সরকারিকরণের দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা। শনিবার (৬ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ষষ্ঠ দিনের মতো তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। সকালে আন্দোলনে যোগ দিতে নীলফামারী থেকে আসার পথে আব্দুল গণি নামে একজন শিক্ষক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন শিক্ষকরা। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এর আগে, রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণসহ বিভিন্ন দাবিতে বেশ কয়েকবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকরা। আবারো আন্দোলনে নেমেছেন তারা। প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে জানিয়ে সমিতির মহাসচিব কাজী মোখলেছুর রহমান দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, ছয় দিন ধরে অবস্থান ধর্মঘট পালন করলেও কোনো সরকারি প্রতিনিধি আসেননি। বেতনবিহীন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা নীতিমালা ২০১৮ তে যে সমস্ত শর্ত লিপিবদ্ধ করা হয়েছে তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেতনভুক্ত সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদরাসার জন্য প্রযোজ্য নয়। এ ধরনের কঠিন শর্ত প্রত্যাহার করে সহজ শর্তে বাংলাদেশ মাদরাসা বোর্ড কর্তৃক রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা সরকারিকরণের দাবি জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা সরকারিকরণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব। এ সময় শিক্ষা সচিবের দেয়া প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, সারা দেশে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা প্রায় ১৫ হাজার। প্রতিটিতে শিক্ষক রয়েছেন পাঁচজন করে। সব মিলে প্রায় ৭৫ হাজার শিক্ষক রয়েছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসায়। কিন্তু মাত্র ১ হাজার ৫১৯টি মাদরাসার প্রধান শিক্ষক দুই হাজার ৫০০ ও সহকারী শিক্ষকরা ২ হাজার ৩০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। বাকি শিক্ষকরা ভাতা বঞ্চিত।
অবস্থান কর্মসূচিতে ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা। দাবিগুলো হল, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা নীতিমালা ২০১৮ সংশোধন করে সহজ শর্তে সরকারিকরণ করা, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতি নবায়নের সহজ আইন প্রণয়ন করা, পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত সকল শিক্ষককে বহাল রাখা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার স্থায়ী রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা, ২ জন আলিম শিক্ষকের মধ্যে ১ জন এইচএসসি (সমমান) শিক্ষক অন্তর্ভুক্তিকরণ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো প্রতিটি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার অফিস সহায়ক নিয়োগ প্রদান, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের পিটিআই ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ইবতেদায়ি মাদরাসার আসবাবপত্রসহ ভবন নির্মাণ। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের কোডপ্রাপ্ত ৬ হাজার ৯৯৮ ও মন্ত্রণালয়ের আবেদন করা মাদরাসাগুলোকে কোড প্রদান করে সব মাদরাসাকে সরকারিকরণ করা।
অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত রয়েছেন, সমিতির সহ সভাপতি মাওলানা মো. শাহজাহান, এ বি এম আব্দুল কুদ্দুস, আবু মুসা ভূঁইয়া, মো. ইনতাজ বিন হাকিম, মো. সামছুল আলম, হাফেজ মাহমুদ, নাসরিন বেগম, আলেয়া খাতুন, হাফিজা খাতুন, লাভলী আক্তার, অজুপা খাতুন, মানছুরা, মাহফুজা, মাকসুদুল হক, হাসান, গোলাম মোস্তফা, শফিকুল ইসলাম, মুক্তারুল ইসলাম, আব্দুল ওহাব, মাওলানা জাহিদ, আব্দুর রাজ্জাক, অনিক মাহমুদ, আব্দুল হালিম, আমিনুল ইসলাম, আবু বক্কর ছিদ্দিক, রাশেদুল ইসলাম, আলামিন, নজরুল ইসলাম, মফিজ উদ্দিন, শরিফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।