ষষ্ঠ শ্রেণির বই থেকে বিবর্তনবাদ অংশ বাদ দেয়ার চিন্তা - দৈনিকশিক্ষা

ষষ্ঠ শ্রেণির বই থেকে বিবর্তনবাদ অংশ বাদ দেয়ার চিন্তা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

চলতি বছর স্কুরশিক্ষার্থীদের হাতে নতুন শিক্ষাক্রমের বই তুলে দেয়ার পর থেকেই বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। ইন্টারনেট থেকে হুবহু কপি করা, ভুল তথ্য, ইতিহাস বিকৃতি, মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্য বাদ, বিতর্কিত তত্ত্ব, ইসলামবিরোধী ছবিসহ নানা কিছু নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সপ্তম শ্রেণির একটি বইয়ের ভুলে দায় স্বীকার করে নিয়েছে অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দুটি কমিটি করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নতুন শিক্ষাক্রমে বড় ধরনের সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বছর স্কুলগুলোতে তা সংশোধনী আকারে পাঠানো হবে। আগামী বছর এসব ভুল সংশোধন ও বইগুলোতে বড় ধরনের পরিমার্জন করা হবে। 

সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ডারউইনের তত্ত্ব বিষয় শেখানো নিয়ে। এ তত্ত্ব ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী বইয়ের ১১৪ ও ১১৫ পৃষ্ঠায় ছবির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। এই অধ্যায়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার চলছে। 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, ডারউইনের মতবাদ বহু পুরনো এবং তা প্রতিষ্ঠিত নয়। তবে তা আগে ওপরের শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়ানো হতো। বিশেষ করে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের তা পড়ানো হতো। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে তা ষষ্ঠ শ্রেণিতে নিয়ে আসা হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক ও বিভ্রান্তি তৈরির সুযোগ করে দেয়া হয়েছে বিরোধীদের।

জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রমের ভুলত্রুটি নিয়ে ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সেখানে আলোচনা হয়েছে, ডারউইনের মতবাদ অংশ ষষ্ঠ শ্রেণিতে না রাখলেও চলবে। তাই এ বিষয়টি বাদ দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। তবে যেহেতু ভুলত্রুটি সংশোধনে কমিটি করা হচ্ছে, তাই তা বাদ দেওয়া হলে তাদের মাধ্যমেই করা হবে। সবচেয়ে বেশি সংশোধন হচ্ছে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞান বইয়ে। এ দুটি বই নিয়ে বৈঠকে বেশি আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া শিল্প সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জীবন ও জীবিকা ও ধর্মশিক্ষা বইতে বড় সংশোধন করা হবে। অন্যান্য বইতে মূলত ভুলত্রুটি সংশোধন হবে।

গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, ‘আমরা এ বছরের বইয়ের পান্ডুলিপি চূড়ান্ত করার আগে যেসব ছবি বাদ দিয়েছিলাম, সেগুলোও থেকে গেছে। অতএব সরষের মধ্যেও কোনো ভূত আছে কি না তা আমরা খুঁজে দেখব। ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও সংবেদনশীল কোনো বিষয় থাকলে আমরা নিশ্চয়ই নজর দেব। আওয়ামী লীগ কখনোই ধর্মবিরোধী বা বিদ্বেষী কিছু করেনি।’

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাবার নামেও ভুল করা হয়েছে। শেখ বাদ দিয়ে শুধু লেখা হয়েছে লুৎফর রহমান। ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ‘ছেলেবেলার মুজিব’ শিরোনামে ৭ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর বাবা লুৎফর রহমান ছিলেন সরকারি অফিসের কেরানি। অথচ তিনি ছিলেন আদালতের সেরেস্তাদার। পদটি আজও দেশের সব জেলা জজ আদালতে বহাল আছে। কেরানি শব্দটি সাধারণত তাচ্ছিল্য করে বলা হয়। একই পৃষ্ঠার দুই জায়গায় কেরানি শব্দটা লেখা হয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর বাবার নামের সঙ্গে ‘শেখ’ শব্দ যুক্ত করা হয়নি। ওই বইয়ের ৭১ পৃষ্ঠায় ‘ভাষা আন্দোলন’ শিরোনামে আন্দোলনের বর্ণনায় কোথাও বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরা হয়নি। একই বইয়ের তিন জায়গায় কোথাও ‘বাঙালি’ হ্রস্ব ইকার দিয়ে, কোথাও ‘বাঙালী’ দীর্ঘ ঈ কার দিয়ে, আবার কোথাও লেখা হয়েছে, ‘বাঙ্গালি’।

ষষ্ঠ শ্রেণির একই বইয়ের ৭৭ পৃষ্ঠায় ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম সরকার’ শিরোনামে লেখা হয়েছে, কর্নেল ওসমানীকে জেনারেল পদ দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি করা হয়। শুদ্ধ হচ্ছে, তিনি কর্নেল পদে থেকেই মুক্তিযুদ্ধে সর্বাধিনায়ক। আর দেশ হানাদারমুক্ত হওয়ার পর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ দেশ বলেন, ‘ভুলত্রুটি সংশোধনে যে কমিটি হবে তারা দ্রুততার সঙ্গে তাদের কাজ শেষ করবে। ডারউইনের মতবাদ বিষয়ে পড়া মানে তা বিশ্বাস করা নয়। আবার এ মতবাদ প্রতিষ্ঠিতও নয়। ফলে কমিটি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমরা কারও সেন্টিমেন্টে আঘাত দিতে পারি না। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথম বছর ভুলত্রুটি কিছু থাকতে পারে, আগামী বছর তা অনেকটাই কমে আসবে।’

সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৭০ পৃষ্ঠায় ‘রাজনৈতিক সংযোগ’ শিরোনামে লেখা হয়েছে তোমরা তো জানো ২৫ মার্চ মধ্যরাতে নিজ বাড়িতে গ্রেপ্তার বরণ করার আগে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদকে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বাধীনতার সংগ্রাম যেন এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার বরণ করেছেন, অর্থাৎ স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। যা কোনোভাবেই সঠিক নয় বলে মনে করছেন ইতিহাসবিদরা।

সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ৫১ পৃষ্ঠায় ‘নতুন পরিচয়’ অনুচ্ছেদে শরীফার গল্প অংশে শিক্ষার্থীদের জন্য গল্পে গল্পে শেখানো হয়েছে একজন ছেলে তার চিন্তা থেকেই এবং আচরণগত পরিবর্তন করে নিজেকে মেয়ে পরিচয় দিতে পারে। এমনকি একজন ছেলে তার ইচ্ছার কারণে নিজেকে মেয়ে হিসেবেও সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠবইয়ে ১১তম অধ্যায়ের ‘মানব শরীর’ শিরোনাম অংশে কিশোর-কিশোরীর বয়ঃসন্ধিকালে তাদের শরীরের নানা অঙ্গের যেভাবে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে প্রকাশ্যে তা পড়ার উপযোগী নয় বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। একই বইয়ের ১২২ পৃষ্ঠায় মেয়ের বিভিন্ন অঙ্গের যেভাবে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তা আরও আপত্তিকর বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৯৫ পৃষ্ঠায় বাংলায় প্রায় ৬০০ বছরের মুসলিম শাসনকে আগেকার মৌর্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্য এবং পরের ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শাসনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে সুলতানি শাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আলোচনা করা হয়েছে। ইতিহাস অংশে মুসলিম নেতৃত্বকে খাটো করে দেখা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমের অনেক বই মাদরাসায় পাঠদানের উপযোগী নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা। কারণ সেখানে যেভাবে যেসব ছবি ব্যবহার করা হয়েছে তা মাদরাসা শিক্ষার সঙ্গে মেলে না। তাই অনেক মাদরাসায় কিছু বই শিক্ষার্থীদের হাতে এখনো দেওয়া হয়নি। আবার কোনো বইয়ের কিছু অধ্যায় তারা পড়াবেন না বলেও নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন। 

কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.012845993041992