শিক্ষা বাজেটে নতুন চ্যালেঞ্জ - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা বাজেটে নতুন চ্যালেঞ্জ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

গত ১০ বছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়লেও বাজেটের তুলনায় কমেছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের বরাদ্দ বেড়ে যাওয়ায় বাজেটের আনুষ্ঠানিক হিসাবে এখনো শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেখানো হচ্ছে। বাস্তবে শুধু শিক্ষা খাতে এখন আর সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয় না। মঙ্গলবার (৯ জুন) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন জাহাঙ্গীর শাহ।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, করোনার প্রেক্ষাপটে শিক্ষা খাতে নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দাভাবের কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে ঝরে পড়ার প্রবণতা বাড়তে পারে। পরিবারের আয় বৃদ্ধিতে বাড়তে পারে শিশুশ্রম।

পুষ্টিহীনতা আরও প্রকট হতে পারে। আগামী বাজেটে এসব খাতে চলমান কর্মসূচিগুলোতে খুব বেশি বরাদ্দ বাড়ছে না। এ ছাড়া গ্রাম-শহরনির্বিশেষে ডিজিটাল পাঠদান পদ্ধতির জন্য আলাদা কোনো প্রকল্প নেই। ফলে একটি ধারাবাহিক ও গতানুগতিক শিক্ষা বাজেট দেয়া হচ্ছে।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) শিক্ষা ও ধর্ম খাতকে আলাদা করে দেখানো হয়। আর বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতের জন্য বরাদ্দ আলাদা থাকে। কিন্তু উন্নয়ন, অনুন্নয়নসহ মূল বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তিকে একসঙ্গে দেখানো হয়। ফলে মূল বাজেটে বরাদ্দ বেড়ে যায়। যেমন শুধু রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য যে টাকা খরচ হচ্ছে, তা শিক্ষা বাজেটকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।

শিক্ষায় প্রকল্প কমেছে

আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) শিক্ষা ও ধর্ম খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ২ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্পসংখ্যা কমেছে ১৫টি। এডিপির শিক্ষা ও ধর্ম খাতের ১২৯টি প্রকল্পে ২৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এডিপির বই বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর মধ্যে প্রায় ১০০ প্রকল্প হলো শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের মতো অবকাঠামো প্রকল্প। গবেষণায় দু-তিনটি প্রকল্প আছে। স্কুল মিল বা ফিডিং, উপবৃত্তি, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে চলমান কয়েকটি প্রকল্প আছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধি এবং হাওর এলাকায় জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ইমামদের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণ প্রকল্পও শিক্ষা খাতে ঢুকে গেছে। সরকার আগামী অর্থবছরে পাস করার জন্য এডিপিতে শিক্ষা খাতের ১০৯টি নতুন প্রকল্প রেখেছে। ওই তালিকায় অন্যবারের মতো আগামীবারও স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের প্রকল্পই বেশি।

শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এ নিয়ে বলেন, এ দেশে শিক্ষা খাতের উন্নয়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব আছে। শিক্ষা খাতে যে টাকা দেয়া হয়, তা লোপাট হয়ে যায়। পুরো শিক্ষাব্যবস্থায় সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া যে বরাদ্দ দেয়া হয়, তা খরচের সক্ষমতাও নেই। স্কুল-কলেজ ভবনের মতো অবকাঠামো নির্মাণের দিকে ঝোঁক বেশি।

বাজেটে শিক্ষার অংশ কমেছে

সব সময় শিক্ষা খাতের বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১০ বছর আগেও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বরাদ্দ শিক্ষা বাজেটকে বাড়াতে তেমন একটা প্রভাব ফেলেনি। ২০১০-১১ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ ছিল বাজেটের ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ। টাকার অঙ্কে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। ওই সময়ে বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র ৪৫০ কোটি টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ১৭ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা। বাজেটের অনুপাতে শুধু শিক্ষা খাতের বরাদ্দ ১৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। শুধু শিক্ষা খাত বিবেচনা করলেও বরাদ্দে শীর্ষে ছিল।

১০ বছরে চিত্র পাল্টে গেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্প ঢুকে গেছে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ৭৯ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা বাজেটের ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের বরাদ্দ করা ১৮ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা বাদ দিলে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ থাকে ৬১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা, যা বাজেটের ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ফলে বরাদ্দের দিক থেকে শিক্ষা খাতকে পেছনে ফেলে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত (১২ দশমিক ৪ শতাংশ) শীর্ষে উঠে গেছে।

এমন অবস্থায় আগামী অর্থবছরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের বরাদ্দ বাড়াতে সহায়তা করবে। প্রযুক্তি খাত বাদ দিলে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির ২ শতাংশের মতো। কয়েক বছর ধরেই ২ শতাংশের কাছাকাছি আছে। জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের (এসকাপ) ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের এক জরিপ অনুযায়ী, এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩৫টি দেশের মধ্যে জিডিপির তুলনায় শিক্ষা খাতে খরচে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪তম।

তাহলে করোনা সংকটে আগামী বাজেটের চ্যালেঞ্জ কী? কোথায় বরাদ্দ বৃদ্ধি করা দরকার? এই খাতের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে দিন আনে দিন খায় এবং নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের আয় বেশ কমে গেছে। সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার প্রবণতা বাড়তে পারে। পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিতে শিশুদের কাজে লাগিয়ে দেয়া হতে পারে, যা শিশুশ্রম বাড়াবে। তাই স্কুলে ধরে রাখার জন্য উপবৃত্তির পরিমাণ ও আওতা বৃদ্ধি করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। স্কুল মিল বা ফিডিংয়ের আওতা বৃদ্ধির সুপারিশও করা হয়েছে।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এ নিয়ে আরও বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। প্রাথমিক পর্যায়ে ভালো বেতন না দেয়ায় মেধাবীদের এই পেশায় আনা যাচ্ছে না। ফলে মেধাবী প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে না। গণিত, বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। তাঁর মতে, শিক্ষা বাজেটকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে। এখানে বিনিয়োগ করলে এক প্রজন্ম পরে এর সুফল পাওয়া যায়। নীতিনির্ধারকেরা কখনো এই খাতকে বিনিয়োগের অঞ্চল হিসেবে দেখেননি।

ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039210319519043