নবম শ্রেণির স্কুলছাত্রী মরিয়ম খুন হয়েছে, নাকি পালিয়েছে এ প্রশ্নের উত্তর গত সাত দিনেও মেলেনি। ঘরে ঘুমিয়ে থাকা মরিয়মের হঠাৎ অন্তর্ধান এবং ঘরের মেঝেয় রক্তের দাগ নিয়ে গোটা এলাকা জুড়ে সন্দেহের ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী এবং মরিয়মের সহপাঠীদের মধ্যে এ ঘটনায় চাপা আতংক বিরাজ করছে।
পুলিশ বলেছে, বিভিন্ন সূত্র ধরে ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে তারা এখন মুখ খুলতে চাইছে না। মরিয়মের ঘর থেকে সংগ্রহ করা রক্ত, মাংসখণ্ড ও রক্তমাখা ছুরির ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পরই এ রহস্য বের হয়ে আসবে বলে তারা আশা করছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর (বুধবার) ভোরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মহিপুরে খানাবাদ কলেজ সংলগ্ন নিজ বসত ঘর থেকে উধাও হয় মহিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী মরিয়ম। মরিয়মের ঘরে রক্তের ছাপ, তার পায়ের নুপুর, রক্তমাখা ছুরি ও দুই টুকরা মাংস পড়ে থাকতে দেখে প্রথমে পুলিশ ও এলাকাবাসী ধারণা করে, মরিয়মকে হত্যা করে লাশ টুকরো করে ফেলা হয়েছে। লাশের টুকরো সরানোর সময়ে হয়তো দুই খণ্ড মাংস ঘরে পড়েছিল। কিন্তু ঘর ভর্তি মানুষের উপস্থিতিতে কীভাবে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে কোন ধরনের বাধা ছাড়া হত্যা শেষে শরীর টুকরো করা সম্ভব হয়েছে এ প্রশ্ন ঘটনার পরই পুলিশ ও স্থানীয়দের মধ্যে উঠলেও মরিয়মের নিখোঁজ রহস্য এখনও উদঘাটিত হয়নি। গত ১৮ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) রাতের খাবার খেয়ে মৃত বাবুল মল্লিকের স্ত্রী নুরজাহান, তার শিশুপুত্র হামিম ও মেয়ে মরিয়ম ঘরের নিচতলায় এক খাটে ঘুমাতে যায়।
ঘরের দোতলায় মরিয়মের বোন রেশমা ও ভগ্নিপতি মাঈনুল ইসলাম ঘুমিয়ে ছিল। রাত তিনটার দিকে রেশমা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বাইরে নেমে আবার ঘরে ওঠে। এ সময়ও বোন মরিয়মের সাথে কথা বলে ঘুমাতে যায় রেশমা। ভোর রাতে মরিয়মের মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম ভাঙে রেশমাসহ প্রতিবেশীদের। মরিয়মকে ঘুমে দেখতে না পেয়ে ও ঘরে রক্তের দাগ দেখে সে আতংকে চিৎকার করে।
ঘরের মেঝে রক্ত, পায়ের নূপুর, দুই টুকরো মাংস, রক্তমাখা দুটি ছুরি পরিত্যক্ত অবস্থায় পেলেও মরিয়মকে খুঁজে না পাওয়া যাওয়ায় গোটা এলাকা জুৃড়ে আতংক সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পটুয়াখালী জেলা পুলিশ, সিআইডি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে আলামত সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করেন। ঘটনার পরদিন ২০ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) মরিয়মের মা নুরজাহান বেগম বৃহস্পতিবার দুপুরে বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মহিপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।মহিপুর থানার ওসি (তদন্ত) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে মরিয়ম নিখোঁজ বা হত্যা রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে। প্রশাসনের বিভিন্ন বাহিনীও বিষযটি তদন্ত করছে। পুলিশ কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করছে যা তদন্তের স্বার্থে গোপন রাখা হচ্ছে। তবে ফরেনসিক রিপোর্ট পেলে পুরো বিষয়টি জানা যাবে।