আফসার, বকুল মিয়া, আনারুল, তুহিন, মোয়াজ্জেম। এদের স্কুল কলেজের নাম, গ্রাম, সাকিন কিংবা ঠিকানা নেই। তারপরও দেয়া হয়েছে টাকা। তালিকায় বলা হয়েছে গরিব মেধাবী শিক্ষার্থী। আর এভাবেই দরিদ্র মেধাবী ৬শ’ ৩৬ জন শিক্ষার্থীর নামে দেয়া প্রায় ১৫ লাখ টাকা লুটপাট হয়েছে। এসব নামে কোনো শিক্ষার্থীকে মাঠপর্যায়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
যাদের খোঁজ মিলেছে তারা কেউ ছাত্র নয়। জেলা পরিষদের চাকরিজীবীদের ছাত্রের খাতায় নাম লিখিয়ে অর্থ লুটপাটের কাহিনীও বেরিয়ে এসেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গাইবান্ধা জেলা পরিষদ থেকে গরিব মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি খাতে ৩শ’ ৭৪ জনের নামে দেয়া হয় ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২শ’ ৬২ জনের নামে বরাদ্দ দেয়া হয় ৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা। শিক্ষাখাতে দুইবছরে এই ১৩ লাখ টাকা বিতরণ দেখানো হলেও কার্যত হয়েছে লুটপাট। যাদের নামের তালিকা দেয়া হয়েছে তার অধিকাংশই ভুয়া। আর শিক্ষার্থীর ভুয়া নাম ব্যবহার করে জেলা পরিষদের এক শ্রেণির কর্মকর্তা কর্মচারী লুটপাট করে নিয়েছে। বিশেষ করে জেলা পরিষদের ক্লার্ক ,ক্যাশিয়ার ,ইঞ্জিনিয়ার ও প্রধান নির্বাহী এসব অপকর্ম চালিয়ে বাড়তি টাকা আয় করছেন।
সাদুল্ল্যাপুর উপজেলার ভাতগ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম নাম দিয়ে ১৫ হাজার, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সোনারায় গ্রামের আফসার আলীর নাম দিয়ে ১৭ হাজার, গাইবান্ধা পৌর এলাকার বাংলাবাজার এলাকার বকুল মিয়াকে ১০ হাজার, নলডাংগা গ্রামের আবদুল গফুরের নামে ২০ হাজার, সাঘাটার ছামছুল মিয়ার নামে ২০ হাজার, উত্তর ফলিয়া গ্রামের রত্নারানীকে ১৫ হাজার, বালুয়া গ্রামের পলাশ পারভেজের নামে দেয়া হয় ২০ হাজার টাকা।
এরা কেউ ছাত্র নয়। তারপরও তাদের কোনো ঠিকানা বা প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঠিকানা যা উল্লেখ আছে তা গ্রামের কেউ চেনে না। বিশেষ করে গাইবান্ধা জেলার শিক্ষা উন্নয়নে মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের নামে যে অর্থ দেয়া হয়। অন্তত দুই বছরে শিক্ষাখাতে বরাদ্দকৃত অর্থ জেলা পরিষদের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের নামে গেলো দুই বছরে গাইবান্ধা জেলা পরিষদের চাকরিরত ডুপ্লিকেটিং মেশিন অপারেটর মারুফুল হক, লাইব্রেরিয়ান শারমিন আকতার, সার্ভেয়ার জহুরুল ইসলাম ও ইলেকট্রিশিয়ান রাশেদুল ইসলাম, গাড়িচালক রাজ কুমার রায়, মশিউর রহমান সহ ৩৫ জন কর্মচারীকেও ছাত্র দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামিয়া খাতুন, কাজী অনিক, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র সিজান মিয়া, উত্তরা ইউনিভার্সিটির ছাত্র মহিদুল ইসলামের নামের টাকা উত্তোলন করা হয়।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান সরকার জানান, শিক্ষাখাতের টাকা কাকে দেয়া হয়েছে তা আমার সময়ের আগে। তবে অভিযোগ খতিয়ে দেখে সিন্ধান্ত নেয়া হবে।