শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমাদের প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ। আমি শুধু শিক্ষার্থীকে জ্ঞানদান করলাম, তারপর সে কোথাও ভাল চাকরি পেল কিনা, উদ্যোক্তা হতে পারল কিনা সেটা নিয়ে আমার কোনো দায়িত্ব নেই তা যেন না হয়। আমাদের দেশে যে পরিমাণ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় রয়েছে পৃথিবীর আর কোথাও এমন নজির নেই। আমরা তো নিশ্চয়ই শিক্ষিত বেকার কিংবা সনদধারী বেকার তৈরি করতে চাই না। চাই দক্ষ জনসম্পদ।
শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাস বাংলাদেশ মাঠে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত সাংস্কৃতিক উৎসবে ‘জাতির পিতার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কর্মময় জীবন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে সকাল ১১টার দিকে শিক্ষামন্ত্রী একদিনের সরকারি সফরে রাজশাহী পৌঁছান। রাজশাহী পৌঁছেই তিনি জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, ৬৯’র গণঅভ্যূত্থানে শহীদ শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা ও সম্প্রতি প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর তিনি শেখ হাসিনা হলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। সভার শুরুর পূর্বে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের পর বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে এই সাংস্কৃতিক উৎসবের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় স্কুলের শিশুশিল্পীদের পরিবেশিত নৃত্য উপভোগ করেন শিক্ষামন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচবএম খায়রুজ্জামান লিটন শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাজশাহীতে একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব জানান। পরে রাজশাহীর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আলী কামাল তাঁর লেখা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত বই অতিথিদের উপহার দেন।
শিক্ষামন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল শহীদ সদস্য, জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদের কথা স্মরণ করেন এবং তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
পরে তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে। বর্তমানে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে প্রথাগত শিক্ষাপদ্ধতি রয়েছে তার পরিবর্তন করতে হবে। চাকরিদাতারা কি ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন জনশক্তি চায়, তাদের কি প্রয়োজন এসব বিষয় মাথায় রেখে নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে। বর্তমানে পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। আমাদের শিক্ষার্থীদের কেবল একাডেমিক শিক্ষায় নয়, বরং দক্ষতা, মূল্যবোধ অর্জনের মাধ্যমে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে পরিচিত হতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় মূল বক্তা ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মলয় ভৌমিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার অনুষ্ঠানের অতিথিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী-৩ আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দীন, সংরক্ষিত আসনের সাংসদ আদিবা আনজুম মিতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম প্রমুখ।
এদিন বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের কর্মসূচি শেষ হয়। আগামীকাল শনিবার ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এতে আলোচনা করবেন অধ্যাপক মুনতাসির মামুন। এছাড়াও আগামীকাল ও পরদিন বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান। আগামী ১১ থেকে ১৩ ডিসেম্বর নাট্যোৎসব এবং ১৪ ডিসেম্বর প্রামাণ্যচিত্র ‘বধ্যভূমিতে একদিন’ প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে উৎসবের পর্দা নামবে।