শিক্ষা প্রশাসনে গতি নেই : শিক্ষা পরিস্থিতি - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা প্রশাসনে গতি নেই : শিক্ষা পরিস্থিতি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নতুন সরকারের প্রথম আট মাসে স্থবিরতা নেমে এসেছে শিক্ষা প্রশাসনে। নেই সৃজনশীল কোনো উদ্যোগ। কর্মকাণ্ড আটকে আছে বদলি, পদায়ন ও তদবিরের বৃত্তে। চলছে শুধু রুটিন কাজ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কাজের ‘ওঠানামা’ থাকতেই পারে। কিন্তু শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই স্থবিরতার পেছনে রয়েছে উদ্যোগের অভাব। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য।

শিক্ষা প্রশাসনে যে গতি নেই, তা স্বীকার করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেছেন, শিক্ষা প্রশাসনে বর্তমানে স্থবিরতা আছে। বিশেষ করে যে কাজগুলো হওয়া দরকার তা করা যাচ্ছে না। সব খেয়ে নিচ্ছে বদলি, পদায়ন ও অনুরোধ। বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে তদবিরের পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যা যোগ্যতার ভিত্তিতে হয় কিনা তা চিন্তা-ভাবনা করা দরকার। শিক্ষার মাঠপর্যায়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা রয়েছেন। অত্যন্ত দুর্বলভাবে এদের মনিটরিং করা হচ্ছে। এতে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এর বাইরেও কতগুলো বিষয় আছে, যেগুলো ঠিকঠাক না হলে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না।

স্বামীর চিকিৎসাসেবা নিয়ে বিদেশে থাকায় শিক্ষা প্রশাসনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তাও কথা বলতে চাননি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুকের কাছে জানতে চাইলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, শিক্ষা প্রশাসনে কোথায় কাজ হচ্ছে না বলুন তো? শিক্ষায় এখন বহু কাজ হচ্ছে। কী কী কাজ হচ্ছে- নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিড ডে মিল নিয়ে কাজ চলমান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৭ আগস্ট শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী অবসরে গিয়েছেন। কিন্তু এক মাস পার হলেও নতুন কাউকে প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগ দেয়া হয়নি। ভারপ্রাপ্তকে দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা শাখার পরিচালকের পদ শূন্য গত এক মাস ধরে। পদায়নের খবর নেই। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে বাকি কাজ শেষ করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত জানুয়ারিতে শিক্ষায় নতুন দুজন মন্ত্রী দায়িত্ব পেলেও অফিসে তারা খুব কম বসেন। দুজনই আওয়ামী লীগের বড় নেতা হওয়ায় দলীয় কার্যক্রমে বেশি সময় দিতে হয়। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়ার কারণে তারা চাইলেও বেশিরভাগ সময় অফিসে বসতে পারেন না। এ কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মন্ত্রণালয়ে এসে কেউ মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সেবা নিতে চাইলে অনেক সময় তা সম্ভব হয় না। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রীকে অফিসে বসেই কাজ করতে হবে- এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। মন্ত্রী যেখানে অফিস সেখানে। আর এভাবেই গত আট মাসে বেশ কিছু নথির নিষ্পত্তি হয়েছে। অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা নথি নিয়ে মন্ত্রী যেখানে আছেন সেখানেই গেছেন। মন্ত্রী সেখানেই নথিতে সই দিয়ে নিষ্পত্তি করেছেন। এতে হয়তো রুটিন কাজের নথি নিষ্পত্তি হচ্ছে, কিন্তু মন্ত্রী প্রতিদিন অফিস না করায় মন্ত্রণালয়ে নতুন কোনো ‘কাজ’ গতি পাচ্ছে না।

শিক্ষা প্রশাসনে স্থবিরতার মধ্যেই নতুন উপসর্গ হিসেবে দেখা দিয়েছে দক্ষ কর্মকর্তার অভাব। অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট আইন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখেন না। অন্যদিকে বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতাও রয়েছে। এতে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। কিন্তু মন্ত্রীরা নিয়মিত অফিস করলে এই সমন্বয়হীনতা দূর করা যেত বলে কর্মকর্তারা মনে করেন।

শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে সাধারণত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদেরই পদায়ন করা হয়। কিন্তু বর্তমানে বেশিরভাগ উচ্চপদেই জুনিয়ররা পদায়ন পেয়েছেন। এ ছাড়া যারা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় আছেন তাদেরই ঘুরে-ফিরে ভালো পদে পদায়ন করা হয়েছে। এতে সিনিয়র সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ চরম আকার ধারণ করেছে। সিনিয়র সদস্যদের জুনিয়র কর্মকর্তার কাছে এসিআরের জন্য ধরনা দিতে হচ্ছে, যা অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। এর মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারে দুভাগ হয়ে গেছে। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে ঠিকঠাক লোক পদায়ন না হওয়ায় এসব দপ্তর থেকেও সাফল্য আসছে না। বহু দপ্তরে জামায়াত-বিএনপির লোককে পদায়ন করা হয়েছে। এতে ক্ষোভ বেড়েছে।

এ রকম পরিস্থিতিতে কয়েক দিন আগে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা মাউশি মহাপরিচালকের কক্ষে ঢুকে শিক্ষা প্রশাসনকে জামায়াত-বিএনপি মুক্ত করার তাগিদ দেন। শিক্ষা প্রশাসনে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের এমন ‘অ্যাকশন’ এর আগে ঘটেনি। এ ঘটনার প্রায় ১০ দিন পার হলেও এর রেশ এখনো শিক্ষা ভবনে রয়ে গেছে। শিক্ষা ভবনে এখন কাজ বাদ দিয়ে কে ওই দিন ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মাউশি মহাপরিচালকের কক্ষে ঢুকিয়েছিলেন তার তালিকা করছেন কয়েকজন কর্মকর্তা। এ খবর আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তার কাছে যাওয়ার পর তারা তাদের কক্ষে বসে এর প্রতিবাদে বিষোদগার করছেন। গত কয়েক দিন মাউশিতে ঘুরে দেখা গেছে, কাজ বাদ দিয়ে একজন কর্মকর্তা আরেকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওই ঘটনাকে নিয়ে বিষোদগারে ব্যস্ত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই। শুধু জানি মাউশিতেও বহু কাজ হচ্ছে।

ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0061721801757812