সাত কলেজের আন্দোলন অযৌক্তিক - দৈনিকশিক্ষা

সাত কলেজের আন্দোলন অযৌক্তিক

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সাত কলেজ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, তা একেবারেই অযৌক্তিক। অযথাই আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। ছাত্রদের মুখ দিয়ে যা বলানো হচ্ছে বা ছাত্ররা যা বলছে, তার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। বিষয়টি একেবারেই অমূলক। এটি ব্যাখ্যা করলে, মনে হয় ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না। এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে যে ধরনের অস্পষ্টতা রয়েছে, তা দূর হবে। বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) দেশ রূপান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরো জানা যায়, সাত কলেজ আমাকে দেখার জন্য দিয়েছে। এর জন্য কিন্তু বাড়তি কোনো আর্থিক সুবিধা পাচ্ছি না। এখন বুঝতে হবে, একজন ছাত্র যদি ২-৩ বার ফেল করে, তাহলে আমাদের কী করার আছে? আমরা যদি কোনো সুযোগ না দিতাম, তাহলে একটা কথা ছিল। আমরা তো সুযোগ দিয়েছি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য, পাস করার জন্য। এখন তারা পাস করতে পারে না, এই দায়দায়িত্ব কি আমাদের? বিশ্ববিদ্যালয় তো এই দায়িত্ব নিতে পারে না। এরপরও আমরা একটি মিটিং ডেকেছি। সাত কলেজের প্রিন্সিপাল এবং বিভিন্ন অনুষদের ডিন উপস্থিত থাকবেন সভায়। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে অবশ্যই একটি সমাধানে যেতে পারব। এখন ছাত্ররা যে বিষয় সামনে রেখে আন্দোলন করছে, তার কোনো যুক্তিই নেই। একটা যুক্তি থাকত, যদি পুনরায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ না থাকত। কিন্তু তা তো নয়। একজন ছাত্র ২ বার ফেল করার পর, নিয়ম নেই তাকে পাস করানোর। তারপরও করোনার সময়, তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে তৃতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার। সেখানেও অনেকে অকৃতকার্য হয়েছে। এরপর আর কী করার থাকতে পারে? এখন অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরাই আন্দোলন করছে। তারা বলছে, আবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিতে। এটা কী করে হয়! কয়েকজন স্টুডেন্ট বলছে, ‘মানবিক কারণে’ তাদের উত্তীর্ণ করা হোক। এটা কি সম্ভব! বারবার এভাবে যদি সুযোগ দেওয়া চলতেই থাকে, তাহলে তো অন্য ছাত্ররাও এই সুযোগ চাইবে। তাহলে তো আরেক ছাত্রও পড়াশোনা করবে না। তখন কী হবে! শিক্ষক হিসেবে আমাদের কাজ যেমন ছাত্রদের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকা, একই সঙ্গে বিশ^বিদ্যালয়ের আইনকানুনের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের এভাবে ছেড়ে দিলে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে। এটা কিন্তু মনে রাখতে হবে।

আরো পড়ুন : সাত কলেজের সিজিপিএ শর্ত শিথিলে ‘ইতিবাচক সিদ্ধান্ত’

 

সাত কলেজের সমস্যা অনেক। ক্লাসের সাইজ ছোট, শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি, আবার শিক্ষকের সংখ্যা কম। নানান ধরনের শিক্ষা উপকরণের ঘাটতি, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অনিয়মিত। পরীক্ষার আগে ২-৩ দিন পড়াশোনা করে সন্তোষজনক ফল করা যাবে না, এটাই স্বাভাবিক। আবার কলেজগুলোর মধ্যেও সমস্যা রয়েছে। এক কলেজের ছাত্রের খাতা আরেক কলেজে গেলে, অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবেই শিক্ষক তাকে অকৃতকার্য দেখায়। তাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলে। তারা বোঝাতে চায়, এই কলেজ ভালো, আরেক কলেজ খারাপ। স্বাভাবিকভাবেই ভালো কলেজে ছাত্রছাত্রী বেশি ভর্তি হবে। সেই কারণে কোন কলেজের খাতা কোন কলেজে যাবে, সেটা যেন কেউ না বুঝতে পারে সে জন্য আমরা শুধু একটা ‘কোড’ নম্বর ব্যবহার করছি। শিক্ষকদের মধ্যে যদি সততা না থাকে, তাহলে তো মুশকিল। প্রশ্ন আসে, এ ধরনের লেখাপড়া তাহলে ভবিষ্যতে কতটুকু ফল দেবে? এটা মনে রাখতে হবে, শিক্ষার্থীদের প্রতি কিন্তু আমরা বরাবরই সহানুভূতিশীল। আসলে আমরা একটা জটিল সমস্যার মধ্যে পড়েছি। না পারছি স্ট্যান্ডার্ড কমাতে আবার তাদের যে ধরনের সমস্যা, তারও কোনো যথাযথ সমাধান করতে। তবে ক্রমান্বয়ে আমরা সমাধানের দিকেই হাঁটব। তাদের পুরোপুরি বিশ^বিদ্যালয়ের নিয়মের মধ্যেই নিয়ে আসা হবে। এখন কিন্তু আমরা পরীক্ষার জন্য বিশেষ অনুমতি দিচ্ছি। তবে ভবিষতে এ বিষয়ে সতর্ক থাকব। এ জন্যই আজ (মঙ্গলবার) একটা জরুরি সভা ডাকা হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটা লক্ষ্য ছিল অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ বিশ^বিদ্যালয়ে যে রকম অধিভুক্ত কলেজ থাকে, আমাদের কলেজগুলোও যেন মূল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানমতোই হয়। অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের অনেক ছাত্র নবেল পেয়েছে, পৃথিবীখ্যাত হয়েছে। আমাদেরও লক্ষ্য ছিল, সাত কলেজকে বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গে এনে তার মান উন্নয়ন করা। এরাতো আমাদেরই সন্তান। তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে, আমরা যেন সাত কলেজের মান উন্নত করতে পারি লক্ষ্য কিন্তু সেটাই। আমরা সেদিকেই খেয়াল রাখছি। এখন সাত কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সাইকোলজিটাও আমাদের বুঝতে হবে। সাধারণত যারা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না, তারাই কিন্তু সেসব কলেজে ভর্তি হচ্ছে। তখনই তাদের মধ্যে একটা হতাশা-হীনম্মন্যতা কাজ করে। এসব কারণে তাদের ফলটাও ভালো হচ্ছে না। এসব যদি দূর করা যায়, তাহলে শিক্ষার আসল যে লক্ষ্য তা পূরণ হবে। আমরা প্রকৃত অর্থেই মানবসম্পদ তৈরি করতে পারব। সেই বিবেচনায় সাত কলেজ যদি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গে থাকে, তারা যদি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে, তাহলে ভালো। আর যদি পড়াশোনা না করে, এভাবেই চলতে থাকে তাহলে একসময় ঠিকই তাদের উপলব্ধি হবে আগেই ভালো ছিল। তাতে সংকট আরও বাড়বে। আমি আবারও বলছি, তারা একসময় ভাববে আমরা সত্যিকার অর্থেই মানবসম্পদে পরিণত হয়েছি।

অনেকেই বলছেন, এর মাধ্যমে নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক লাভ হচ্ছে! আমি তো দেখি না। কোথায়? এটা একেবারেই হাস্যকর বিষয়। বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যবহার করা হচ্ছে সাত কলেজের জন্য, সেই বিষয়ে অনেকেরই ধারণা নেই। মনে রাখতে হবে, আমাদের কোনো জনবল বাড়েনি। রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের অনেক জায়গা ব্যবহার করতে হয়। ফলে এখানে জনবলের বিষয়ও রয়েছে। কিন্তু বেতন কি বেড়েছে? উপরন্তু পরিশ্রম বেড়েছে। আমাদের জনবল বাড়েনি, তাহলে আয়ের উৎস কোত্থেকে! সাত কলেজের বিষয়ে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এর জন্য কি কোনো বাড়তি টাকা দেওয়া হচ্ছে? যারা এসব বলেন, তারা আসলে প্রকৃত চিত্র না জেনেই বলেন। কোনো ডিনের কি এক টাকা বেতন বেড়েছে? কীভাবে এটা আয়ের উৎস হয়, তা আমার মাথায় আসে না। যে টাকা সাত কলেজ থেকে আসে, সেটা তো তাদের খাতা মূল্যায়নেই চলে যায়। যারা খাতা দেখেন, তাদের একটা সম্মানী দিতে হয়। কারণ তারা অতিরিক্ত পরিশ্রম করছেন। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ীই হচ্ছে। এই টাকা তো সাত কলেজের শিক্ষকরাও পায়। তাহলে এই বাড়তি টাকা, আসবে কোত্থেকে? তারা অতীতেও পেয়েছে, এখনো পাচ্ছে। এটা নতুন কিছু না। সব টাকাই কিন্তু ছাত্রদের পেছনেই খরচ হচ্ছে। অনেকে টাকা আয়ের কথা বলছেন, আমি বলব এটা তারা ভালোমতো না জেনেই বলছেন। পরীক্ষাসংক্রান্ত অনেক বিষয় রয়েছে, সেখানে টাকা খরচ হচ্ছে না? এটা আসবে কোত্থেকে? খাত তো সেই একটাই। এরপর বাড়তি কোনো টাকা থাকে না। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিন্দুমাত্র আর্থিক লাভ নেই। আমরা যারা দায়িত্ব পালন করি, তাদের এক পয়সাও অতিরিক্ত দেওয়া হয় না। বরং আমাদের শ্রম, মেধা বহুলাংশে সাত কলেজের জন্য ব্যয় করতে হচ্ছে।

সাত কলেজ যে প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়েছিল, তা সঠিক ছিল না। একজন ছাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় সব থিওরি পরীক্ষা দিয়েছে, সেই ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা দিল অথবা ভাইবা দিল এরপর সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামসহ একটা সার্টিফিকেট পেল। আবার সাত কলেজে প্রথম বর্ষ বা দ্বিতীয় বর্ষে পড়েছে, এরপর এখানে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ার পর এখানের শিক্ষকরা প্রশ্ন করছেন, খাতা দেখছেন এখন তাদের তো সেভাবে এডাপ্ট করা হয়নি। উচিত ছিল নতুন ব্যাচ নিয়ে একই সঙ্গে রান করা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমরা এখনো সমস্যার মধ্যে আছি। এটা সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে। যে কোনো বিষয়ে সমস্যা দেখা দিতেই পারে, সেটা তো আলোচনা করে সমাধান করা যায়। এমন কোনো সমস্যা কি আছে, যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায় না? এ ক্ষেত্রে সবাইকে ছাড় দিয়ে একটা সমাধানের পথে আসতে হবে।

আমরা মনে করি, মানসম্মত শিক্ষার প্রশ্নে আমরা সঠিক অবস্থানেই রয়েছি। আবার বলছি, সাত কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। শিক্ষকের সংখ্যা কম। শ্রেণিকক্ষের অবস্থাও ভালো না। এ বিষয়ে অযথা কোনো ধরনের জটিলতা হোক, আমরা সেটা চাইছি না।

লেখক : ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053110122680664