শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দরকার যোগ্য প্রধান - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দরকার যোগ্য প্রধান

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রতিষ্ঠানপ্রধানের চিন্তা-চেতনা, দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মদক্ষতারই প্রকাশ ঘটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি বাগানের মতো। সেই বাগানে শিশু চারাগুলির যত্ন পরিচর্যা করে ফুল ফোটানোর ক্ষেত্রে মূল ভূমিকায় থেকে মালির দায়িত্ব পালন করতে হয় প্রতিষ্ঠান প্রধানকে। প্রতিষ্ঠান প্রধান যদি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ভালো পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান, তাহলে সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে তিনি একটি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন। কিন্তু প্রধান না চাইলে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ও অনুকূল পরিবেশ থাকলেও প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে না। তাই প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে যে যোগ্যতাগুলো থাকা দরকার তা বিবেচনা না করে রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক ভাবে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ দেয়া অনেক বেশি ক্ষতিকর। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সার্কুলার হচ্ছে—‘ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ পদে শুধু ঐ কলেজের উপাধ্যক্ষ এবং অন্য কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষগণ আবেদন করতে পারবেন।’ এ সিদ্ধান্ত যৌক্তিক মনে হয় না। অধ্যক্ষ উপাধ্যক্ষ হয়তো প্রশাসনিক কাজগুলো সম্পর্কে অবগত থাকেন, সেজন্যই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনিক কাজ তথা ছাত্র ভর্তি, ফরম পূরণ, পরীক্ষা গ্রহণ, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ ছাড়াও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ থাকে। যেমন ক্লাস পরিচালনা, সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম, লাইব্রেরি সচল রাখা, ক্যাম্পাসে সামগ্রিক পরিবেশ ঠিক রাখা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বপ্ন জাগিয়ে তোলা, অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করা, শিক্ষকদের মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা ও উদ্বুদ্ধ করা সর্বোপরি যোগ্য নেতৃত্বদান ও সৃষ্টিশীলতা। এ কাজগুলো একজন প্রতিষ্ঠান প্রধান তখনই আন্তরিকভাবে করেন, যখন জীবন জগৎ ও তাঁর পেশা নিয়ে থাকে একটা ইতিবাচক ও মহৎ দর্শন এবং দেশ-জাতির প্রতি তাঁর আন্তরিক দায়বদ্ধতা। এই যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে একটা মহত্ স্বপ্ন ও আন্তরিক দায়বদ্ধতা এবং দক্ষতা তা একজন সহকারী শিক্ষক বা প্রভাষকেরও থাকতে পারে। কাজেই একটি সার্কুলার দিয়ে তাঁদের সেই সম্ভাবনা ও সুযোগের রাস্তাটা বন্ধ করে দেয়া ঠিক হবে না।

সরকার কিন্তু কম দিচ্ছেন না শিক্ষার জন্য। কোটি কোটি টাকার অত্যাধুনিক বিল্ডিং, সন্তোষজনক বেতন, কম্পিউটার ল্যাব, প্রজেক্টর, বিনামূল্যে বই, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, উপবৃত্তি সর্বোপরি জাতীয়করণ। সে তুলনায় শিক্ষা কি এগিয়েছে? এসব বিল্ডিং ও কম্পিউটার ল্যাব প্রজেক্টর বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে রক্ষণাবেক্ষণ ও যথাযথ ব্যবহার হয় না এবং আরো হতাশার বিষয় যে, অনেক প্রতিষ্ঠানে দেখা গেছে কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠার পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে তা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। দেখেও বোঝার উপায় নেই যে, কোনো কালে সেখানে কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা হয়েছিল! প্রতিষ্ঠানের এসব বিষয় দেখভাল তথা মনিটরিংয়ের দায়িত্ব মূলত প্রতিষ্ঠান প্রধানের, কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠান প্রধানের যদি সেই দায়বদ্ধতা না থাকে তাহলে তো সমস্যা।

জঙ্গি, মাদক এবং সন্ত্রাস মুক্ত জাতি বিনির্মাণে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রীড়া ও সাহিত্য সাংস্কৃতিক চর্চা অপরিহার্য। এসব বিষয় নিয়ে সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক এবং বাত্সরিক ব্যাপক আয়োজন হওয়া উচিত। কিন্তু প্রতিষ্ঠান প্রধানের জীবনে মননে এসবের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকলে তিনি এসব বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন না। যে কারণে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়গুলো থেকে যাচ্ছে চরম উপেক্ষিত।

দেশের অন্যান্য এলাকার কথা জানি না, কিন্তু উত্তরবঙ্গে প্রতিষ্ঠান প্রধানের এ পদগুলো রীতিমত বিক্রি হচ্ছে অঢেল টাকায়। আদেশ এবং আইন দিয়ে সব হয় না। একজন প্রতিষ্ঠান প্রধানের থাকতে হবে সৃষ্টিশীল মানসিকতা এবং আন্তরিক তৎপরতা। এ কারণে গতানুগতিক প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ না দিয়ে উপর্যুক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে এনটিআরসিএ-র মাধ্যমে হোক বা অন্য কোনো ভাবেই হোক সার্বিক বিবেচনায় যোগ্যদের বাছাই করতে হবে। ফুল কিন্তু মাঠেঘাটে ফুটবে না, ফুটবে না হাটে-বাজারে, স্টেশন-টার্মিনালে। ফুল ফোটাতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই। সেই ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে যাবে সমাজের সর্বত্র। আর এই ফুল ফোটাতে চাই যোগ্য দক্ষ মালি অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান প্রধান।

লেখক : প্রশান্ত কুমার বসাক, ঠাকুরগাঁও।

আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি - dainik shiksha আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি - dainik shiksha ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065970420837402