শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি শিক্ষার সূতিকাগার - দৈনিকশিক্ষা

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি শিক্ষার সূতিকাগার

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আধুনিক কৃষি শিক্ষার সূতিকাগার বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট (বিএআই) স্থাপিত হয় ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএআইকে রূপান্তরের মাধ্যমে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) প্রতিষ্ঠা করেন। সোমবার (১৫ জুলাই) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ।

এদেশের দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের বাঁচানোর জন্য শেরেবাংলা একে ফজলুল হক বিএআই স্থাপন করেছিলেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদায় উন্নীত করেন। সেজন্য দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং এর ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ থেকে ক্রমান্বয়ে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার দিকে অগ্রগামী হচ্ছে।

২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট বর্তমান সরকার আমাকে উপাচার্যের দায়িত্ব প্রদান করে। আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর মোঃ আবদুল হামিদ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। দায়িত্ব নেয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়কে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অদ্যাবধি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাসহ সব কার্যক্রম সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে। যেহেতু আমি এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিলাম অতঃপর শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি, তাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিষয় সম্পর্কে আমার স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। তাই উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সমস্যা চিহ্নিত করে এর সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

দক্ষ কৃষিবিদ এবং কৃষিবিজ্ঞানী তৈরি করার পাশাপাশি কৃষি গবেষণার মাধ্যমে প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রসার করার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। বিসিএসসহ অন্যসব প্রতিযোগিতামূূলক চাকরির পরীক্ষায় বিশেষ করে কৃষি সেক্টরে উত্তীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং তারা কর্মক্ষেত্রে রাখছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সবচেয়ে বড় বিষয়- শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা। আমি উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন অনুষদে দেশের সবচেয়ে মেধাবী এবং যোগ্যতাসম্পন্ন ১০০ জন শিক্ষক এবং ২৭ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছি।

অনেক শিক্ষক এখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপ, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও চীনে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের জন্য অধ্যয়ন করছেন। অনেকে ডিগ্রী অর্জন করে ফিরে এসেছেন। কাজেই এখন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের মধ্যে ভাল মিথস্ক্রিয়া হচ্ছে এবং হবে। ভাল ডিগ্রীধারী শিক্ষক এবং মেধাবী শিক্ষার্থী- এই দুটি বিষয়ে যখন সম্মিলন ঘটছে, তখন আমরা আশা করব নিঃসন্দেহে আমাদের শিক্ষার মান বাড়ছে এবং বাড়বে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদ, এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্ট অনুষদ, এনিম্যাল সায়েন্স এ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ এবং ফিশারিজ অনুষদের ৩৫টি বিভাগ রয়েছে। বিশ^বিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি তিন ধরনের কোর্স চালু রয়েছে। রয়েছে সিড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট।

তিনটি স্তরে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমোট শিক্ষক সংখ্যা ৩২২, কর্মকর্তা ২৬৮ ও কর্মচারী ৩৯১। শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণার জন্য রয়েছে পাঁচটি খামার। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে পাঁচটি হলো রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি ছেলেদের এবং দুটি মেয়েদের জন্য বরাদ্দ।

বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় গবেষণার প্রজননক্ষেত্র। গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান সৃষ্টি, উদ্ভাবনী চিন্তাচেতনার বিকাশ প্রধানত বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মানকে বিশ্ব পর্যায় নেয়ার জন্য কাজ করছি। আমি মনে করি, এখন অন্য সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি মানসম্মত গবেষণা হচ্ছে। শিক্ষকগণ দেশের নানা সমস্যা সমাধানের জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জলবায়ু পরিবর্তন ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের উপায় নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। ঢাকা শহরকে সবুজে আচ্ছাদিত করার জন্য ছাদ বাগান নিয়ে চলছে ব্যাপক গবেষণা। সুন্দরবনের সব ধরনের প্রাণীর জেনেটিক বার কোড নির্ণয় ও বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবনসহ আন্তর্জাতিক মানের মৌলিক ও ফলিত গবেষণা করছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এমএস এবং পিএইচডি শিক্ষার্থীরা গবেষণা করছে এবং শিক্ষকগণ তাদের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করছে।

সমগ্র জাতির উন্নয়নে এ কৃষিবান্ধব সরকার বরাবরই গণমুখী সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গত ২১ জুলাই ২০১৬ সালে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক সভায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ৩শ’ ৫২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার প্রকল্প পাস করেন। এ বিশাল অঙ্কের বরাদ্দের কারণে-ভোগান্তি দূর হবে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের আবাসিক সমস্যার। ত্বরান্বিত হবে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ১ এপ্রিল ২০১৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ সাল পর্যন্ত। অনুমোদিত এ প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য অবকাঠামোসমূহের মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে- শেখ হাসিনা হলের উর্ধমুখী (ষষ্ঠ তলা থেকে ১০ম তলা) সম্প্রসারণ কাজ, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা হলের দক্ষিণ ব্লক (৩য় তলা থেকে ১০ম তলা) ও উত্তর ব্লক (ষষ্ঠ তলা থেকে ১০ম তলা) সম্প্রসারণ কাজ, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ভবনের উর্ধমুখী (৪র্থ তলা থেকে ৫ম তলা) সম্প্রসারণ কাজ , ড. ওয়াজেদ মিয়া কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে ভবনের উর্ধমুখী (৫ম তলা থেকে ষষ্ঠ তলা) সম্প্রসারণ কাজ।

প্রশাসনিক ভবনের উর্ধমুখী (৫ম তলা থেকে ষষ্ঠ তলা) সম্প্রসারণ কাজ, শিক্ষকদের আবাসিক ভবনের উর্ধমুখী সম্প্রসারণ কাজ, ৩য় এবং ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আবাসিক ভবনের উর্ধমুখী সম্প্রসারণ কাজ এবং ডরমিটরি ভবনের উর্ধমুখী (তৃতীয় তলা থেকে ষষ্ঠ তলা) সম্প্রসারণ কাজ শেষ হয়েছে। দ্রুত গতিতে কাজ চলছে শেখ কামাল একাডেমিক ভবনের উর্ধমুখী (দ্বিতীয় তলা থেকে ১০ তলা) সম্প্রসারণ কাজ, টিএসসি কমপ্লেক্স ভবনের উর্ধমুখী (দ্বিতীয় তলা থেকে ষষ্ঠ তলা) সম্প্রসারণ কাজ, কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন নির্মাণ (১০তলা বিশিষ্ট ৩৯ ইউনিট) কাজ এবং কেন্দ্রীয় মসজিদ নির্মাণের কাজও চলমান।

নতুনভাবে শুরু হচ্ছে ছাত্রীদের জন্য ১০০০ আসনবিশিষ্ট ১০তলা ভিত দিয়ে ১০তলা হল ভবন নির্মাণ, ছাত্রদের জন্য ১০০০ আসনবিশিষ্ট ১০তলা ভিত দিয়ে ১০তলা হল ভবন নির্মাণ, ভেটেরিনারি ক্লিনিক নির্মাণ, পোল্ট্রির শেড নির্মাণ। এছাড়াও গবেষণা প্লটের জন্য ভূমি উন্নয়ন, সেচ ব্যবস্থা, গ্রীন হাউস নির্মাণ, অত্যাধুনিক ২টি গেট নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে পানি, গ্যাসের লাইন স্থাপন, বই-পুস্তক ও জার্নাল সংগ্রহ, উচ্চতর কৃষি গবেষণা এবং মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্যও বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হচ্ছে গবেষণাগারের জন্য। প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রও সংগ্রহের কাজ চলমান।

শিক্ষার মান বজায় রাখতে হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকাটা জরুরী। এ ক্ষেত্রে ক্যাম্পাসের পরিবেশ সব সময় সুষ্ঠু এবং স্বাভাবিক ছিল। আমাদের শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট, কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে তারা কী ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারছে, যোগ্যতায় ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে কি-না, এসবই পর্যালোচনা করা দরকার। অবকাঠামো উন্নয়নের নামে দালান-কোঠা বানিয়ে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার স্বপ্ন না দেখে বরং দেশময় কিংবা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে লেখাপড়ার উচ্চমান; শিক্ষকদের গবেষণা ও প্রকাশনার অভিনবত্ব।

গবেষণা ও প্রকাশনা দিয়ে অন্যদের বোঝাতে হবে আমাদের উন্নতি। বর্তমান সরকারের সহযোগিতায় এবং কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ সংশ্লিষ্ট শুভানুধ্যায়ীদের প্রচেষ্টায় সব সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কৃষি শিক্ষার সূতিকাগার এ প্রতিষ্ঠানটিকে তার স্বমহিমায় দাঁড় করিয়ে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত করতে আমাদের প্রয়াস দৃঢ়ভাবে অব্যাহত রাখব বলে আশা করি।

লেখক : উপাচার্য, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032429695129395