শিশু বক্তা রফিকুলের বিয়ে নিয়েও ঘাপলা - দৈনিকশিক্ষা

শিশু বক্তা রফিকুলের বিয়ে নিয়েও ঘাপলা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

রাষ্ট্রবিরোধী, উস্কানিমূলক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে 'শিশু' বক্তা হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গতকাল বুধবার ভোরে গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার লেটিরকান্দা থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হতে পারে। আজ তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন রফিকুলের গ্রেফতারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গত ২৫ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকালে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে রফিকুলকে আটক করেও ছেড়ে দেয় পুলিশ। বয়স ২৬ হলেও 'শিশু' বক্তা হিসেবেই পরিচিত তিনি।

গতকাল গ্রেফতারের পর তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাব। তখন 'শিশু' বক্তার বিয়ে নিয়ে অস্পষ্টতা ও ঘাপলার বিষয়টি সামনে আসে। রফিকুল দাবি করেন, ২০১৯ সালের শেষের দিকে ময়মনসিংহের ফুলপুরের রহিমগঞ্জের আছমা বেগমকে বিয়ে করেন। তবে মেয়ের পরিবার এ বিয়ে সম্পর্কে অবগত নয়। আগে বিয়ে করলেও এটিকে 'পারিবারিক-সামাজিক' রূপ দিতে মঙ্গলবার কনের বাড়িতে যান তিনি। কনের পরিবারের কাছে আছমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। যদিও কাজি ছাড়াই তারা নিজেরা আগে বিয়ে সেরে ফেলেছেন- দাবি করেন রফিকুল।

মঙ্গলবার আছমার পরিবার রফিকুলের কাছে তাদের মেয়েকে বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এর পর সেখান থেকে বেরিয়ে রফিকুল আছমাকে একটি খুদেবার্তা পাঠান। সেখানে তিনি বলেন, 'আমি দরকার হলে তোমার জন্য ১০ বছর অপেক্ষা করব। তারপরও তোমাকে সামাজিকভাবে গ্রহণ করেই সংসার করব।' রফিকুল এও জানান, আছমা তার ভাবির চাচাত বোন (বেয়াইন)। প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরেই তারা বিয়ে করেছেন।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে রফিকুল জানান, প্রতিবার ওয়াজের জন্য তিনি ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। ওয়াজ করেই মাসে ৫-৬ লাখ টাকা আয় করেন তিনি। মাঝেমধ্যে বিমান ও হেলিকপ্টারে গিয়ে ওয়াজ করেন। যারা তাকে নিমন্ত্রণ জানান, তারা এর খরচ বহন করেন।

হেফাজত নেতা মামুনুল হক কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীসহ নারায়ণগঞ্জে অবরুদ্ধ হওয়ার পর রফিকুল একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে বলেন, 'উনি কি ঘোরাঘুরির সময় তার বিয়ের কাবিননামা নিয়ে ঘোরেন?' রাষ্ট্রপতিকেও কটাক্ষ করে নানা সময় কুযুক্তি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।

এসব ব্যাপারে র‌্যাব জানতে চাইলে রফিকুলের ভাষ্য- মামুনুলের ওই ঘটনার পর জোশে ছিলেন তিনি। তার হুঁশ ছিল না। বিভিন্ন সময় অপ্রাসঙ্গিক এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া তার ঠিক হয়নি- এটা এখন বুঝতে পারছেন। জিজ্ঞাসাবাদে জানতে চাওয়া হয়, এর আগেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বাংলাদেশে এসেছেন। এ ছাড়া তিনি বিশ্বের একাধিক মুসলিম দেশ সফর করেছেন। তখন কেন মোদিবিরোধী কোনো কর্মসূচি বা বক্তব্য দেননি? এ সময় রফিকুল 'নিশ্চুপ' ছিলেন।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, রফিকুলকে আটকের পরপরই কে বা কারা তার ফেসবুক 'ইনঅ্যাকটিভ' করে দেয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘনিষ্ঠ কিছু লোক তার পাসওয়ার্ড জানেন। তারা এটা করতে পারেন। এদিকে তার মোবাইল ফোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বেশ কিছু 'আপত্তিকর' ভিডিও পাওয়া গেছে। বেশ কিছু পর্নো সাইট নিয়মিত ব্রাউজ করতেন রফিকুল।

অভিযোগ আছে, ধর্মীয় গোঁড়ামি আর কুযুক্তি দিয়ে মানুষের ধর্মান্ধতাকে উস্কে দিচ্ছেন রফিকুল। তার নামের শেষে 'মাদানী' শব্দ যুক্ত করা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। সাধারণত সৌদি আরবের মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলে তাদের নামের সঙ্গে 'মাদানী' যুক্ত করা হয়। অভিযোগ, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা না করেই নিজের নামের সঙ্গে 'মাদানী' শব্দ যুক্ত করেছেন তিনি। এরই মধ্যে 'মাদানী' শব্দ প্রত্যাহার করতে তাকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী।

গতকাল হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ফেসবুকে লেখেন, 'মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী র‌্যাবের নিরাপত্তায় রয়েছে মর্মে নিশ্চিত হয়েছি।? অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করছি।'

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, গতকাল দুপুরে নেত্রকোনায় সংবাদ সম্মেলনে রফিকুলকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তার পরিবার ও হেফাজতে ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাওলানা আবদুল কাইয়ুম, জেলা শাখার সদস্য মাওলানা এনামুল হাসান মিলন, হাফেজ মাসুম বিল্লাহ, রফিকুলের বড় ভাই রমজান আলী, চাচাতো ভাই নজরুল ইসলাম প্রমুখ। তারা বলেন, তাকে দ্রুত মুক্তি দেওয়া না হলে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

রফিকুলের বড় ভাই বলেন, তার ভাই মঙ্গলবার রাতে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে ওয়াজ করে নিজের বাড়িতে আসে। রাতের খাবার শেষে সবাই ঘুমিয়ে যান। রাত আড়াইটার দিকে র‌্যাব পরিচয়ে কিছু লোক অন্তত ১৯টি গাড়ি নিয়ে তাদের বাড়ি ঘেরাও করে। পরে রফিকুল, তার বড় ভাই বকুল মিয়া ও তার দূরসম্পর্কের ভাতিজা এনামুল হককে তুলে নিয়ে যায়। পরে বকুল মিয়াকে রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়। তার দাবি, রফিকুলের দুটিসহ তাদের পরিবারের ছয়টি মোবাইল ফোন নিয়ে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0069398880004883