ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার বিচারের দাবিতে আজ সোমবার সারাদেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট পালন করবে প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
গত ২৩ জানুয়ারি ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো ঢাবি উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে গেলে তুলকালাম হয়। সকালে বামপন্থিরা উপাচার্য কার্যালয়ের দুটি গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাকে অবরোধ করে। বিকেলে উপাচার্য বের হওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এগিয়ে এসে উপাচার্যকে ‘উদ্ধার’ করে। একপর্যায়ে দু’পক্ষে মারামারি হয়। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বেধড়ক পিটুনি দেয় কার্যালয় ঘেরাওয়ে আসা বিক্ষোভকারীদের। এ ঘটনার পরদিন থেকে ‘সচেতন শিক্ষার্থী’দের ব্যানারে ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন শুরু করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ‘যৌন নিপীড়নকারী ছাত্রলীগ নেতাদের’ বিচারসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
এ দাবিতে গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করে এই দুই সংগঠন। গতকাল পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। একই দাবিতে সকালে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় থেকে শুরু হয়ে ঢাকা ক্লাবের সামনে দিয়ে রমনা পার্কের গেটে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে ছাত্রদল।
বিক্ষোভ-পরবর্তী সমাবেশে পাঁচ দফা দাবি পেশ করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। এগুলো হলো- গত মঙ্গলবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার, অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার বিচার, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, আহতদের চিকিৎসা ব্যয় প্রশাসনকে বহন এবং অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট নিরসন।
এ সময় বক্তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের যে কোনো বিষয় নিয়ে আন্দোলন করা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনকে দিয়ে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করা প্রচণ্ড অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী। প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক ইমরান হাবিব রুম্মন, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জি এম জিলানী শুভ, সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স, ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজিরসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রদলের বিক্ষোভ : আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ‘ছাত্রলীগের হামলা, ছাত্রীদের শ্নীলতাহানি এবং ছাত্রলীগের মিথ্যাচারের’ বিচার ও নিপীড়নবিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার চেয়েছে ছাত্রদল। মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, অন্যথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার সিদ্দিকী, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি তানভীর রেজা রুবেল, সহ-সভাপতি সাজিদ হাসান বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আবু তাহের, যুগ্ম সম্পাদক এম এম মহিন উদ্দিন রাজু, ইকবাল হোসেন শ্যামল, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সহ-সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সোহেল, জহিরুল ইসলাম পাটোয়ারী দীপু প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রদলের পূর্বঘোষিত কর্মসূচিকে প্রতিরোধ করতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রবেশমুখে অবস্থান নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। জানতে চাইলে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স বলেন, আজ তাদের (ছাত্রদল) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ছিল। তারা যাতে এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা করতে না পারে, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে ছিল।