কুমিল্লার দেবিদ্বারে চার সহপাঠীর মারধরে প্রাণ গেল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র অনিক চন্দ্র বর্মণের (৮)। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের জীবনপুর গ্রামে। জীবনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মঙ্গলবার টিফিনের সময় মারধরের পর বৃহস্পতিবার রাতে তার মৃত্যু হয়। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার বেলা আড়াইটায় লাশ পরিবারে কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। অনিক ওই গ্রামের অটো রিকশাচালক অর্জুন চন্দ্র বর্মণের একমাত্র ছেলে।
স্থানীয়রা ও বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী তপন বর্মণ জানান, অনিককে প্রথমে সহপাঠী ছাত্র জাহিদ ঘুসি মারে। জাহিদের পক্ষে পঞ্চম শ্রেণির জুবায়ের, রনী ও চতুর্থ শ্রেণির জাহিদুলসহ ৪ জনেই অনিককে মারধর করে। এ সময় তাকে প্রধান শিক্ষকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি বিষয়টি মিটমাট করে দেন। কিন্তু মারধরের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়লে সে গত দু’দিন স্থানীয় ডাক্তারের চিকিৎসাধীন ছিল। রক্তবমি শুরু হলে তাকে ঢাকায় নেওয়ার পথে বৃহস্পতিবার রাত ২টায় মারা যায়।
স্থানীয়রা আরও জানান, অনিক শান্ত প্রকৃতির ছেলে ছিল। তাকে বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরা প্রায়ই মারধর করত। অনিকের বাবা আগে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। অনিকের ৬ বছর বয়সে তার মা মারা যান। এরপর অনিকের বাবা আরেকটি বিয়ে করেন।
ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক শারমিন সুলতানা জানান, ঘটনার সময় টিফিন পিরিয়ড থাকায় আমরা অফিস কক্ষে ছিলাম। অনিকের মা এসে অভিযোগ করেন, ৪ ছাত্র মিলে তার ছেলেকে বেধড়ক মারধর করেছে। তখন ছেলেদের ডেকে জিজ্ঞাসা করি। তারা একজন আর একজনকে কিল-ঘুসি মেরেছে এমনটাই জানায়। আমরা তাদের বিবাদ মিটিয়ে দিই।
প্রধান শিক্ষক আবদুল মতিন ভূঁইয়া জানান, অনিক সম্ভবত আগে থেকেই অসুস্থ ছিল। কেউ কেউ বলছেন, তার জন্ডিস রোগ ছিল। শিক্ষার্থীরা একে অপরকে মেরেছে-সে আলোকে থানায় রসুলপুর ও সুবিল ইউপি চেয়ারম্যানদের উপস্থিতিতে ছেলের বাবা অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সন্তানের শোকে মুহ্যমান অনিকের বাবা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। আর একটু পরপর বলছেন, ওরা ৪ জন আমার ছেলেকে কিল-ঘুসি, লাথি মেরে বুকের পাঁজর ভেঙে ফেলেছে। রক্তবমি করতে করতেই আমার ছেলে রক্তশূন্য হয়ে মারা গেল।