জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সীমা কমানো হচ্ছে। নতুন নিয়মে একক নামে ৫০ লাখ এবং যৌথ নামে এক কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না। গ্রাহক পেনশনার হলে একক নামে এক কোটি এবং যৌথ নামে দেড় কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।
এখনকার নিয়মে একক নামে সর্বোচ্চ এক কোটি ৫৫ লাখ এবং যৌথ নামে দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। সঞ্চয়পত্রের জন্য সমন্বিত বিধিমালা প্রণয়নে গঠিত কমিটির সুপারিশে এসব পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে ইতোমধ্যে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে।
জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ হাবীবুর রহমানকে আহ্বায়ক করে গঠিত ১০ সদস্যের কমিটিতে সঞ্চয় অধিদপ্তর ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক, ডাকঘর ও সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ কর্মসূচির প্রতিনিধি রয়েছেন। কমিটি এরই মধ্যে তিনটি বৈঠক করে নতুন নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে। কিছু প্রক্রিয়া শেষে যা শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, বিদ্যমান নিয়মে চার ধরনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের আলাদা সীমা নির্ধারিত আছে। একই ব্যক্তি নিজ নামে এবং যৌথভাবে সব সঞ্চয়পত্রের ঊর্ধ্বসীমা পর্যন্ত কিনতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো একজন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে গেলে তিনি ৫০ লাখ টাকার পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। তিনি নারী হলে আবার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।
একই ব্যক্তি একক নামে ৩০ লাখ এবং যৌথ নামে ৬০ লাখ টাকার পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। তিনিই আবার তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে একক নামে ৩০ লাখ এবং যৌথ নামে ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন। এভাবে একক নামে সর্বোচ্চ এক কোটি ৫৫ লাখ এবং যৌথ নামে দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
বে নতুন নিয়মে একজন সাধারণ গ্রাহক একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ এবং যৌথ নামে এক কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন না। আর ক্রেতা পেনশনার হলে একক নামে এক কোটি এবং যৌথ নামে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত কিনতে পারবেন।
জানতে চাইলে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শামসুন্নাহার বেগম বলেন, বিদ্যমান নিয়মে আলাদা বিনিয়োগ সীমার আলোকে যে কেউ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। তবে অটোমেশনের ফলে বিদ্যমান নীতিমালা সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এ লক্ষ্যে গঠিত কমিটির সুপারিশের আলোকে যৌথ বিনিয়োগ সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ব্যাংকের সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে ডাকঘর সঞ্চয়ের সুদহার কমানো হয়েছে। তবে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের বিদ্যমান চার ধরনের স্কিমের কোনোটিতে আপাতত সুদহার পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেই।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নতুন নিয়মের বিষয়টি আরও পরিস্কার করেন। যেমন- কোনো একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী হয়তো ৫০ লাখ টাকার পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনলেন। তিনি নারী হলে ৪৫ লাখ টাকার পরিবার এবং অন্য যে কোনো সঞ্চয়পত্রে আরও ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে মোট এক কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।
আর পুরুষ হলে পেনশনারের ৫০ লাখ, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র এবং তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র মিলে আরও ৫০ লাখ টাকার অর্থাৎ একক নামে এক কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। আর যৌথভাবে হলে সব মিলিয়ে আরও ৫০ লাখ টাকার কেনা যাবে। পেনশনার ব্যতীত অন্যক্ষেত্রে একজন নারী ৪৫ লাখ টাকার পরিবার এবং পাঁচ বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফার সঞ্চয়পত্রে আরও ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন। আর পুরুষ হলে পাঁচ বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন। নারী-পুরুষ উভয় ক্ষেত্রে যৌথ হিসাবের ক্ষেত্রে আরও ৫০ লাখ টাকাসহ এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন।
জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় গত ১ জুলাই থেকে সারাদেশে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ক্রেতা বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর বা ডাকঘর যেখান থেকেই সঞ্চয়পত্র কিনুক সব তথ্য জমা হচ্ছে নির্দিষ্ট একটি ডাটাবেসে।
আর যেখান থেকেই সঞ্চয়পত্র কেনা হোক, এক লাখ টাকার বেশি হলে ক্রেতাকে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া সব ধরনের লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসব কারণে সঞ্চয়পত্রে কালো টাকার বিনিয়োগ অনেকটা কমে এসেছে।
সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমলো : সঞ্চয়পত্রে নানা কড়াকড়ির ফলে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া অনেক কমেছে। এ বাস্তবতায় চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১২ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৭ হাজার কোটি টাকা। মূলত সঞ্চয়পত্রের বিক্রি ব্যাপক কমতে থাকায় এ রকম সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, সুদ ও আসল পরিশোধে ব্যয় হয়েছে তার চেয়ে ৪০৮ কোটি টাকা বেশি। তার মানে নিট বিক্রি কম হয়েছে।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সঞ্চয়পত্র সরকার নিট ঋণ নিয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে যার পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গত ডিসেম্বর শেষে সঞ্চয়পত্রে সরকারের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা।