দরপত্রে তিনটি বিশাল আকৃতির রেইনট্রি গাছ বিক্রির মূল্য নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ২৭ হাজার টাকা। দরদাতা গাছে কুড়াল মারার আগেই সেই গাছ আরেক ব্যবসায়ী কিনে নেন ৭১ হাজার টাকায়। আর নিমেষেই ৪৩ হাজার টাকা লাভের মুখ দেখেন ‘ভাগ্যবান’ ব্যবসায়ী। এভাবেই ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গাছ বিক্রির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। স্কুলভিত্তিক একটি চক্র সমঝোতা করে নেপথ্যে লাভবান হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার উপজেলার বড়হিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনটি গাছ তড়িঘড়ি করে কেটে নেওয়া হয়। লোকজন জানায়, বড়হিত গ্রামের আবদুল খালেক দরপত্রের মাধ্যমে গাছগুলো মাত্র ২৭ হাজার ৫০০ টাকায় কিনেছেন।
স্কুলের একটি সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় থেকে গাছ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত ১১ এপ্রিল ছিল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। নির্ধারিত দর গোপন রাখার নিয়ম থাকলেও সেটি বাইরে জানাজানি হয়ে যায়। ফলে একটি চক্র সমঝোতা করে নির্ধারিত দরের বাইরে দরপত্র জমা দেয়নি। এভাবে সর্বোচ্চ দরদাতা হন বড়হিত গ্রামের আবদুল খালেক।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউপিইও) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিক গতকাল শনিবার জানান, তাঁর কার্যালয় থেকে দরপত্র আহ্বানের দাপ্তরিক কাজ সম্পাদন করা হয়েছে। গাছের দর ঠিক করে দিয়েছেন বন কর্মকর্তা।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. লুত্ফর রহমান বলেন, সরকারি নীতিমালা মেনেই দাম ঠিক করে দিয়েছেন তিনি। গাছের সাইজ অনুযায়ী তিনি দর নির্ধারণ করে দেন।
প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষা কার্যালয় গাছ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করে। গাছ বিক্রির বিষয়ে তাঁর কোনো ভূমিকা ছিল না। এই তিনটি গাছের মূল্য ২৭ হাজার ৫০০ টাকা যৌক্তিক হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না হলেও তো হইছে। কী আর করার আছে। ’
বিদ্যালয়ের আশপাশের লোকজন জানায়, প্রকাশ্যে নিলাম ডাকা হলে লক্ষাধিক টাকায় গাছগুলো বিক্রি করা যেত। তারা আরো জানায়, স্থানীয় যুবলীগের এক নেতা ব্যবসায়ী আবদুল খালেকের মাধ্যমে গাছগুলো কিনে ঘটনাস্থলেই আবুল কাসেম নামে এক কাঠ ব্যবসায়ীর কাছে তা ৭১ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।
ফোনে যোগাযোগ করা হলে আবুল কাসেম ৭১ হাজার টাকায় গাছগুলো কেনার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এই লাভে চলব না, আরো লাভ করে বিক্রি করা যাবে। ’