সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ সরকারের অবদান - দৈনিকশিক্ষা

সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ সরকারের অবদান

আবু সালেহ মোহাম্মদ মুসা |

ছেলে মাকে চিঠি দিয়েছে। সাজেদা বানুর আনন্দ আর ধরে না। কি লিখেছে তা জানতে দু’মাইল কাদা পানি ঠেলে; পায়ে হেঁটে পাশের গ্রামের সাদেক মাস্টার সাহেবের কাছে যেতে হবে। উপায় কি, বাড়ির কাছাকাছি শিক্ষিত লোক নেই। খুব বেশি আগের কথা নয়। গাঁও-গ্রামের মানুষের এ ধরনের ঘটনা অনেক বার আমাদের নজরে এসেছে।

কখনো আবার ক্ষেতের তরকারি নিয়ে মা-বাবাকে দেখা গেছে মাস্টার সাহেবের কাছে যেতে। ছেলের কাছে চিঠি লিখতে হবে। মাস্টার সাহেব বলেন- এ কি করেছো, চিঠি লিখে দিতে আবার তরকারি কেন, চিঠি লিখে দিলাম গাছের দুটি ফলও দিলাম। গ্রামে শিক্ষিত লোক নেই, কি আর করা।

এত কষ্টের, দুঃখের দিন শেষ। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেই গাঁও-গ্রামের চিত্র এখন ভিন্ন। শ্রমজীবী, কৃষিজীবী, কামার, কুমার সবার ঘরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়েছে। মা-বাবা উভয়ই এখন চিঠি লিখতে পড়তে পারে। অফিস আদালতে, ব্যাংকে নিত্যদিনের কাজের সমাধা করতে কম-বেশি সবাই পারে। দিন বদলের বাংলাদেশে ঘন ঘন সরকার বদলের বেড়াজাল পেরিয়ে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত।

সরকার সকল ক্ষেত্রে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রাইমারি শিক্ষায় বৃত্তি, অনেক ক্ষেত্রে দুপুরে খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থাসহ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দূরের ছাত্রীদের সাইকেল প্রদানসহ ভিন্ন ভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করে চলেছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা, কাজের বুয়ারা যাতে স্কুলে সহজে যেতে সুযোগ পায় তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে শিক্ষার হার ৬১ শতাংশ। আর বর্তমান সরকারের গৃহীত উদ্যোগসমূহ যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় তাহলে ২০২১ সালে শিক্ষিতের হার উল্লেযোগ্যভাবে উন্নীত হবে এমনটি পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা।

শিক্ষা ক্ষেত্রে এ আশার আলো বাস্তবে রূপ নেয়া এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা তিন স্তরবিশিষ্ট- প্রাথমিক স্তর, মাধ্যমিক স্তর এবং উচ্চশিক্ষা বা বিশ্ববিদ্যালয় স্তর। সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযোগী ৯৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝরে পড়ার হার কমে ২০ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে এবং শিক্ষাচক্র সমাপনের হার ৭৯ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ২৩৮ জন এবং পাসের হার শতকরা ৯৮ দশমিক ৫২ ভাগ। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বর্তমানে মোট ৫৫ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে বৃত্তি দেওয়া হয়। এদের মধ্যে সাধারণ গ্রেডে ৩৩ হাজার এবং ট্যালেন্টপুলে ২২ হাজার।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তিমূলক ও উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এখন অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের যথাযথভাবে শিক্ষিত করে তোলার ব্যাপারে সচেতন। তবে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের অনেকেই এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন না। এ জন্য তাদের পড়াশোনার জন্য সরকার সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশকে দরিদ্রমুক্ত করার প্রাথমিক হাতিয়ার হিসেবে তার সরকার শিক্ষার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। সরকার প্রত্যেক নাগরিকের শিক্ষা-সুবিধা নিশ্চিত করতে চায়।’

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দশটি শিক্ষা বোর্ডে অধিভুক্ত। বোর্ডগুলো তিনটি পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা করে : জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা এবং উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা। মেধারভিত্তিতে এসব স্তরেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃত্তি দেয়া হয়।

শিক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় আমাদের সকলের সময় এসেছে নিজের ভালো বিবেচনায় নিয়ে নিজের উন্নতির পাশাপাশি দেশকে এগিয়ে নেয়ার। এ দায়িত্ব কারো একার নয়। নিজের উন্নয়ন, পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন অর্থাৎ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এ জয় যাত্রা থামার নয়, ১৬ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইতে সময় লাগে না, প্রয়োজন সম্মিলিত সদিচ্ছার। তাই সময় এসেছে সরকারের দেওয়া শিক্ষার সুযোগ সবার গ্রহণ করে ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার। আমরা এ সুযোগ গ্রহণ করে নিজের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন করব।

শিক্ষার উন্নয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নানামুখী পদক্ষেপ এ সরকারের শুরু থেকে সুনাম কুড়িয়েছে এবং তা অব্যাহত। তবে উন্নয়নের ধারাকে অটুট রেখে তা কিভাবে আরও বেগবান করা যায় তা আমাদের ভাবতে হবে। এ বিশাল জনসমষ্টিকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে প্রতিযোগিতার বিশ্বে টিকে থাকতে আমাদের যা যা করণীয় তার সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনার আলোকে আমাদের গতিপথ এখনি নির্ধারিত হতে হবে।

সময় সুযোগ সব সময় আসে না, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে সামনে রেখে ২০২১ সালের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার এখনই সময়। বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তাকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে সঠিক দিক নির্দেশনার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেয়ার এইতো সময়। এ জয়যাত্রা কোনভাবেই যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে সবারকে দৃষ্টি দিতে হবে।

বর্তমান সরকারের গড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আমাদের দৈনন্দিন কাজ-কর্ম, চলাচল, শিক্ষা, চিকিৎসা তথা স্বাস্থ্যসেবা, কৃষিকাজ, ব্যবসা, বিদেশ ভ্রমণ, দেশ-বিদেশে চাকরির সুযোগ সবই নিয়ে এসেছে হাতের মুঠায়। দিনে দিনে এ সুযোগ আরও সহজলভ্য হচ্ছে। আমরা ঘরে বসেই আয়ের পথ দেখতে পাচ্ছি, দেশে বসেই বিদেশিদের কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সমাধা করতে পারছি, নতুন নতুন আয়ের পথ সৃষ্টি হচ্ছে। ভালো কাজের জন্য, ভালো দক্ষতার জন্য বিশ্বে আমাদের মান মর্যাদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ঐতিহ্যের ধারাকে সমুন্নত রেখে আমাদের আগামী প্রজন্মের পথকে আরও প্রসারিত করতে চাই শিক্ষা।

আমাদের শিক্ষার মান উন্নত করার ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য চাই উপযুক্ত শিক্ষা যা আমাদের মানুষের মত মানুষ হতে সহায়তা করবে। এছাড়াও ‘অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো’ এর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে অনেক অলাভজনক সংগঠন রয়েছে, যারা সামাজিক সুবিধা-বঞ্চিত শিশুদের জন্য অনানুষ্ঠানিক ও আধা-আনুষ্ঠানিক শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। আমরা এ সব শিক্ষার সুযোগ গ্রহণ করে নিজেদেরকে শিক্ষিত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবো, ২০২১ সালের বাংলাদেশ হবে আমাদের সুখের ঠিকানা এ আশার আলো জ্বালাতে সকলে এগিয়ে আসি, সবাইকে শিক্ষিত করতে যার যার অবস্থান থেকে বিশেষভাবে অবদান রাখি। তাহলে আমাদের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশ এগিয়ে যাবে, উন্নত জাতি হিসেবে আমরাও বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029008388519287