সরকারের দিকে তাকিয়ে জাকসু নির্বাচন! - Dainikshiksha

সরকারের দিকে তাকিয়ে জাকসু নির্বাচন!

রাসেল রাব্বী |

দুই দশকের মাথায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) নির্বাচন আয়োজন করা হলেও তা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোলে চাপা পড়ে যায়। তখন বলা হয়েছিল, জাতীয় নির্বাচনের পর জাকসু নির্বাচন করা হবে। ইতিমধ্যে চার বছর পার হয়েছে। আরেকটি জাতীয় নির্বাচন দোরগোড়ায়। কিন্তু সেই জাকসু নির্বাচন আর আয়োজন করার উদ্যোগ নেই।

চার বছর আগে স্থগিত করা ওই নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজ বলেন, সরকার না চাইলে জাকসু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
স্বায়ত্তশাসিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের অনেকের মত হচ্ছে, এখনকার প্রশাসনের মধ্যেও জাকসু নির্বাচন করতে কোনো উদ্যোগ নেই।

দুই যুগেও নির্বাচন হলো না
জাকসু ভেঙে দেওয়ার পর ২৪ বছর পার হয়েছে। এই সুদীর্ঘ সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া, গণমাধ্যমে আলোচনা এবং অজস্র সংবাদে ঘুরেফিরে জাকসু নির্বাচনের কথা এসেছে, কিন্তু নির্বাচন হয়নি। অথচ এই নির্বাচনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণের প্রক্রিয়া। এই সময়ে ১১ জন উপাচার্য বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করলেও কেউই নির্বাচনের জন্য দৃশ্যমান এবং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেননি।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক স্বাধীন সেন বলেন, ‘১৯৯২ সালের শেষে জাকসু নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলাম। কিন্তু এরপর কোনো প্রশাসন নির্বাচনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।’
১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পরের বছরই প্রথম জাকসু নির্বাচন হয়। এরপর বিভিন্ন মেয়াদে বিরতি দিয়ে আরও আটবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে বিএনপি সরকারের সময় নির্বাচন হয়। এতে সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন মাসুদ হাসান তালুকদার এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হন শামসুল তাবরীজ। ১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই শিক্ষক ক্লাবে ছাত্ররা শিক্ষকদের ওপর হামলা চালান। এর জের ধরে প্রশাসন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ভেঙে দেয়। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি।

শেষ উদ্যোগটিও ভেস্তে যায়
২০১৩ সালে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন জাকসু নির্বাচনের ঘোষণা দেন। এ ঘোষণায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাড়া পড়ে যায়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজকে প্রধান করে নির্বাচন কমিশনও গঠন করা হয়। নির্বাচন কমিশন ওই বছর ১৯ থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ করে। এ সময়ের মধ্যে ৪২৫টি মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়। কিন্তু তখন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল এবং ছাত্রলীগের কেউ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেনি।

এ ছাড়া কমিশন প্রথমবারের মতো জাকসু নির্বাচনে এমফিল এবং পিএইচডির শিক্ষার্থীরা প্রার্থী হতে পারবেন বলে ঘোষণা দেন। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানান। মনোনয়নপত্র বিতরণের প্রথম দিনই এর বিরোধিতা করে ক্যাম্পাসে মিছিল করে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট। মিছিল শেষে জোটের নেতা-কর্মীরা উপাচার্য আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিন ২৬ নভেম্বর এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্বাচন কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। কমিশন আরও বলে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। কিন্তু এরপর আর কোনো আয়োজন করা হয়নি।

এ বিষয়ে অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজ বলেন, ‘কাউকে সুবিধা দেওয়ার কোনো চেষ্টা ছিল না। নানা রকম প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা আন্তরিকভাবেই নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে আমার যা অভিজ্ঞতা, তা হলো সরকার না চাইলে এ নির্বাচন করা সম্ভব নয়।’
সংসদ নেই, ফি আছে

দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ না থাকলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংসদ বাবদ ফি আদায় করা হচ্ছে। বছরে ১৫ টাকা করে ভর্তির সময়ই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এ ফি আদায় করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, এ খাতের টাকা শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার প্রয়োজনে ব্যয় করা হয়। জাকসু থাকলে সেটির মাধ্যমেই ব্যয় করা হতো। কিন্তু এখন সংশ্লিষ্ট কমিটির মাধ্যমে ব্যয় করা হয়।
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ না থাকায় ফজিলাতুন্নেছা হল–সংলগ্ন জাকসু ভবন বছরজুড়ে নিষ্প্রাণ পড়ে থাকে। তবে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী র্যা গ উৎসবের দু-এক মাস আগ থেকে জাকসু ভবন হয়ে ওঠে র্যা গারদের প্রাণকেন্দ্র। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাদের আড্ডা চলে সেখানে। তা ছাড়া একতলা এই ভবনের কয়েকটি কক্ষে প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুল ‘আনন্দশালা’র কাজ চলে।
কেন হয় না নির্বাচন

কেন হয় না নির্বাচন? এ প্রশ্নের জবাবে অধিকাংশেরই ধারণা, যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের অনিচ্ছার কারণেই এ নির্বাচন হয় না। নির্বাচনের মতো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে নেতৃত্ব বাছাই করা হলে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্রনেতারা বাদ পড়ে যেতে পারেন। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর পেশিশক্তির যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তাতে দৃশ্যত অনেক কর্মী-সমর্থক থাকলেও ভোটের রাজনীতিতে এ চিত্র পাল্টে যেতে পারে। আর তাই ঝুঁকি নিয়ে এ নির্বাচন করার আগ্রহ তাদের নেই।
ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক নজির আমিন চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও এর নীতিনির্ধারকেরা মূলত সরকারেরই অংশ। আর যেহেতু সরকারের সবুজ সংকেত নেই, তাই এ নির্বাচন হয় না।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, ‘কেন নির্বাচন হয় না সেটা বলা মুশকিল। তবে আমরাও নির্বাচন চাই। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করব।’
উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘দেশের কোথাও এ নির্বাচন হচ্ছে না। কিন্তু আমরা এ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। সামনে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচন। সেটা সফলভাবে করতে পারলে আমরা জাকসুর দিকেও আগাব।’

সূত্র: প্রথম আলো

কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003154993057251