১৫ ও ২১ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাজে মন্তব্য করা পরিচালক জাহাঙ্গীরের চাকরিচ্যুতি ও শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা জামাত-শিবিরপন্থি কর্মকর্তাদেরকে বদলির দাবিতে শিক্ষা ভবনে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতা-কর্মীরা। ‘একটা একটা জামাত ধর, ধইরা ধইরা শায়েস্তা কর’ ইত্যাদি স্লোগানে প্রকম্পিত হয় শিক্ষা ভবন ক্যাম্পাস। মিছিল শুনে শিক্ষা ভবন থেকে পালিয়ে যায় কয়েকজন জামাতপন্থি কর্মকর্তা ও কর্মচারী। থরথর করে কাঁপতে থাকে তদবিরের মাধ্যমে সদ্য পদায়ন পাওয়া কয়েকজন পরিচালক ও উপ-পরিচালক। গত বৃহস্পতিবার দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে ছাত্রলীগ নেতারা জানতে চান, ১৫ ও ২১ আগস্ট হত্যাকাণ্ড নিয়ে মশকরা করা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক জাহাঙ্গীরকে কেন এখনও বরখাস্ত করা হয়নি? নেতাদের এসব প্রশ্নবানে বিদ্ধ হন মহাপরিচালকের চলতি দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক। তিনি ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে শিক্ষা ভবনের জামাতপন্থি শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের নাম জানতে চাইলে সৈয়দ মইনুল, ফারহানা, আনিছ ও আকতারুজ্জামানসহ অনেকের নাম করেন। স্বাধীনতাবিরোধী আরও যারা ঘাপটি মেরে আছেন তাদের তালিকা তৈরি করে অতিসত্ত্বর শিক্ষা ভবন থেকে অন্যত্র বদলি করার দাবি জানান নেতারা। ছাত্রলীগের দাবিসমূহ আজই শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবকে জানাবেন মহাপরিচালক। এমন আশ্বাস পেয়ে শিক্ষা ভবন ত্যাগ করেন নেতা-কর্মীরা। আজ রোববার (২৫ আগস্ট) দুপুরে শিক্ষা ভবনে অবস্থিত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে এসব ঘটনা ঘটে।
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন : শিক্ষা ভবনে ছাত্রলীগের তোপের মুখে মহাপরিচালক
ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান তারেক মহাপরিচালককে বলেন, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন বলেই আপনি মহাপরিচালক, অতএব আপনার যেসব কর্মকর্তা জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড ও ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ডকে ‘নিছক দুর্ঘটনা’ জ্ঞান করেন তাদেরকে শাস্তি দেয়ার দায়িত্বও আপনার (মহাপরিচালক)।
তিনি বলেন, ‘ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয় ১৫ আগস্ট আর শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার নিশ্চিহ্ন করতেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়। হত্যা করা হয় আইভি রহমান সহ ২৪ জনকে। কিন্তু এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘নিছক দুর্ঘটনা’ জ্ঞান করে ২১ আগস্ট সিরডাপের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন শিক্ষা অধিদপপ্তরের পরিচালক অধাপক জাহাঙ্গীর। এমন বক্তব্য শুনেই ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারা ক্ষুব্ধ হন এবং প্রতিবাদ জানাতে শিক্ষা ভবনে আসেন।’
ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক উপ সম্পাদক মশিউর রহমান সুমন মহাপরিচালককে বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী (ডা. দীপু মনি) যখন আপনাকে জিজ্ঞেস করেছেন পরিচালক (পরিকল্পনা) হিসেবে আপনার কাকে দরকার তখন আপনি কুখ্যাত জাহাঙ্গীরের নাম বলেছেন। আপনি চাইলে প্রমাণ দিতে পারি।’
ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা বলেন, ‘সরকার চালায় আওয়ামী লীগ কিন্তু শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে জামাতপন্থিরা। তারা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে প্রকল্প কৌশলে আটকে দেয়, ১৫ ও ২১ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ড নিয়ে মশকরা করে এবং শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ডের কর্মকর্তাদের দেখে নেয়ার হুমকি দেয়।’
আরও পড়ুন: খালেদার সাথে গোপন বৈঠক : সেই শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারাও শিক্ষা ভবনে
দৈনিকশিক্ষার প্রতিবেদনে জাহাঙ্গীরকে ওএসডি
মিছিল ও প্রতিবাদের নেতৃত্বে ছিলেন: ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি নাজমুল হুদা ওয়ারেছি (চঞ্চল) ও সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান তারেক। আরও ছিলেন ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা; কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ সম্পাদক মশিউর রহমান সুমন; সাবেক উপ ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক সোহেল রানা; উপপ্রচার সম্পাদক হারুনুর রশীদ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ। এছাড়া ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতারা মহাপরিচালকের কাছে জানতে চান, বৃহস্পতিবার ওএসডি ও স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে জাহাঙ্গীরকে। কিন্তু আজ রোববারও (২৫ আগস্ট) তার নেমপ্লেট কেন শিক্ষা ভবনে? আপনার পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) কোথায়? উপপরিচালক কেন আজ অফিসে নেই?
এসব প্রশ্নের উত্তরে মহাপরিচালক বলেন, ‘আমি বিষয়গুলো দেখছি।’
পরে ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হবে, মহাপরিচালকের এমন আশ্বাসে প্রায় এক ঘণ্টা পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিক্ষাভবন ত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন: