শৈশবেই ডিজিটাল শিক্ষা - দৈনিকশিক্ষা

শৈশবেই ডিজিটাল শিক্ষা

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া(পটুয়াখালী) |

সাগর ঘেষা চরাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়িতে এখনও বিদ্যুতের আলো জ্বলে না। কিন্তু সেসব বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে গিয়ে প্রযুক্তির সাহায্যে লেখাপড়া করছে। শিখছে ছড়া, কবিতা ও বর্ণমালা। কার্টুন দেখে দেখে হাতের আঙ্গুল গুনে শিখছে অংক। কচি গলায় গাইছে জাতীয় সংগীত ও ছড়া গান।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চরাঞ্চল ধুলাসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিক ক্লাসে সোমবার (২৩ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়,প্রযুক্তির সাহায্যে শেখা শিশু শিক্ষার্থীদের এ প্রতিভা। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান ও শিক্ষিকা সোনিয়া সুলতানার প্রচেষ্টায় এ বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের শৈশবেই ডিজিটাল শিক্ষার হাতেখড়ি হচ্ছে। ‘শিশুদের পিঠে বড় ব্যাগ আর ভারী ওজনের বইপত্র আর নয়, শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষা হবে ডিভাইসে’--এ স্লোগান নিয়ে সাগর তীরবর্তী এ বিদ্যালয়ে এ বছর শুরু হয় এ প্রযুক্তি শিক্ষা। সরকারি ডিজিটাল শিক্ষার উপকরণ হিসেবে এ বিদ্যালয়ে একটি ল্যাপটপ বিতরণ করা হলেও এখনও প্রজেক্টর সরবরাহ না করায় শিক্ষিকা সোনিয়া সুলতানার প্রচেষ্টায় নিজের ট্যাব দিয়ে শুরু করেন এ “প্রযুক্তি শিক্ষা”।

ইউনিসেফের সহায়তায় সিএফএস ও এসইএমভুক্ত বিদ্যালয় হিসেবে তালিকাভুক্ত হয় ধুলাসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উপজেলার ১০টি বিদ্যালয়কে এক লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয় শিশুবান্ধব বিদ্যালয় হিসেবে। এ প্রকল্পের আওতায় এ বিদ্যালয়ের প্রাক প্রাথমিক শ্রেণি কক্ষ এখন শিশু-উদ্যানে পরিণত হয়েছে। শ্রেণিকক্ষের দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে বর্ণমালা, ছড়া, গল্প ও কবিতা। দেয়ালে ছবি অংকন করায় শিশুরাই ছবি দেখে শিখছে প্রাণী, ফুল,ফল ও পাখির নাম। শিক্ষিকা ক্লাসে থাকলেও আড়াই ঘন্টা পাঠদান সময়কালে ওরাই নিজেরাই হয়ে উঠছে নিজেদের শিক্ষক। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, দূর্যোগ ঝুঁকি ও বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত ধুলাসারের চরাঞ্চলের অধিকাংশ পরিবার। গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার, বালুচরে ফসল ফলানো কিংবা প্রচ- রৌদ্র, বৃষ্টি উপেক্ষা করে শ্রম বিক্রিই এখনও অধিকাংশ পরিবারের একমাত্র উপার্জন মাধ্যম। সমাজে পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠীর বর্তমান প্রজন্ম প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থী নুর মোহাম্মদ, আল অমিন, আরাবি ও আরিফা। চার থেকে ছয় বছর বয়সী এ শিশুরা এখনই প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে।

শিক্ষার্থী আল অমিন জানায়, ‘ছবি ও কার্টুন দেখে শেখা ছড়া, কবিতা তাদের মুখস্থ হয় সহজে। একবার দুইবার দেখলেই মনে থাকে। আর এখন তো বর্ণমালাও তারা আর ভোলে না।”দেয়ালে দেয়ালে বর্ণমালা দেখিয়ে সহপাঠীদের শেখাচ্ছে সাড়ে পাঁচ বছরের ফাতিমা। তার স্পষ্ট উচ্চারণ ও কচি গলায় শেখানো এ শিক্ষা মনযোগ সহকারে শুনছে তারই বয়সী শিশু শিক্ষার্থীরা। ফাতিমার ভাষায়, ‘আপায় ট্যাব এ আমাদের সব শেখায়। আমরা গল্প শুনি। কার্টুন দেখি। অংক করি।’এ ট্যাব দেখেই তারা শিখেছে গান ও কবিতা।

শিক্ষিকা সোনিয়া সুলতানা দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে জানান, তিনি শুধু প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। কিন্তু আধুনিক শিক্ষার সাথে উপকূলের শিশু ও অভিভাবকরা এখনও পরিচিত নয়। তাই নিজ উদ্যেগে ক্রয় করা ট্যাব এ শিক্ষা কনটেন্ট তৈরি করে শিশুদের শেখাচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে উৎসাহী হচ্ছে এবং মনযোগ দিয়ে কার্টুনে ছড়া, কবিতা কিংবা গল্প দেখে দ্রুতই শিখছে।

একাধিক অভিভাবক দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, ‘ঘরে কারেন্ট নাই। টিভি নাই। কথা বলার জন্য বাটন মোবাইল রয়েছে। কিন্তু আমরা ল্যাহাপড়ার কি জানি। স্কুলে আপায় যেভাবে মোবাইল দিয়া (ট্যাব) শিখায় তাতে বাসায় পড়ানোও লাগে না। অরাই (শিশুরা) সারাদিন স্কুলের পড়া গুনগুন করে। ভোর হলেই স্কুলে যাওয়ার জন্য দৌড় দেয়। আর আগে তো স্কুলে পাঠানোই ছিল কস্টের কাজ। এই শিক্ষা (ডিজিটাল শিক্ষা) যদি আগে গ্রামের স্কুলে থাকতো তাহলে আর মানুষ বকলম ( মূর্খ) থাকত না।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে জানান,‘শিশুবান্ধব বিদ্যালয়’ হিসেবে চরাঞ্চলের এই বিদ্যালয় উপজেলায় বেশ সুনাম রয়েছে। স্কুলটি পরিপাটি ও আধুনিকায়নের চেষ্টা করছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসীদের আন্তরিকতায়। বর্তমানে চার শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। ডিজিটাল শিক্ষা পুরোদমে চালুর জন্য দ্রুত বিদ্যালয়ে প্রজেক্টর সরবরাহ করা হলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কনটেন্টের শিক্ষার মাধ্যমে আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় শিক্ষিত করা সম্ভব। তাহলে গ্রাম ও শহরে শিক্ষার ব্যবধান কমবে। অভিভাবকরাও আন্তরিক হবে। এতে আগামীতে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হারও কমবে।[inside-ade]

কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনি লাল সিকদার দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে জানান, ডিজিটাল শিক্ষা প্রতিটি বিদ্যালয়ে চালুর জন্যই ল্যাপটপ দেয়া হয়েছে যাতে শিক্ষকরা বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করে শিক্ষার্থীদের শেখাতে পারেন। কিন্তু স্কুলগুলোতে কবে নাগাদ প্রজেক্টর সরবরাহ করতে পারবেন তা জানাতে পারেননি।

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028879642486572