ভয়াবহ এমপিও কেলেংকারির সন্ধান পাওয়া গেছে। জড়িত দশজনের মধ্যে একজনেরটা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ইএমআইএস সেলের প্রোগ্রামার মো. সাইফুর রহমান। তার বিরুদ্ধে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাইফুরের বিরুদ্ধে দুদকেও অভিযোগ জমা হয়েছে বলে দুদকের সংশ্লিষ্ট অফিসাররা বলেছেন।
এছাড়াও সেসিপ প্রকল্পে প্রোগ্রামার পদে অস্থায়ী চাকরি পাওয়া সাইফুরের হাতে শিক্ষা অধিদপ্তরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থ সংশ্লিষ্ট কাজ এমপিওভুক্তির চূড়ান্ত কাজের ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড ছিল। নানা অভিযোগে সাইফুরকে বরিশালে বদলি করা হলেও তাকে বেশিরভাগ সময়ে শিক্ষা অধিদপ্তরে অবস্থিত ইএমআইএস সেলে, শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার পরিচালকের কক্ষে ও কক্ষের সামনে ঘুর ঘুর করতে দেখা যায়। দুই বছর আগে বদলি করা হলেও সাইফুর তার পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত তিন বছরে সাইফুরকে নিয়ে দৈনিকশিক্ষায় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও কয়েকজন কর্মকর্তা দাবী করেন যে, ‘সাইফুর একটি ভালো ছেলে।’
তবে, গত মাসে সাইফুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এর আগে এই সাইফুরের বিরুদ্ধে একই বিষয়ে সেসিপের উপ-পরিচালক মোরশিদুল হাসান তদন্ত করে সাইফুরের বিরুদ্ধে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে হাজার হাজার এমপিওভুক্তির সত্যতা পায়।চলতি বছরেরে এপ্রিলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ওই প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ফাইলসমেত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয় থেকে হাওয়া করে দিয়েছেন সাইফুর, এমন অভিযোগ সবার মুখে মুখে।
দৈনিক শিক্ষার দু্ই বছরের অনুসন্ধানে জানা যায়, কুরিয়ারের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম থেকে কয়েকদিনের ব্যবধানে আঠারো লাখ ৫০ হাজার টাকা আসে সাইফুরের কাছে।দৈনিকশিক্ষার হাতে থাকা তথ্য প্রমাণে দেখা যায়, ২০১৪ সালের মে থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে কুড়িগ্রামের আশু নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে মোট সাড়ে আঠারো লাখ টাকা আসে। ওই টাকার গ্রহীতা সাইফুর রহমান। কুরিয়ারে ব্যবহার করা সাইফুরের মোবাইল নম্বর ০১৫৫৮৪৮০৩১৮। তবে, কয়েকমাস যাবত ওই মোবাইলটি সাইফুর ব্যবহার করেন না। এখন যে নম্বরটি সাইফুর ব্যবহার করেন তার শেষে ৪০৯৭। টাকা প্রেরণকারী আশুর মোবাইল ০১৭১৬৪৮০৮৭২।
সাইফুরের নিজ বাড়ী চুয়াডাঙ্গা জেলায়। নানার বাড়ী নোয়াখালী।
সেসিপের ইএমআইএস সেলে প্রোগ্রামর পদে চাকরি পাওয়ার আগে সাইফুর পরিবহন পুল ভবনে অবস্থিত জন্ম নিবন্ধন প্রকল্পে সহকারি প্রোগ্রামার পদে অস্থায়ী চাকরি করতেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক কর্মকর্তা শিক্ষা ক্যাডারের মো. আফসার উদ্দিনের কক্ষেও সাইফুরকে দেখা যায়। এমপিও দালাল ইউসুফ ও রমজানকেও দেখা যায় সাইফুরের সঙ্গে ঘুর ঘুর করতে।
শিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাইফুর বিগ শট। উপরে যোগাযোগ, তাকে নিয়মিত অফিস করতে বলার সাহস কয়জনের আছে?
সাইফুরকে মাঝে মাঝে জাতীয় সংসদ ভবনের আশেপাশেও দেখা যায়। স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগ এমপির কাছে থেকে ডিও লেটার নিয়ে গত বছর সেসিপে আবার চাকরি নিয়েছেন সাইফুর। সাংবাদিকতার পরিচয়পত্র নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা ভবনে যাতায়াত করা কয়েকজন শিবির নেতা-কর্মীর সঙ্গেও রয়েছে সাইফুরের সখ্য।
আজ ১১ আগস্ট সকাল ১০টা ৮ মিনিটে সাইফুর দৈনিক শিক্ষায় ফোন করে বলেন, যে অভিযোগের বিষয়ে তার কিছু কথা রয়েছে।
সাইফুর তথা দেদার এমপিও দুর্নীতি বিষয়ে এমপিওর দায়িত্ব প্রাপ্ত মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. এলিয়াছ সাংবাদিকদের বলেন, এমপিওর সবকিছু সফটওয়ারের মাধ্যমে হয়। জালিয়াতি করার কোনো সুযোগ নেই।
শিক্ষা অধিদপ্তেরের একাধিক অফিসার দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, পরিচালক পদে চাকরির জন্য এমপিওর মারপ্যাচ বোঝা দরকার, প্রশাসন বোঝা দরকার।
দৈনিকশিক্ষার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এলিয়াছকে দু’দুবার বদলি করতে চেয়েছিলেন মন্ত্রী। কিন্তু একজন তা ঠেকিয়েছিন জোর তদবির করে।