শিখন ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক - দৈনিকশিক্ষা

শিখন ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনা-পরবর্তী স্কুল খুলেছে। দেড় বছর পর স্কুল খোলায় স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীর ঘাটতি হয়েছে। এ নিয়ে অনেকেই কথা বলেছেন। সম্প্রতি একটি পত্রিকায় প্রকাশিত লেখায় কয়েকজন শিক্ষাবিদ শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণে এবং আগামীদিনের জন্য তাদের তৈরি করতে চারটি ধাপে নানা প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। তাদের ওই মতামতকে শিক্ষার্থীবান্ধব মনে হলেও সে ক্ষেত্রে দু-তিনটি জায়গায় ভিন্নমত পোষণ করি। প্রথম ধাপে তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করেছেন। ২০২০ ও ২০২১ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষ সক্রিয় না থাকায় দাতা ও গ্রহীতার যথার্থ সুসম্পর্ক গড়ে ওঠেনি বলে তারা মনে করেন এবং দুটি শিক্ষা বছর হারানোর পর শিখন ঘাটতি মাথায় বহন করে একজন শিক্ষার্থী কোন শ্রেণির জন্য প্রস্তুত হতে পারে- এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ওই শিক্ষার্থীদের মঙ্গল চিন্তায় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ২০২০ সালে প্রথম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত একজন শিক্ষার্থীকে ২০২২ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হলে ওই শিক্ষার্থী দক্ষ হয়ে গড়ে উঠবে না এবং এটা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের জন্য অবিচার বলে মনে করেছেন তারা। বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, তাতে শিক্ষার্থীদের স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মত পোষণ করেন। তারা প্রাথমিক স্তরের জন্য বাংলা ও গণিত বিষয়ে এবং মাধ্যমিক শ্রেণির জন্য বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে দক্ষতা মূল্যায়নের দ্রুত পদ্ধতি নির্ধারণ ও তা শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে প্রয়োগ করা উচিত বলে মনে করেন। দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় তারা বিষয়টিকে আরও সুস্পষ্ট করেছেন। বর্তমান শিক্ষাবর্ষকে জুন ২০২২ পর্যন্ত নির্ধারিত করে স্কুলব্যবস্থাকে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া ও শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সময় দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেছেন।

শিক্ষার্থীদের কল্যাণে তাদের ওই অভিমতকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করি। তবে অতিমারির কারণে তাদের জীবন থেকে প্রায় দুটি বছর হারিয়ে গেলেও সেই অনিশ্চয়তা শতভাগ কেটেছে, তেমনটাও ভাবা যায় না। করোনার তৃতীয় ঢেউ আর আসবে না তারও নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মৌলিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তেমনটা বিবেচনা করা হোক এবং কেবল তাদের জন্যই শিখন ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জনের জন্য দীর্ঘকাল অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। আর তা করা হলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ওপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি হতে পারে। ওই শ্রেণিগুলোর শিক্ষার্থীরা বয়সের গুণে কিছুটা পরিপকস্ফ হয়ে উঠেছে এবং অনলাইন ক্লাসের সুবাদে তারা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতেও সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া আমরা প্রকাশ্যে স্বীকার করি বা না করি, প্রচলিত রেওয়াজ ও প্রথামাফিক নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কেবল শ্রেণিকক্ষের পড়াশোনার ওপর নির্ভরশীল নয়। শ্রেণিকক্ষের বাইরেও তারা সে কাজে অনেক বেশি তৎপর থাকে, সিংহভাগ সময় ও শ্রম সেখানে দিয়ে থাকে।

করোনাকালে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষা গ্রহণের সে কাজটি যে শতভাগ বন্ধ ছিল তেমনটিও নয়। সেই বিবেচনায় এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও নবম-দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের শিখন ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার নামে দীর্ঘকাল দেরি করা সমীচীন হবে না। আবার এর আগে যেহেতু অটোপাস দেওয়ার নজির রয়েছে, সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতির লক্ষ্যে সীমিতভাবে পাঠদানের ব্যবস্থা করে সরকার ঘোষিত (নভেম্বর ও ডিসেম্বর) সময়েই তাদের (এসএসসি ও এইচএসসি) চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণ করাই সঠিক হবে। তাছাড়া এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী যাদের পরীক্ষা গত মার্চ-এপ্রিল মসে হওয়ার কথা ছিল এবং যারা এতদিনে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রায় স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষ বা এইচএসসি প্রথম বর্ষে পদার্পণ করত তাদের আরও বসিয়ে রেখে দুই বছরমেয়াদি (এসএসসি বা এইচএসসি) কোর্স শ্রেণিকক্ষে স্বল্প সময়ে পাঠদান করে শিখন ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়ার ভাবনা খুব বাস্তবসম্মত হবে না। বরং কিছু ক্ষতি মেনে নিয়েই শিক্ষা খাতের ক্ষতিপূরণে অগ্রসর হওয়াই সমীচীন হবে।

লেখক : ড. মো. মোস্তাফিজার রহমান, সাবেক অধ্যক্ষ, নওগাঁ সরকারি কলেজ। 

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0061919689178467