করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকার গত ১৭ মার্চ হতে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোও বন্ধ। এ অবস্থায় বন্ধ আছে শিক্ষকদের বেতন ভাতাও। স্কুলগুলোর পরিচালকরা বলছেন শিক্ষার্থীদের বেতনের উপর নির্ভর করে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন হয়। আর অধিকাংশ বিদ্যালয় ভাড়া ভবনে পরিচালিত। শিক্ষার্থীদের বেতন তুলতে না পারায় শিক্ষকদের বেতন দেয়া হচ্ছে না।
এদিকে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ও ভবনের ভাড়া দিতে না পেরে বেকায়দায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। মানবেতর জীবন যাপন করছে শিক্ষক কর্মচারীরা। নওগাঁয় বন্ধ থাকা শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ হাজারেরও বেশি শিক্ষক কর্মচারীরা নিরুপায়। তাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রণোদনা বা অনুদান সহায়তার আবেদন জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন শিক্ষকরা। গত ১৮ মে সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর করা আবেদন পাঠানো হয়েছে।
আবেদনে বলা হয়, নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর, পত্নীতলা, ধামইরহাট ও সাপাহার উপজেলার শতাধিক কিন্ডারগার্টেনের ১ হাজারেরও বেশি শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনসমাগম এড়াতে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ এবং পরবর্তী সময়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ ছুটির কারণে দেশের কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীগণ অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে সবকিছু বন্ধ থাকায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এরমধ্যে সামনে ঈদ উল ফিতর। স্ব স্ব অর্থায়নে পরিচালিত কিন্ডারগার্টেনগুলো নানা কারণে অর্থনৈতিক দুরবস্থার শিকার। কিন্ডারগার্টেনগুলো বেশিরভাগ ভাড়া ভবনে পরিচালিত। শিক্ষক কর্মচারীরাও অনেকাংশে বেকার ও দুর্দশাগ্রস্থ। শিক্ষক কর্মচারীরা খুব সামান্য বেতনে শিক্ষকতা করে দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে গড়ে তোলার গুরুদায়িত্ব পালন করে আসছে। এ মহাদুর্যোগে কিন্ডারগার্টেনগুলোর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ প্রি-ক্যাডেট এন্ড কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের মহাদেবপুর উপজেলা শাখার সভাপতি আইনুল হোসেন, পত্নীতলা উপজেলার সভাপতি আশরাফুল ইসলাম, সাপাহার উপজেলার সভাপতি মতিউর রহমানসহ অন্যান্য নেতারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদনটি পঠিয়েছেন।
আইনুল হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, দেশে বর্তমানে ৫০ হাজারেরও অধিক কিন্ডারগার্টেনে প্রায় ১০ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োজিত, যাদের প্রায় সকলে অসহায় অবস্থায় আছেন। তারা আত্মসম্মানের জন্য না পারছে ত্রাণ চাইতে, আবার না পারছে অন্য কোনো কাজ করতে। অনেকে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। এদের মধ্য থেকে আমরা নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর, পত্নীতলা, ধামইরহাট ও সাপাহার উপজেলার ৮৯টি কিন্ডারগার্টেনের ১ হাজর ২০ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অন্তত মার্চ থেকে মে মাসের বেতন, প্রণোদনা অথবা অনুদান দিলে প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের পরিবার পরিজন, বৃদ্ধ বাবা-মা ও ছোট ছোট সন্তান-সন্ততি নিয়ে রমজান ও ঈদে তাদের ছোট ছোট সন্তানদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারবে।
তিনি আরও দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী আমাদের মা। কোনো মা-ই সন্তানের বিপদে চুপ থাকতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রী কাউকে নিরাশ করেন না। আমরাও বিশ্বাস করি, তিনি আমাদেরকেও নিরাশ করবেন না। তিনি সকলের মতো তাঁর এ সন্তানগুলোর জন্য ঈদের আগেই কোনো ভালো খবর দিয়ে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা ঈদ উল ফিতরে পরিবার পরিজনসহ তাদের ছোট ছোট সন্তানদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলবেন।