সমকামিতা বিষয়ে পড়ানোয় যুক্তরাজ্যে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে হুমকি - দৈনিকশিক্ষা

সমকামিতা বিষয়ে পড়ানোয় যুক্তরাজ্যে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে হুমকি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সমকামিতা নিয়ে ক্লাসে পাঠদানের পর ইংল্যান্ডের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে হুমকি দিয়ে ইমেল ও ফোন করা হয়েছে। বার্মিংহামের ওই বিদ্যালয় প্রধান সারাহ হেউইট-ক্লার্কসনের কাছে পাঠানো মেসেজ বা বার্তাগুলো নিয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, গত সাত সপ্তাহ ধরে অ্যান্ডারটন পার্ক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাইরে নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিলেন অভিভাবকেরা। তারই অংশ হিসেবে সোমবারে কয়েক শ' শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে আসতে দেওয়া হয়নি।

বিদ্যালয়ে প্রতিবাদকারীদের বিচরণ ঠেকাতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য আলাদা একটা স্থান রাখার কথা বলেছেন বার্মিংহামের সংসদ সদস্য জেস ফিলিপ্স। চলমান এই প্রতিবাদকে 'আক্রমণাত্মক' বলে বর্ণনা করেছেন অ্যান্ডারটন পার্ক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মিজ হেউইট-ক্লার্কসন।

মূলত, শুধু মুসলিম বাবা-মায়েরাই এই বিক্ষোভ করছেন বলে জানানো হচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের ক্রস-ড্রেসিং এবং সমকামের প্রসঙ্গটি ওই বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত থাকায় মুসলিম অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ হন।

বিক্ষোভকারীদের নেতা এই পাঠ্য বিষয়বস্তুকে 'সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং' বলে ব্যাখ্যা করেছেন। মুসলিম অভিভাবকেরা শুধু বার্মিংহামের এই বিদ্যালয়ের পাঠ্য বিষয়বস্তুর বিরোধিতাই করছেন না, একই রকম শিক্ষার বিরোধিতা করে তারা ইংল্যান্ডের বহু স্কুলে চিঠি পাঠিয়েছেন।

মিজ হেউইট-ক্লার্কসন বিক্ষোভকারীদের প্রসঙ্গে বলেছেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নামে আসলে যা চলছে তা 'অত্যন্ত উচ্চকিত, খুবই আক্রমণাত্মক এবং ক্লান্তিকর।' তিনি একের পর এক অভিভাবকদের সাথে বৈঠক করে যাচ্ছেন।

এই মে থেকে জুনের শেষ নাগাদ অন্তত ১২টি বৈঠক অভিভাবকদের সাথে তার করার কথা বলে জানিয়েছেন এই প্রধান শিক্ষিকা। মিজ. হেউইট-ক্লার্কসনকে 'ইসলামোফোবিক' বা 'ইসলাম ভীতিতে' আক্রান্ত বলে কোনো কোনো অভিভাবক দাবি করলেও সেটিকে তিনি নাকচ করে দিয়েছেন।

বরং 'সব মানুষের সমান অধিকারে' বিশ্বাসী বলে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। ইংল্যান্ডের নীতি অনুযায়ী, আগামী ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাস থেকে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে 'রিলেশানশিপ্স এডুকেশন' বা মানবীয় সম্পর্কের বিবিধ ধরন বাধ্যতামূলকভাবে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

অ্যান্ডারটন পার্ক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তুর প্রতিবাদে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন শাকিল আফসার। যদিও তার কোনো সন্তান এই স্কুলে পড়ে না।

কিন্তু তিনি মনে করেন যে, অ্যান্ডারটন পার্ক স্কুলে এলজিবিটি বা সমকামিতার প্রতি শিশুদেরকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। অভিভাবকেরা যে এই পাঠ্যসূচি পছন্দ করছেন না সেই বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দিতেই প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থীকে তাদের পরিবার সোমবারে বিদ্যালয়ে আসতে দেননি বলেও উল্লেখ করেছেন মি. আফসার।

তবে, স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রায় ৭০০ জন স্কুলে অংশ নিয়েছে। বিদ্যালয়ের বহিঃপ্রাঙ্গনে স্থানীয় এমপি মিজ. ফিলিপ্সের সাথে মত ভিন্নতার প্রেক্ষিতে মি. আফসারের এক প্রকার বচসাও হয়। ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস পুলিশ জানিয়েছে, বিদ্যালয়ের বহিঃপ্রাঙ্গনে যে 'বিশৃঙ্খল' পরিস্থিতি বিরাজ করছে তারা সেদিকে খেয়াল রাখছে। মিজ ফিলিপ্স বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা নিজের ইচ্ছামাফিক 'ইকুয়ালিটি' বা সমতার ব্যাপারটিকে ব্যাখ্যা করতে পারেন না।

এই বিক্ষোভের সবচেয়ে 'বাজে দিক' হিসেবে তিনি বলেছেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের নামে বিক্ষোভকারীরা আসলে 'শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সুনাম' বিনষ্ট করেছেন। তাই, ৭০০ শিশুর সুরক্ষার কথা বিবেচেনা করে তিনি একটি 'এক্সক্লুশান এরিয়া' বা প্রতিবাদ প্রদর্শনের জন্য একটি আলাদা স্থান নির্ধারণের কথা বলেছেন।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এই বিক্ষোভের বিরুদ্ধে পাবলিক স্পেসেস প্রটেকশান অর্ডার (পিএসপিও) বা জনপরিসর সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেয়া যাবে কিনা সেই বিষয়টিকে খতিয়ে দেখতে নিজের অফিসকে তাগিদ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বার্মিংহাম সিটি কাউন্সিলের নেতা ইয়ান ওয়ার্ড।

মি. ওয়ার্ড বলেছেন, যদি পিএসপিও-কে প্রয়োগের বিধি না থাকে তাহলে তারা বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজবেন। কারণ বাধা-বিঘ্ন মুক্তভাবে শিক্ষার্থীদের এবং অ্যান্ডারটন স্কুলের কর্তৃপক্ষের বিদ্যালয়ে অংশ নেওয়ার অধিকার রয়েছে।

যারা আন্দোলন করছেন তাদের বিষয়ে ইঙ্গিত করে ইয়ান ওয়ার্ড বলেছেন, অভিভাবকেরা বিদ্যালয়ের কারিকুলাম বা পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তনের দাবি জানানো এক জিনিস। কিন্তু অন্যের অধিকার কেড়ে নেয়া বা সমাজে ঘৃণা ছড়ানো বা ভুল তথ্য ছড়ানো একেবারেই ভিন্ন প্রসঙ্গ।

পিএসপিও প্রয়োগ হবে কিনা এই নিয়ে কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এজন্য পাবলিক কনসাল্টেশান প্রয়োজন এবং সেই মতের উপরে ভিত্তি করে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। তবে, এক্ষেত্রে পুলিশ সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038859844207764