সাত কলেজকে নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় দাবি - দৈনিকশিক্ষা

সাত কলেজকে নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় দাবি

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের কথা ভেবে রাজধানীর সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনা হয়েছিলো কি না সে প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন। একইসঙ্গে এই সাত কলেজকে নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। 

সম্প্রতি গঠনের মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে বাতিল হওয়া পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন সমন্বয় কমিটির অন্যতম এই সদস্য গতকাল নিজের ফেসবুক পোস্টে এ দাবি তোলেন। 

তিনি লিখেছেন, ‘৭ কলেজের শিক্ষা সংকট-সমাধান কোন পথে’- এই শিরোনামে আজকে সকালে ঢাকা কলেজের অডিটোরিয়ামে একটি শিক্ষার্থী-শিক্ষক আলোচনা সভা ছিলো। সকাল ১০-১১টা আমার একটা ওরিয়েন্টেশন ক্লাস ছিল। ক্লাস থেকে বের হয়েই দেখি ঢাকা কলেজে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আয়োজকদের অন্যতম একজন অপেক্ষা করছেন। ওকে সাথে নিয়ে গেলাম সেই অনুষ্ঠানে। সেখানে গিয়ে দেখি আমার বন্ধু প্লাস সহকর্মী তাসনিম সিরাজ, আমার অত্যন্ত প্রিয় মানুষ ও বন্ধু রাখাল রাহা এবং আমার আরেক সহকর্মী অধ্যাপক আইনুল ইসলাম মঞ্চে উপবিষ্ট। এছাড়া মঞ্চে আরো ছিলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস।’

তিনি আরো লিখেছেন, ‘এই ঢাকা কলেজ অত্যন্ত ঐতিহ্যবাহী একটি কলেজ। এখানে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন ওয়াল্টার জেনকিন্স। যিনি পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বিভাগীয় প্রধান ও পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিয়ালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরও হয়েছিলেন। মেঘনাদ সাহা এবং বর্তমানে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাহিদ হাসানও ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন। ঢাকা কলেজ ঠিক তেমনি এক ঐতিহবাহী কলেজ।’

অধ্যাপক মামুন লিখেছেন, ‘আজকের ঢাকা কলেজ ততদিনই সম্মানে গৌরবে শীর্ষে ছিল যতদিন এখানে অনার্স মাস্টার্স ছিল না। পৃথিবীর কোনো দেশের এমন একটি প্রতিষ্ঠান দেখান যেখানে এইচএসসিও আছে আবার একইসাথে অনার্স মাস্টার্সও আছে। আমাদের দেশের অনেক কলেজে শুধু অনার্স মাস্টার্স না সাথে বিএ/বিএসসি পাসকোর্সও আছে, আবার তার সাথে এইচএসসিও আছে। এতগুলো থাকা মানে আমরা কোনটিকেই গুরুত্ব দেই না। ফলে কোনটিই আর ভালো মানের হয় না।’      
তিনি লিখেছেন, ‘ঢাকা কলেজের মত আরো ছয়টি কলেজ আছে যারা অতিহ্যবাহী যেমন ইডেন কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, তিতুমীর কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং বাংলা কলেজ। ছাত্রের সংখ্যা এবং কলেজের আয়তনের দিক থেকে এর প্রত্যেকটি কলেজ বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বড়। এই ৭টি কলেজের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষক নিয়োগ ও বদলি পদায়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। যেই কলেজে অনার্স মাস্টার্স আছে সেই কলেজের শিক্ষকদের বদলি এবং বিসিএস ক্যাডার হয় কি করে? তাদের যোগ্যতা ও বেতন হবে বিসিএস ক্যাডারের চেয়ে বেশি এবং সরাসরি স্থায়ী নিয়োগ ও পদায়ন হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ ও প্রমোশন নীতিমালা অনুসরণ করে। তখন স্বাভাবিকভাবেই ইফেক্টিভলি এইগুলো হবে একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়।’
 
তিনি আরো লিখেছেন, ‘যারা ৭ কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এনেছিলেন তারা কি ছাত্রদের মঙ্গলের কথা ভেবে এনেছিলেন? যারা আমাদের ৩ বছরের অনার্স আর ১ বছরের মাস্টার্স থেকে ৪ বছরের অনার্স আর ১ বছরের মাস্টার্স করেছিলেন তারা কি শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের কথা ভেবে করেছিলেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে যখন তখন বিভাগ খোলা হলো সেগুলো কি শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের কথা ভেবে খোলা হয়েছিল? যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় করে ৮০০ এর বেশি কলেজে অনার্স মাস্টার্সের দোকান খুলে দিলেন তারা শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের কথা ভেবে করেছিলেন? যারা জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় খুলে ছিলেন তারা কি শিক্ষার্থীদের' মঙ্গলের কথা ভেবে খুলেছিলেন? কেউ কোন কিছুই ছাত্রদের মঙ্গলের কথা ভেবে করে না। এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য।’

অধ্যাপক মামুন আরো লিখেছেন, ‘কিছুদিন আগে আমি প্রস্তাব করেছিলাম ৭টি কলেজ নিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হউক যার নাম সকলে আলোচনা সাপেক্ষে ঠিক হতে পারে। কিন্তু কার্যক্রম হবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত। এর নাম হতে পারে ঢাকা সিটি ইউনিভার্সিটি। এই কলেজগুলোতে ৪ বছরের অনার্স থাকবে। অনার্স পড়ানোর মত পর্যাপ্ত পিএইচডি ডিগ্রিধারী যোগ্য শিক্ষক থাকবে এবং একটি সেন্ট্রাল প্রশাসনিক ক্যাম্পাস থাকবে যেখানে গবেষণার সুবিধাসহ মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রির জন্য পড়াবে। এমনকি ৭ কলেজকে ভেঙে সহজেই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ও বানানো যায়। যেটাই করা হউক না কেন মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ ও পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার্থীদের উন্নত মানের আবাসিক ব্যবস্থা করলে দেশের শিক্ষার মানের অভূতপূর্ব উন্নতি হবে। প্রয়োজনে বিদেশি শিক্ষকও নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তো বিদেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থী থাকা একান্তই কাম্য। এইজন্যই তো এটিকে বিশ্ব বিদ্যালয় বলে। এই সরকারকেই দ্রুত এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। রাজনৈতিক সরকার আসলে আবার আমরা দুষ্ট চক্রের আবর্তে ঘুরপাক খাওয়ার আশংকা করছি।’

বেতন ও বিবেকের স্বাধীনতায় পিছিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষকরা - dainik shiksha বেতন ও বিবেকের স্বাধীনতায় পিছিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষকরা দ্রুত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে - dainik shiksha দ্রুত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচি শুরু - dainik shiksha বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচি শুরু শিক্ষকদের কথার মূল্যায়ন: শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন সামাজিক চুক্তি - dainik shiksha শিক্ষকদের কথার মূল্যায়ন: শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন সামাজিক চুক্তি বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রত্যাশা - dainik shiksha বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রত্যাশা শিক্ষকের কণ্ঠস্বর হোক সামাজিক অঙ্গীকার - dainik shiksha শিক্ষকের কণ্ঠস্বর হোক সামাজিক অঙ্গীকার কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064430236816406