কোটা বাতিল করা হলেও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থীরা সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সব সময় অগ্রাধিকার পাবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর বেইলি রোডে রোববার (২৮ অক্টোবর) বিকালে ‘শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যদিও আমরা কোটা প্রত্যাহার করেছি। তারপরও আমার নির্দেশ আছে পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে বলে দিয়েছি, পার্বত্য অঞ্চল বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, পাহাড়ী হোক, সমতল ভূমি হোক, সেখানে যে প্রার্থী থাকবে; তারা সবসময় অগ্রাধিকার পাবে।
“এটা আমরা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি এবং করে দেব; সেটা আপনাদেরকে আমরা কথা দিতে পারি।”
দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।
এই কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে কয়েক মাস আগে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল সংসদে বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতিই আর রাখা হবে না।
মন্ত্রিসভা গত ৩ অক্টোবর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগে সচিব কমিটির সুপারিশে সায় দেয়।
এরপর থেকে কোটা বহালের দাবি জানিয়ে আসছে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বিভিন্ন সংগঠন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (শন্তু লারমা) প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “গোটা বাংলাদেশে পাহাড়ের ও সমতলের আদিবাসী জনগণ ভালো নেই। তারা যেন ভালো থাকতে পারে; সেজন্য আপনি ভালোভাবে ভাববেন।”
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কার্যপরিধি ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৭৬ সালে জারি করা ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অধ্যাদেশ’ বাতিল করে ২০১৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বোর্ড আইন প্রণয়ন করা হয়।
এতে পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন কার্যক্রমে আরও গতি সঞ্চারিত হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
“পার্বত্য চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে আমরা এক হাজার ৬৫৯ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করেছি। পাহাড়ী জনগণের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মানোন্নয়নে রাঙমাটিতে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। বান্দরবানে নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি।”
তিনি বলেন, “দুই দশক এই অঞ্চলটা সম্পূর্ণ অবহেলিত ছিল। এই অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকার কোনো পথই ছিল না বলতে গেলে।”
ওই অঞ্চলের উন্নয়নে আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদকে প্রকল্প তৈরিরতাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদ আছে; আমি তাদেরকেও বলব, স্ব স্ব অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে কী কী করণীয়.. আপনারা নিজেরাও প্রকল্প তৈরি করতে পারেন বা আপনারাও প্রস্তাব আনতে পারেন। যা আমরা বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে বাস্তবায়ন করে দিতে পারব। যাতে কোনো মতে আর পিছিয়ে না থাকেন।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আর কোনো সংঘাত না। শান্তিচুক্তি করেছি আমরা পাহাড়ে। সে শান্তি যেন বজায় থাকে। শান্তির পথ ধরেই সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারেন।”
অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
স্বাগত বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নুরুল আমিন।