বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মহিলা কোটার পদ সংখ্যা নির্ধারণে শাখাভিত্তিক আলাদা হিসাব না করে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মহিলা শিক্ষকের সংখ্যা বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বেশকিছুদিন আগেই। সিদ্ধান্ত ছিল, স্তরভিত্তিক নয়, প্রতিষ্ঠানভিত্তিক মহিলা কোটার পদ সংখ্যা নির্ধারণ করে এমপিওভুক্ত করা হবে শিক্ষকদের। এনটিআরসিএতে অনুষ্ঠিত একটি সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা। কিন্তু সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হলেও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তাই, সম্পূর্ণ বিধি মোতাবেক নিয়োগ পেয়েও মহিলা কোটার জটিলতায় এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না বেশকিছু প্রার্থী। দৈনিক শিক্ষাডটকমের অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রার্থীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে অভিযোগ করেন, প্রতিষ্ঠানে কাম্য সংখ্যক মহিলা শিক্ষক নেই। এমপিও নীতিমালা অনুসারে প্রতিষ্ঠানে মহিলা শিক্ষকের নির্ধারিত কোটা পূরণ না থাকায় তারা এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না।
জানা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিম্ন মাধ্যমিক স্তর, মাধ্যমিক স্তর ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর ইত্যাদি এবং মাদরাসার ক্ষেত্রে ইবতেদায়ি, দাখিল, ফাযিল, কামিল আলাদা আলাদা শাখা রয়েছে। এমনিভাবে কারিগরি প্রতিষ্ঠানেরও রয়েছে এরকম স্কুল, মাধ্যমিক, টেকনিক্যাল, বিএমসহ কিছু স্তুর। কিছু প্রতিষ্ঠানে একাধিক স্তর থাকলেও ইআইআইএন নম্বর একটি। মাঠপার্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে স্তরভিত্তিক আলাদা হিসেব করে মহিলা কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইআইআইএন ভিত্তিক হিসেব করলে মহিলা কোটা পূরণ হয়। কিন্তু স্তরভিত্তির হিসেব করায় এক স্তরে মহিলা শিক্ষকের অধিক্য দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে অপর একটি স্তরে মহিলা কোটা পূরণ হচ্ছে না। মাঠপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ইআইআইএন বা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক হিসেব করা হলে অনেক প্রতিষ্ঠানের মহিলা কোটার জটিলতা নিরসন হবে।
এসব প্রতিষ্ঠান মহিলা কোটার পদ নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্তরভিত্তিক আলাদা হিসাব না করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মরত মহিলা শিক্ষকদের সংখ্যার ওপর মহিলা কোটার পদ নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এনটিআরসিএতে সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করেছে। সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদারাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও কারিগরি মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহপরিচালক উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তাই, স্কুল কলেজ ও মাদরাসা পর্যায়ের অনেক শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। কারণ এখনো সেসব প্রতিষ্ঠানে মহিলা কোটা নির্ধারণে স্তরভিত্তিক হিসেব করা হচ্ছে।
মাঠপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা নামপ্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এক এক স্থানে এক এক রকমভাবে হিসেব করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বা মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পাইনি। সমন্বয়হীনতার কারণে সম্পূর্ণ বিধিসম্মত নিয়োগ নিয়েও অনেক প্রার্থী এমপিওভুক্ত হতে পারছে না। আবার অনেক উপজেলায় জটিলতা হয়নি, প্রার্থীরা এমপিওভুক্তও হয়ে গেছেন। যার কারণ সেসব উপজেলায় প্রতিষ্ঠানভিত্তিকভাবে মহিলাকোটা নির্ধারণ করা হয়েছে। সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পাইনি।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র দৈনিক শিক্ষাকে জানায়, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মহিলা কোটার পদ সংখ্যা নির্ধারণে শাখাভিত্তিক আলাদা হিসাব না করে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মহিলা শিক্ষকের সংখ্যা বিবেচনা করার সিদ্ধান্তের কথা গত ২৯ মে চিঠি দিয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরকে জানিয়েছে এনটিআরসিএ। সে প্রেক্ষিতে গত ১৭ জুন জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে শাখাভিত্তিক আলাদা হিসাব না করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মরত মহিলা শিক্ষকদের সংখ্যার ওপর মহিলা কোটার পদ নির্ধারণ করে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে এমপিও আবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে।
এদিকে এনটিআরসিএর একজন কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রতিষ্ঠান থেকে শূন্য পদের চাহিদা দিয়েছে। সে চাহিদা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা যাচাই করেছেন। প্রার্থীরা সেসব পদে এনটিআরসিএর সুপারিশ পেয়ে যোগদান করেছেন। এখন তাদের এমপিও হচ্ছে না। প্রার্থীদের জটিলতার বিষয়টি এমপিও প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করছে না। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করেন। কিন্তু প্রার্থীরা তাদের জটিলতা নিয়ে সেসব প্রতিষ্ঠানে গেলে বলা হয় এনটিআরসিএতে আসতে। কিন্তু এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান প্রধান চাহিদা দিয়েছেন ও মাঠপর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা তা যাচাই করে দিয়েছেন। সে প্রেক্ষিতে এনটিআরসিএ প্রার্থী সুপারিশ করেছে। মহিলা কোটার জটিলতা নিয়ে বহু প্রার্থী এনটিআরসিএ অফিসে ভীর করছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলেই ভুক্তোভোগী হচ্ছে প্রার্থীরা।
এদিকে কয়েকজন প্রার্থী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আলাদা হিসেব করা হলেও বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে মহিলা কোটা পূরণ হয়না। সেসব প্রতিষ্ঠানে কোনো মহিলা শিক্ষকই নেই। থাকলেও খুবই কম। তাই, এরকম প্রতিষ্ঠানের প্রার্থীরা কোনদিন এমপিওভুক্ত হতে পারবেন না। তাই, প্রার্থীদের দাবি, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে বা এনটিআরসিএর ২য় চক্রে নিয়োগ সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে মহিলাকোটা বিবেচনা না করে এমপিওভুক্ত করা হোক। কারণ প্রার্থীরা আবেদনের সময় জানতেন না ওই প্রতিষ্ঠানে কয়জন মহিলা শিক্ষক কর্মরত আছেন। আর প্রার্থীরা একাধিক মেধাযাচাই প্রক্রিয়া উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগ সুপারিশ পেয়েছেন। কিন্তু মেধাতালিকায় তাদের থেকে পেছরন থেকেও অনেকে নিয়োগ সুপারিশ পেয়ে যোগদান করে এমপিওভুক্ত হয়ে গেছেন। কিন্তু মেধাতালিতায় এগিয়ে থাকা বিধি সম্মতভাবে এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ সুপারিশ পাওয়া অনেক প্রার্থী মহিলা কোটার মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না।