সন্তানকে মানুষ করতে গ্রাম কতটা বাধা? - Dainikshiksha

সন্তানকে মানুষ করতে গ্রাম কতটা বাধা?

মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা |

গ্রামে আমার জন্ম। সেখানেই বেড়ে ওঠা। গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে মফস্বল শহর উপজেলার কলেজ থেকে স্নাতক ও জেলা শহরের কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করি।  বাড়ি থেকে প্রতিদিন স্কুল ও কলেজে যাওয়া-আসা করেছি। বাড়িতে বিদ্যুত্ ছিল না। ছিল না পাকা রাস্তঘাট। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনধারা পরিবর্তন হয়েছে। চাহিদা, জীবনমান, দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাচেতনা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ সকল ক্ষেত্রেই প্রভূত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।  বর্তমান সময়ে শিক্ষাক্ষেত্রে পদ্ধতিগত (কৌশলগত বললেই ভালো হয়) কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।  গ্রাম ও শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ভিন্ন মানদণ্ডে  বিবেচনা করা হচ্ছে। ফলে আর্থিকভাবে সচ্ছল অভিভাবকরা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিকে ঝুঁকছেন।

আজকাল প্রায়ই একটি কথা বলতে শোনা যায় যে, গ্রামে থাকলে ছেলেমেয়ে মানুষ করা যাবে না। প্রশ্ন আসতেই পারে যে, যাঁরা গ্রামে বাস করেন তাঁরা কি মানুষ না? আমাদের সন্তানদের তথাকথিত মানুষ করার জন্য আমরা সন্তানের দাদা-দাদিকে গ্রামে শেষ বয়সে একা রেখে শহরে চলে আসি! শহরে গিয়ে নামিদামি স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করিয়ে কাঁড়িকাঁড়ি টাকা ঢেলে মানুষ করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করছি। তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বইয়ের বোঝা। শিশু বয়সে যতটুকু শিক্ষালাভ যথেষ্ট, তারও অনেক বেশি শিখতে বাধ্য করা হচ্ছে। উচ্চ পদে চাকরি করে কাঁড়িকাঁড়ি টাকা উপার্জনের যোগ্যতাকেই আমরা মানুষ হওয়া মনে করছি। আসলে ‘মানুষ’ শব্দটির যথার্থতা আমরা সত্যিই বুঝতে পারি কি না—এমন প্রশ্নই আজ সামনে এসে যায়।

একটা সময় অনাচেকানাচে কিন্ডারগার্টেন নামক তথাকথিত মানুষ তৈরির এত প্রতিষ্ঠান ছিল না। গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ই ছিল প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তিস্থল। তখন নাগরিক অনেক সুবিধাই গ্রামে ছিল না। তারপরও সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত ও প্রকৃত মানুষ করতে ওই প্রতিষ্ঠানেই পাঠানো হতো। তখন মানবিক মূল্যবোধ,  নৈতিকতা, দেশপ্রেম, সততা, মানবতা অর্জনই ছিল গ্রন্থগত শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্য। আজকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাঁরা প্রতিষ্ঠিত, খোঁজ নিলে জানা যাবে তাঁদের অধিকাংশই গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ শেষ করেছেন। রাজনীতি, শিক্ষা, চিকিত্সা, বিজ্ঞান, প্রকৌশলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁরা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে খ্যাত। অথচ আজ পুঁথিগত বিদ্যা অর্জন করাকেই মানুষ হওয়া মনে করা হচ্ছে!

এ কথাও সত্য যে, বিশ্বায়নের এই যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞানে আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম অনেক মেধার স্বাক্ষর রাখছে। এদের অনেকে এদেশের হয়ে বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করছে। আবার কারো কারো কর্মকাণ্ডে বহির্বিশ্বে দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘুষ, দুর্নীতিসহ নানা অনিয়ম বিরাজ করছে। এক্ষেত্রে তথাকথিত অনেক শিক্ষিতও জড়িয়ে পড়ছে। তাই একথা বলবার সময় এসেছে যে, মানুষ করার যে চেষ্টা আমরা করছি তার কোথায়ও কোনো ত্রুটি রয়ে গেছে। মনে হয় মানুষ করতে গ্রাম বড় বাধা নয়। কারণ বর্তমানে গ্রাম ও শহরে জীবন মানের তেমন কোনো পার্থক্য নেই। নাগরিক সুবিধার অধিকাংশই বর্তমানে গ্রামে আছে। এক্ষেত্রে বাধা মনে হয়, দৃষ্টিভঙ্গি, দায়িত্ববোধ আর মানবিক মূল্যবোধের অভাব। গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমর্রত মানুষ গড়ার কারিগররা যদি মানুষ গড়ার দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করেন আর আমরা যদি তাঁদের ওপর আস্থা রাখি, তাঁদের যথাযথ মর্যাদা দেই তাহলে সন্তানকে মানুষ করতে গ্রাম ছেড়ে পালানোর দরকার হবে না। অভিভাবক হিসেবে আমরা যদি সন্তানকে সত্যিকারের মানুষ করার আন্তরিক চেষ্টা করি তাহলে বোধহয় গ্রাম এতটা বাধা নয়।

 

নেত্রকোনা থেকে

কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041930675506592