সাত কলেজ : এ দ্বন্দ্বের শেষ কোথায়? - দৈনিকশিক্ষা

সাত কলেজ : এ দ্বন্দ্বের শেষ কোথায়?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয় রাজধানীর সাত কলেজ। অধিভুক্তির পর থেকে অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ঢাবির ছাত্ররা বারংবার আন্দোলন, প্রতিবাদ, সমালোচনা করে আসছে। সাত কলেজও বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছে ঢাবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে। সেসবের মধ্যে পরীক্ষা নেয়ার জন্য, পরীক্ষার ফল প্রকাশের জন্য সর্বশেষ গণহারে ফেল করার জন্য আন্দোলন আমরা দেখেছি। সিদ্দিকুরের চোখ হারানোটা এ ইতিহাসের একটা কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। রোববার (১ ডিসেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, এদিকে দ্বিমুখী আন্দোলনে ঢাবি প্রশাসন অসহায় ভূমিকাই পালন করেছে, কার্যত কোনো গ্রহণযোগ্য সমাধান এখনো দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাবির বায়ান্নতম সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে ঢাবি-সাত কলেজ বিতর্ক আবার দৃশ্যমান হয়েছে। আগের কয়েকটি আন্দোলন প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ায় ছাত্ররা পুনরায় আন্দোলনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। অধিকন্তু ঢাবির অধিভুক্তির ফলে সাত কলেজের ছাত্রদের যে ইয়ার লস হলো, ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হলো, তারা কি এ পর্যায়ে এসে তাদের অধিভুক্তি বাতিল করলে সহজে মেনে নেবেন? যা-ই হোক, কোনো আন্দোলনই সম্পূর্ণ বিনাশ হয় না, ফলে অধিকাংশ ঢাবি ছাত্রের মধ্যে চাপা ক্ষোভ কাজ করছে।

সেটার প্রকাশ ফেসবুকে লক্ষণীয়। তারা একদিকে প্রশাসনের সমালোচনা করছে অন্যদিকে সাত কলেজকে ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ, আক্রমণ করছে। সাত কলেজ যে নিষ্ক্রিয় তা নয়। তারাও যেনতেনভাবে ঢাবির ছাত্র শিক্ষকদের ছোটো করার সুযোগ হাতছাড়া করছে না। ঢাবির ছাত্রদের দাবি তারা দিনরাত পরিশ্রম করে, দীর্ঘ সাধনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। এমনকি অনেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন, ইংরেজির মতো বিষয় ছেড়ে ঢাবিতে অপেক্ষাকৃত নিচের দিকের বিষয়ে ভর্তি হয়েছেন শুধু ঢাবিকে ভালোবেসে। বিশ্বপর্যায়ে র্যাংকিং যা-ই হোক, ঢাবির প্রকৃত অবস্থা, বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আলাদা ভাবমূর্তি রয়েছে।

এটিকে বলা হয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। ফলে ঢাবিয়ানরা কোনোমতেই সম্মান আধিপত্য সাত কলেজের সঙ্গে শেয়ার করতে রাজি নয়। সেজন্য নিজেদের ভিসিকে সাত কলেজের ছাত্রদের প্রতি সদয় হতে দেখলে, সাত কলেজের প্রশ্নপত্রে ঢাবি নাম দেখলে কিংবা যখন শুনে ঢাবি সাত কলেজ সমাবর্তন একসঙ্গে একই দিনে হবে তখন গর্বিত ঢাবিয়ানরা তা মেনে নিতে পারে না। ফলে সংখ্যায় কম হলেও কেউ কেউ সমাবর্তন বর্জন করছেন, অনেকে বর্জনের ডাকও দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষের উচিত ঢাবির ছাত্রদের এ মনোভাব গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা। আমার কাছে যে বিষয়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সুদূরপ্রসারি মনে হয়েছে, সেটা হচ্ছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং সাত কলেজের ছাত্রদের মনস্তাত্ত্বিক লড়াই। কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। ঢাবির গ্রুপগুলোতে যেমন সাত কলেজ ব্যঙ্গ বিদ্রূপের স্বীকার অন্যদিকে সাত কলেজের গ্রুপগুলো ও সম্ভাব্য সব উপায়ে ঢাবিয়ানদের আক্রমণ করছে।

সেসব যৌক্তিক বা অযৌক্তিক তা মুখ্য বিষয় নয় বরং উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে এসব জিনিস তাদের মানসিক দিকের বহিঃপ্রকাশ। একদিকে সাত কলেজের অধিভুক্তিতে নিজেদের প্রাপ্য অধিকার সম্মান স্বাতন্ত্র্য রক্ষা হচ্ছে না বলে ঢাবিয়ানরা যেমন ক্ষুব্ধ অন্যদিকে সাত কলেজের ছাত্ররা ঢাবিয়ানদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ‘ইনফিরিওটি কমপ্লেক্সে’ যেমন ভুগছে তেমনি পরীক্ষা, ফলাফল নিয়ে তারা ঢাবির ওপর অসন্তুষ্ট। এভাবে সাত কলেজ সংকট ঢাবি প্রশাসন, সরকারি কিংবা কলেজ কর্তৃপক্ষকে এড়িয়ে দুই ধারার ছাত্রদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। চাকরি-বাকরিসহ বিভিন্ন জায়গায় হয়তো ঢাবিয়ান সাত কলেজের ছাত্রদের একত্রে কাজ করতে হবে, তখন এখনকার সময়ে সৃষ্ট পারস্পরিক ক্ষোভ, ঘৃণা বড়ো অশান্তির কারণ হতে পারে। এতে ক্ষেত্রবিশেষ দুই দলেরই সীমাহীন দুর্ভোগের স্বীকার হতে হবে। ফলে ছাত্রদের মধ্যে এই পারস্পরিক বিদ্বেষ কাম্য নয়। এর জন্য ছাত্ররা দায়ীও নয়, বরং যারা এ সংকট সৃষ্টি করেছে এর কার্যকর সমাধান বের করা তাদেরই দায়িত্ব। ফলে আশা থাকবে সরকার ঢাবি কর্তৃপক্ষ এ সংকটের এমন গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করবে; যা ঢাবি এবং সাত কলেজের ছাত্রদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এবং তাদের মাঝে সদ্ভাব, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশ গঠনে ছাত্র ঐক্যের বিকল্প নেই।

লেখক : আদনান চৌধুুুরী, শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035810470581055