ এর অনুস্বাক্ষরকারী ও সমর্থনকারী দেশ) একটি দেশের জিডিপির ৪-৬ শতাংশ ও মোট বাজেটের ১৫-২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতেও উল্লেখ আছে জিডিপির অন্তত ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখার। অথচ প্রতিবছরই শিক্ষা খাতের এই আর্থিক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অথচ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র পাকিস্তান ও আফগানিস্তান ছাড়া অন্য সব দেশ শিক্ষা খাতে জিডিপির শতাংশ হারে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ব্যয় করে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা শিক্ষা খাতে যথাক্রমে জিডিপির ৩ দশমিক ৮, ৩ দশমিক ৭ ও ৩ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যয় করে, ভুটানের শিক্ষা খাতে ব্যয় জিডিপির ৬ শতাংশ।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এসডিজি ৪–এর একটি অংশ যেমন কার্যকরী বাজেট প্রদান, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, তেমনি এসডিজি ৪–এর অধীন যে লক্ষ্যমাত্রাগুলো রয়েছে, সেখানে দীর্ঘ মেয়াদে একটি দেশের উন্নয়ন পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা অর্জনে সমতা, সহনশীলতা ও নায্যতাকে ভিত্তি করে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অবয়বে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে। এ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে বর্তমান কাঠামোতে যে তিন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে (বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি মাধ্যম ও মাদ্রাসা), তা একীভূত করে একটি বৈষম্যহীন, মানসম্পন্ন, সমন্বিত শিক্ষাকাঠামো তৈরি করা জরুরি।

এ ছাড়া সামগ্রিক শিক্ষা খাতের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেমন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার বৃদ্ধি ও ঝরে পড়ার হার কমাতে উপবৃত্তির পাশাপাশি স্কুল ফিডিং কার্যক্রম চালু করা এবং স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের অংশ হিসেবে যেসব খাবার শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়, সেসবের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত মনিটরিং প্রয়োজন, যা কেন্দ্রীয়ভাবেই তত্ত্বাবধান করতে হবে বা তত্ত্বাবধায়নের একটি কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। 

শিক্ষার মান উন্নয়নে পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষার উপকরণ সরবরাহ, শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আইসিটি রিসোর্স সরবরাহ ইত্যাদি কার্যক্রম চলমান। এ কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত হবে। বিশেষ করে বেসরকারি স্কুলগুলোর মান উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ উভয় পর্যায়ে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। এর পাশাপাশি শহরাঞ্চলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে যে গুণগত ব্যবধান, যার জন্য শিক্ষার্থীদের আগ্রহেরও তারতম্য হয়; সেই ব্যবধানের কারণ উদ্​ঘাটন করে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি পরমতসহিষ্ণু, উদার ও প্রগতিশীল মানসিকতা এবং দেশাত্মবোধ সৃজনের লক্ষ্যে পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি বিভিন্ন পাঠ্যক্রমবহির্ভূত পাঠাভ্যাস তৈরি করতে হবে। সেই লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সমৃদ্ধ পাঠাগার স্থাপন করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে গান, নাচ, আবৃত্তি, অভিনয়, বিতর্ক, কুইজ, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের আদান–প্রদাননির্ভর শিক্ষাসফর ইত্যাদি সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পাঠ্যক্রমের মতোই সমান গুরুত্বের সঙ্গে চর্চা করা প্রয়োজন। 

শিক্ষা খাতে বৈষম্য দূরীকরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল থেকে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী ও দুস্থ শিক্ষকদের জন্য বিভিন্ন বৃত্তি, উপবৃত্তি, অনুদান অব্যাহত রাখতে হবে এবং এর পরিসর আরও বিস্তৃত করতে হবে। ইদানীং পিইসি ও জেএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষা চালু হওয়ায় সামগ্রিক পাঠ কার্যক্রমটি পরীক্ষাভিত্তিক হয়ে গেছে। এর বদলে আগের মতো একটি আর্থিক প্রণোদনা ও মেধা–উৎসাহমূলক বৃত্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা যায় কি না, তা নীতিনির্ধারকেরা ভেবে দেখতে পারেন। 

মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য আলাদা একাডেমি (যেমন প্রয়াস) স্থাপনের পাশাপাশি বিদ্যমান কাঠামোতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শারীরিকভাবে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার শিকার শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকূল অবকাঠামো (যেমন লিফট, র​্যাম্প, ব্রেইল, হিয়ারিং এইড ইত্যাদি) ও সহানুভূতিশীল শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার মাঠ, স্যানিটেশন, সুপেয় পানি ও সার্বিক পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। নারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের অনুকূল সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করা ও তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। 

শিক্ষা খাতের সবচেয়ে অমনোযোগিতার ক্ষেত্রটি বোধ করি উচ্চশিক্ষা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন তাত্ত্বিক গবেষণা, জরিপ ও বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে সামষ্টিক অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন এবং এসডিজি বাস্তবায়নে উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষা খাতে রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ইউনেসকোর গবেষণায় দেখা গেছে যে আফ্রিকার দেশগুলোতে গড় উচ্চশিক্ষা এক বছর বাড়ানো সম্ভব হলে এ অঞ্চলের জিডিপি ০.৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেত। তবে এ ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের অবশ্যই কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকতে হবে।

বাংলাদেশের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ কিংবা সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উচ্চশিক্ষার ওপর জোর দিয়ে বিভিন্ন ইতিবাচক প্রস্তাব রাখা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন সেই অর্থে ঘটেনি। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে শ্রমবাজারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তত ৪৬ শতাংশ চাকরি পাওয়ার জন্য তিন বছর অপেক্ষা করে। অথচ অন্যদিকে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ জনবলের অভাব মেটাতে চার লাখ বিদেশি নাগরিককে নিযুক্ত করেছে এবং এ বাবদ প্রতিবছর দেশ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে দেশের বাজারের চাহিদা অনুসারে বাংলাদেশের তরুণদের প্রশিক্ষিত করা সম্ভব হচ্ছে না। আর ফলস্বরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতি, হুমকির মুখে পড়ছে এসডিজিসহ জাতীয় সামষ্টিক অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন। 

এসডিজি ৪–এ টেকসই উন্নয়ন প্রাপ্তির জন্য শিক্ষা খাতকেন্দ্রিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যগুলো নিয়ে যে আলোচনা করা হয়েছে, সেখানে উচ্চশিক্ষার প্রসঙ্গ এসেছে লক্ষ্যমাত্রা ৪.৩–এ। এতে ২০৩০ সালের মধ্যে সব নারী ও পুরুষের জন্য সুলভে মানসম্মত প্রযুক্তি, কারিগরি ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের উচ্চশিক্ষা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষার বিষয়টি অন্যান্য লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক। যেমন এসডিজি ১–এ দারিদ্র্য দূরীকরণ, এসডিজি ৩–এ স্বাস্থ্য ও উন্নত জীবন নিশ্চিতকরণ, এসডিজি ৫–এ জেন্ডার–সমতা নিশ্চিতকরণ, এসডিজি ৮–এ পেশাগত উৎকর্ষ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, এসডিজি ১২–তে দায়িত্বশীল ভোগ ও উৎপাদন, এসডিজি ১৩–তে জলবায়ু পরিবর্তন, এসডিজি ১৬–তে শান্তি, ন্যায় এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালীকরণ; এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও উচ্চশিক্ষার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা এবং উচ্চশিক্ষা খাতের উন্নয়নের বিষয়টি জড়িত।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে স্বকীয় ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আসবে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব, যারা তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা, মেধা ও দক্ষতা দিয়ে টেকসই উন্নয়ন অর্জনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে এবং বিবিধ স্বতন্ত্র উপায়ে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে। একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পর্যায়ের জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে, আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রয়োজনীয় নীতি, কৌশল, কার্যকর পদক্ষেপ এবং টেকসই উন্নয়নের গতি–প্রকৃতি নির্ধারণ ইত্যাদি সম্পর্কে নির্দেশনা পাওয়া যাবে। বস্তুত, বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির সূতিকাগার হিসেবে কাজ করবে, যেখানে লব্ধ জ্ঞান ও অর্জিত দক্ষতা দ্বারা তরুণ নাগরিকেরা দেশের যুগপৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নকে স্থায়ী উৎকর্ষ প্রদান করবে এবং টেকসই উন্নয়ন অর্জনে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে। অথচ বাস্তব চিত্রটি হলো, প্রতি অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বাজেট বরাদ্দদানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন খাতে কতটা প্রয়োজন, তা বিবেচনা না করে একটি গতানুগতিক হারে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য প্রদত্ত এই বার্ষিক সরকারি বরাদ্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান ও কাঠামোগত ঐতিহ্য বজায় রাখা এবং ক্রমাগত উন্নতি করার জন্য যথেষ্ট নয়। যদিও গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ করা বাজেটের পরিমাণ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে এবং এই বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ক্রমধারা বজায় রেখেছে কিন্তু সেটিও প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত সামান্য। কিন্তু আমরা যদি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে মানবসম্পদের বিনিয়োগ ও ফলাফল পেতে চাই, তাহলে উচ্চশিক্ষা বাজেটকে পৃথকভাবে গুরুত্ব দিতে হবে, গবেষণা খাতে বাজেট বরাদ্দ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং সেই সঙ্গে সব পর্যায়ে শিক্ষার সংখ্যাবাচক সাফল্যের সঙ্গে গুণগত মানও নিশ্চিত করার জন্য টেকসই পদক্ষেপ নিতে হবে। সেই সঙ্গে শুধু সনদভিত্তিক শিক্ষাই নয়, কর্মদক্ষ মানবশক্তি সৃষ্টিতেও মনোযোগী হতে হবে। সেই লক্ষ্যে উচ্চশিক্ষা পাঠ্যক্রমকে এমনভাবে রূপায়ণ করতে হবে যেন জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রায়োগিক শিক্ষাও সম্পন্ন হয়। স্নাতক সম্পন্ন করার পর কর্মক্ষেত্রে তারা যেন সত্যিকারের অবদান রাখতে পারে। অন্যদিকে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির জন্য কারিগরি ও প্রযুক্তিশিক্ষাকে আরও সহজলভ্য, প্রণোদনাভিত্তিক, উন্নত প্রশিক্ষণভিত্তিক ও অর্থনৈতিক উপযোগিতাকেন্দ্রিক করে তুলতে হবে এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার উন্নয়নসংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে ইতিবাচক সহায়তা প্রদান করতে হবে। 

ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ : অধ্যাপক, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; পরিচালক, সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032289028167725